সিদ্ধিরগঞ্জে মাদকের স্বর্গরাজ্য খ্যাত এলাকা নাসিক ৬ নং ওয়ার্ড। এ কথাটির বাস্তবতার প্রমান মিলিছে ড্রেন পরিষ্কার করতে গিয়ে হাজারেরও বেশি ফেনসিডিলের খালি বোতলের খনির সন্ধান পেয়ে।
যা ইতিমধ্যে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা সুশীল সমাজের মানুষের মনে নানা প্রশ্ন তুলেছেন।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) দুপুরে মন্ডলপাড়া এলাকার একটি ড্রেন পরিষ্কার করতে গিয়ে ড্রেনের ভিতর থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ফেনসিডিলের এসব খালি বোতল পায়।
জানা যায়, নিয়মিত প্রতি দুই মাস পর পর পরিস্কার করা হয় ওই এলাকার ড্রেনগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ড্রেনটি পরিস্কারের উদ্দেশ্যে নামেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
ইতিপূর্বে স্বল্প পরিমাণ মাদকের বোতল পাওয়া গেলেও এবার ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। নেশাদ্রব্য এ ফেনসিডিলের বোতলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে হাজারেরও বেশি।
স্থানীয়দের অভিযোগ নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডের পুরো এলাকা মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে। এরপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর নেই ওই এলাকাটিতে।
শুধু ফেনসিডিলের বোতলই নন ড্রেনটি পরিষ্কার করাকালীন সময়ে এর আগে বিভিন্ন আইটেমের মদের বোতলও মিলেছে বহুবার। এরপরও এলাকাটিকে মাদকমুক্ত করার জন্যে প্রশাসনের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনা।
সন্ধ্যা হলেই এলাকায় মাদকদ্রব্যের বেচা-কেনা বাড়ে। দিন-রাত প্রকাশ্যে চলে বেচা-কেনা ও মাদক সেবন। এসওরোড কবরস্থানের মতো জায়গাও মাদক সেবনে বাদ যাচ্ছে না। অনেকে বাসায় দিন-রাত নেশা করার পরে ফেনসিডিলের খালি বোতল গুলো বস্তায় ভরে রাতে কোন এক সময় ফেলে দিয়ে যাচ্ছে ড্রেনে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম বলেন, একসাথে এতগুলো নেশাজাতীয় ফেনসিডিলের খালি বোতল ড্রেনের মধ্যে পাওয়া যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। এখন বোঝা যাচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জে মাদকের পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছে।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেই ৬নং ওয়ার্ডে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কিশোরগ্যাংদের আড্ডা ও রাতভর মাদক সেবন চলে। মদ, ইয়াবা, গাঁজার গন্ধে ভরে যায় আমার বাড়ির পেছনে কবরস্থানের চারপাশ। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাইক ও গাড়ীযোগে এসে অনেকেই এখানে মাদকের আসর মেলায়।
আমি নিজেও কয়েকদিন পুলিশ ফোন দিয়ে এনে এদের দাবরিয়ে দিয়েছি কিন্তু কোনো লাভ হয় না। মাদকের বিস্তার রোধে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে যুবসমাজকে ভয়ঙ্কর মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে পুলিশ প্রশাসনকে খুঁজে বের করতে হবে ফেনসিডিলের খালি বোতলের উৎস।
এ বিষয়ে নাসিক ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি জানান, আমি সর্বক্ষণ মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি। গত তিনদিন আগে সিমুলপাড়া বিহারী কলোনি এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিলাম আমার লোকজন নিয়ে। সেখানকার যারা মাদক সেবন বা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের বলে দেওয়া হয়েছে তা বন্ধ করার জন্যে।
মন্ডলপাড়ায় খালি বোতল পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মন্ডলপাড়ার ড্রেন থেকে যে বোতল গুলো পাওয়া গিয়েছে সেগুলো সে এলাকার বড় বড় তেল ব্যবসায়ীরা খেয়ে ফেলে রাখেন। ইতিমধ্যে আমি তথ্য সংগ্রহ করেছি কারা কারা মাদকের কারবারের সঙ্গে জড়িত। শীঘ্রই প্রশাসনের সহযোগীতায় মাদক নির্মূল করবো ইনশাআল্লাহ।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, মাদকের অভিযান আমরা অব্যাহত রেখেছি। ইতিপূর্বে ওই এলাকা থেকে অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আমরা চাই সেখানকার বাসিন্দারাও আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করুক। যাতে আমরা মাদককে নির্মূল করতে সফল হই। খুব শীঘ্রই ওই এলাকার কাউন্সিলরের সঙ্গে আমরা বসে ব্যবস্থা নিবো।