স্কটল্যান্ডের ছোড়া ১৪১ রানের তাড়ায় শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি বাংলাদেশের। যে শঙ্কা ছিল দেশের ক্রিকেটপ্রেমী ও বোদ্ধাদের সেটাই ঘটল।
প্রস্তুতি ম্যাচে রান পাওয়া সৌম্য সরকারকে ওপেনিংয়ে নামিয়েও উদ্বোধনী জুটির ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারল না বাংলদেশ।
দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার সমান ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন। সেখান থেকে মুশফিকুর রহিমের আশা জাগানিয়া পারফরম্যান্সে ম্যাচে ফিরলেও শেষ হাসি ফুটল স্কটিশদের মুখেই।
ওমানের আল আমিরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হারল বাংলাদেশ।
টস জিতে বোলিং নেয় বাংলাদেশ দল। আর মেহদি হাসান ও সাকিব আল হাসানের স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে মাত্র ৮ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারালেরও নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ১৪০ রানের মাঝারি সংগ্রহ পায় স্কটল্যান্ড।
আর ব্যাটিং ব্যর্থতায় সেই সংগ্রহই ছুঁতে পারেনি টাইগাররা।
এমন ব্যর্থতার জন্য প্রথমত দায়ী দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার।
দলীয় ১৮ রানে দুই ওপেনারের উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। শুরুর ধকলে রানের চাকা স্লোথ হয়ে যায় টাইগারদের। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ টেস্টের আদলে খেলেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম।
বল ও রানের ব্যবধান দ্রুত বাড়ছিল। দরকার ছিল বাউন্ডারির। নবম ওভারের এক পর্যায়ে ওভার প্রতি বাংলাদেশের প্রয়োজন দাঁড়িয়েছিল ৯ করে। মাইকেল লিস্ককে পরপর দুই ওভার সুইপ ও স্লগ সুইপ করে ছক্কায় ওড়ান মুশফিক।
মুশফিকের দুই ছক্কায় স্বস্তি পায় বাংলাদেশ। স্বস্তি পান মুশফিকও। টানা ব্যর্থতার পর অবশেষে কাঙিক্ষত ফর্ম ফিরে পান।
মুশফিককে সঙ্গ দিয়ে গেলেও ব্যাটে-বলে টাইমিং হচ্ছিল না সাকিবের শুরু থেকেই। ওভারে ১৮ রান নিয়ে আবার রিকোয়্যার্ড রান রেট আটের আশেপাশে নামিয়ে আনেন মুশফিক ।
৯ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর তখন ২ উইকেটে ৫২। কিন্তু এর কিছু পরেই সাকিব মেজাজ হারান। ১২তম ওভারের প্রথম বলে গ্রেভসকে ছক্কা হাঁকাতে যান। কিন্তু বেশ ক্লান্তিমাখা শট বাউন্ডারি পেরুতে পারেনি। দড়ির ঠিক আগেই দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন ম্যাকলিওড।
২৭ বলে ২০ রান করে সাজঘরে ফেরেন সাকিব। এর এক ওভার পরেই বাংলাদেশ সমর্থকদের আবার হতাশায় ডোবান গ্রেভস।
এবার তার শিকার সদ্য ফর্মে ফেরা মুশফিক। আগের ওভারে আসে মাত্র ১ রান। সাকিবের মতো মেজাজ হারান মুশফিকও। রানের গতি বাড়াতে তাই ক্রিস গ্রেভসের পরের ওভারে প্রথম বলে স্কুপ করে বাউন্ডারির চেষ্টা করলেন মুশফিক। ৩৮ রানে উইকেটে থিথু হয়ে থাকা মুশফিক সরাসরি বোল্ড হয়ে গেলেন। দুই ছক্কা ও এক চারে ৩৬ বলে ৩৮ রান করেন মুশফিক।
সাকিব ও মুশফিককে দ্রুত হারিয়ে ফের চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে উদ্ধারে ব্যাট হাতে নামেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ হোসেন।
কিন্তু এই লড়াইয়ে বেশি দূর যেতে পারেননি অলরাউন্ডার আফিফ। ১৬ বলে যখন দরকার ৩৫ রান, উদ্বেগ দেখা দেয় আফিফের মাঝে।
ওয়াটের বলে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে ধরা পড়েন দাভেয়ের হাত। ১২ বলে ১৮ রানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। আফিফের চলে যাওয়ার পর নামেন উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান। ওমানের বিপক্ষে ও প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ খেলেছেন তিনি।
কিন্তু মূল পর্বে এসে সুপার ফ্লপ হলেন। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ২ রানে ফেরেন তিনি।
শেষ দিকে লড়াই চালিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদি হাসান। কিন্তু তারা কেবল পরাজয়ের ব্যবধানটাই কমাতে পেরেছেন।
নুরুল হাসান আউট হওয়ার পরের বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে উত্তেজনা ছড়ান মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু এর এক বল পরে হোয়েলের পঞ্চম ডেলিভারিতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ২২ বলে ২৩ রানে ফেরেন তিনি।
১৯ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৭ উইকেটে ১১৭। শেষ ৬ বলে প্রয়োজন পড়ে ২৪ রানের। অর্থাৎ প্রতিটি বলেই বাউন্ডারি হাঁকাতে হবে। মেহেদি সেই চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি।
২৪ এর বদলে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে ১৭ রান জমা করতে পারেন মেহেদি। ৭ উইকেটে ১৪০ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
ফলে ৬ রানে জিতে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করল স্কটল্যান্ড।
স্কটল্যান্ডের পক্ষে ৪ ওভার বল করে ২৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেছেন ব্রাড হোয়েল। ৩ ওভারে ১৯ রান দিয়ে দুটি পেয়েছেন ক্রিস গ্রেভস। একটি করে পেয়েছেন জশ দাভেয় ও মার্ক ওয়াট।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরু থেকেই সাবধানী ব্যাটিং করে স্কটিশরা। দলীয় ৭ রানে প্রথম উইকেট হারায় তারা। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন অধিনায়ক কাইল কোয়েতজার।
এরপর ম্যাথু ক্রসকে সঙ্গে নিয়ে ৩৮ রানের জুটি গড়েন ওপেনার জর্জ মানসি। এক উইকেটে ৪৫ রান করার পর স্কটল্যান্ড শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন অফ স্পিনার মেহেদি হাসান।
অষ্টম ওভারে বোলিংয়ে এসেই দ্বিতীয় বলে স্কটল্যান্ডের হয়ে তিনে ব্যাটিংয়ে নামা ম্যাথু ক্রসকে এলবিডব্লিউ করেন মেহেদি। ওই ওভারের পঞ্চম বলে জর্জ মানসেকে বোল্ড করেন তিনি। মেহেদির শিকারে পরিনত হওয়ার আগে ২৩ বলে দুই চার ও দুই ছক্কায় ২৯ রান করেন মানসে।
এরপর স্কটল্যান্ড শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারকে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে সীমানার কাছে তরুণ ক্রিকেটার আফিফ হোসেনের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিনত হন রিচি বিরিংটন। এই রিচির সেঞ্চুরিময় ইনিংসের কারণেই ২০১২ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ।
১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রিচিকে ফেরানোর পর চতুর্থ বলে সাকিব ফেরান মাইকেল লিক্সকে। রিচি বিরিংটনের মতো লিক্সও ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন।
ইনিংসের ১২তম ওভারে বোলিংয়ে এসে ফের উইকেট শিকার করেন মেহেদি। তার তৃতীয় শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন ক্যালাম ম্যাকলিওড। চার ওভারে মাত্র ১৯ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন মেহেদি।
১৮তম ওভারের প্রথম বলে মার্ক ওয়াটকে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন পেসার তাসকিন আহমেদ।
ইনিংসের শেষ ওভারে পরপর দুই বলে ক্রিস গ্রেভস ও জোশ ডেভিকে আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু ভাগ্য ফেবার করেনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
স্কটল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৪০/৯ (মানজি ২৯, কোয়েটজার ০, ক্রস ১১, বেরিংটন ২, ম্যাকলাউড ৫, লিস্ক ০, গ্রিভস ৪৫, ওয়াট ২২, ডেভি ৮, শরিফ ৮*, হুইল ১*; তাসকিন ৩-০-২৮-১, মুস্তাফিজ ৪-১-৩২-২, সাইফ ৪-০-৩০-১, সাকিব ৪-০-১৭-২, মেহেদি ৪-০-১৯-৩, আফিফ ১-০-১০-০)।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৪/৬ (লিটন ৫, সৌম্য ৫, সাকিব ২০, মুশফিক ৩৮, মাহমুদউল্লাহ ২৩, আফিফ ১৮, সোহান ২, মেহেদি ১৩*, সাইফ ৫*; হুইল ৪-০-২৪-৩, ডেভি ৪-০-২৪-১, শরিফ ৩-০-২৬-০, লিস্ক ২-০-২০-০, ওয়াট ৪-০-১৯-১, গ্রিভস ৩-০-১৯-২)।
ফল: স্কটল্যান্ড ৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ক্রিস গ্রেভস।