প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা বাগানের মালিকদের বৈঠকের পর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দৈনিক ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে খুশি হয়ে আনন্দ-উল্লাস করছেন চা শ্রমিকরা। তারা এই মজুরি মেনে নিয়ে আগামীকাল (রোববার) থেকে কাজে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।তবে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের চা শ্রমিকরা আগামীকাল (রোববার) সারা দিন আনন্দ মিছিল করবেন আর পরদিন (সোমবার) তারা কাজে যোগ দেবেন।
শনিবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে গণভবনে দেশের বৃহৎ ১৩টি চা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস জানান, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দৈনিক ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দৈনিক ১৭০ টাকা সর্বনিম্ন মজুরির সঙ্গে বোনাস, বার্ষিক ছুটি ভাতা আনুপাতিক হারে বাড়বে। বেতনসহ উৎসব ছুটি আনুপাতিক হারে বাড়বে। অসুস্থতাজনিত ছুটির টাকা ও ভবিষ্যত তহবিলে নিয়োগকর্তার চাঁদা আনুপাতিক হারে বাড়বে। বার্ষিক উৎসব ভাতাও আনুপাতিক হারে বাড়বে।
সব মিলে ন্যূনতম মজুরি দৈনিক প্রায় সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ টাকা পড়বে বলে জানান আহমদ কায়কাউস।
মুখ্য সচিব জানান, চা শ্রমিকদের সঙ্গে বসবেন প্রধানমন্ত্রী। শিগগিরই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করবেন।প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল (রোববার) থেকেই সবাইকে কাজে যোগ দিতে বলেছেন।
নতুন মজুরি নির্ধারণ হওয়ার এই খবরে তাৎক্ষণিক আনন্দ মিছিল করেছেন চা শ্রমিকরা।
প্রধানমন্ত্রীর ১৭০ টাকা মজুরি ঘোষণায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের ২৪টি চা বাগানের শ্রমিক খুশি। আজ (শনিবার) সন্ধ্যায় বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর চা শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা ঘোষণার পর বাগানে বাগানে আনন্দের বন্যা দেখা দিয়েছে। রোববার তারা কাজে যোগদান না করে আনন্দ মিছিল করবেন এবং সোমবার থেকে তারা কাজে যোগ দেবেন।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই এবং শ্রমিকদের দাবি মেনে প্রধানমন্ত্রী আমাদের যা দিয়েছেন তাতেই আমরা খুশি।
চান্দপুর চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি সাধন সাওতাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের মা। আমরা আমাদের মায়ের জন্য দোয়া করি। আমরা আগামীকাল (রোববার) আনন্দ মিছিল করব এবং প্রধানমন্ত্রীর জন্য আশীর্বাদ করব। সোমবার থেকে উপজেলার ২৪টি চা বাগানের ২৫ হাজার শ্রমিক কাজে যোগদান করবেন।
এদিকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল চৌমোহনা চত্বরে হাজারো চা শ্রমিকদের উল্লাস করতে দেখা গেছে। চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেন এবং একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ান। দাবিকৃত মজুরির সুন্দর সমাধান হওয়ায় শ্রমিকরা এখন কাজে ফিরবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
গত ৯ আগস্ট থেকে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি এবং পরে ১৩ আগস্ট অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন চা শ্রমিকরা।শ্রমিকদের টানা ধর্মঘটে স্থবির চা শিল্প।প্রশাসন থেকে শুরু করে চা শ্রমিক সংগঠনের নেতারা কয়েক দফায় চেষ্টা করেও শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে পারেননি।শ্রমিকদের সাফ কথা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা ছাড়া তারা কাজে ফিরবেন না।এরপরই চা শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে তাদের মালিকদের সঙ্গে বসে আলোচনার ঘোষণা আসে প্রধানমন্ত্রীর। আজ বাগান মালিকদের সঙ্গে বসে নতুন মজুরি নির্ধারণ করে দেন সরকারপ্রধান।