রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩২ অপরাহ্ন

নাসিক ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কান্ড

  • আপডেট সময় সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০২২, ৩.৪৭ এএম
  • ১৪৫ বার পড়া হয়েছে

সরকার প্রদত্ত কার্ডের বিপরীতে টিসিবি’র পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে নাসিকের ১১নম্বর ওয়ার্ডে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। টিসিবির ডিলারদের পরিবর্তে পণ্যগুলো নিজ কার্যালয়ে মজুদ রেখে বিক্রি করছেন কাউন্সিলর অহিদুল ইসলাম ছক্কু ও তার লোকজন।

গত মাসের শেষ সপ্তাহে পর্যায়ক্রমে ৪দিন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে কার্ডধারীদের পণ্য বিতরণ করা হয়। আজ রোববার থেকে দ্বিতীয় দফায় আবারো ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিতরণ শুরু হবে।

তবে প্রথম পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে টিসিবি’র পণ্য ডিলার নয় বরং কাউন্সিলরের লোকজন বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী ডিলাররা পণ্যগুলো কাউন্সিলরের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাউন্সিলর তার কার্যালয় থেকে সেই পণ্য নিজের পরিচিতজনদের কাছে সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করেন।
কার্ডধারী মানুষ ঠিক ভাবে টিসিবি’র পণ্য পাচ্ছেন কিনা তা দেখভালের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে দু’জন করে সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগ ছিল। কিন্তু তারাও সঠিক ভাবে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে পণ্য বিতরণ কার্যক্রম তদারকি করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রথম দফায় প্রতি কার্ডধারীদের ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি চিনি ও ২ কেজি মসুর ডাল দেওয়া হয়েছে। যার মূল্য রাখা হয়েছে ৪৬০ টাকা। আজ থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফায় আগের পণ্যের সঙ্গে ২ কেজি ছোলা যুক্ত হবে। ২ কেজি ছোলার দাম ১০০ টাকা যুক্ত হয়ে প্যাকেজের দাম দাঁড়াবে ৫৬০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অহিদুল ইসলাম ছক্কু। তার ওয়ার্ডে তার মাধ্যমে বিতরণ করা কার্ডের সংখ্যা ১ হাজার ১৪১টি। এছাড়া সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর, মেয়রের কোঠা এবং সিটিসি’র মাধ্যমে মোট ৫ হাজার ২৮২ পরিবারের মধ্যে টিবিবি’র ন্যায্য মূল্যের পণ্য বিতরণের জন্য কার্ড দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য বরাদ্দ করা এসব পণ্য টিসিবি’র ডিলার ট্রাকে করে বিক্রি করবেন।
নাসিকের ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অহিদুল ইসলাম ছক্কু তার কোঠার সব কার্ড বিতরণ করেননি বা করতে পারেননি। তার ওয়ার্ডে তার তত্বাবধানে মোট ৪দিন ওই ৫ হাজার ২৮২ পরিবারের মধ্যে টিসিবি’র পণ্য বিতরণের কথা। সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের সূচী অনুযায়ী গত ২২ ও ২৩ মার্চ এবং ২৬ ও ২৭ মার্চ ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বরফকল মাঠে কার্ডধারীদের মধ্যে টিসিবি’র পণ্য বিতরণের কথা থাকলেও স্থানীয় ওয়ার্ডবাসী মাত্র ১ দিন সন্ধ্যার পর টিসিবি’র ট্রাক দেখেছে ওই ওয়ার্ডে। এরপর থেকে কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকেই কার্ডধারীদের টিসিবি’র পণ্য নিতে দেখা গেছে। অর্থ্যাৎ কাউন্সিলর ছক্কু টিসিবি’র পণ্য ডিলারদের কাছ থেকে কিনে তার কার্যালয়ে মজুদ করে তারপর বিক্রি করেছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনী। সরকার থেকেই স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে যে স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয়ে কোন পণ্য মজুদ রাখা যাবে না। বিষয়টি আশপাশের অন্যান্য কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

টিসিবি’র পণ্য কার্ডধারীদের বিক্রির ক্ষেত্রে স্থানীয় কাউন্সিলররা ডিলারকে শুধু সহযোগিতা করবেন। পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে এর বাইরে আর কোন কাজ নেই কাউন্সিলরদের। আর কার্ড আগেই বিতরণ হয়ে গেছে। তবে ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে টিসিবি’র পণ্য মজুদের পাশাপাশি অসংখ্য কার্ড অবিতরণকৃত অবস্থায় দেখা গেছে।

এক্ষেত্রে যেসব কার্ড অবিতরণকৃত রয়েছে ওইসব কার্ডের বিপরীতে টিসিবি’র যে পণ্য এসেছে তা স্থানীয় কাউন্সিলর কার্ডের বাইরে তার পছন্দের লোকজনকে দিয়েছেন বলে কার্ড বঞ্চিত ওয়ার্ডবাসি অভিযোগ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, নিয়ম হলো টিসিবির পণ্য নিদ্দিষ্ট ডিলার ট্রাকে করে নিদ্দিষ্ট স্পটে বিক্রি করবেন। কিন্তু এই নিয়ম উপেক্ষা করা হচ্ছে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে। তারা অভিযোগ করেন, তাদের ওয়ার্ডে একদিন সন্ধ্যার পর বরফকল মাঠে টিসিবির ট্রাক এসেছিল। এরপর থেকে টিসিবির পণ্য স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে মজুদ অবস্থায় দেখতে পান। এ কারণে যারা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরাগ ভাজন তারা অনেকেই কার্ড থাকলেও টিসিবির পণ্য নিতে পারে নাই। আর এ সুযোগে তিনি মুখ চেনা অসংখ্য লোককে একবারের জায়গায় একাধিকবার পণ্য দিয়েছেন। সেটি সম্ভব হয়েছে কার্ড হওয়ার পরেও স্থানীয় ওয়ার্ডবাসী অনেকেই কার্ড নেননি।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সূচি অনুযায়ী ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ২২ ও ২৩ মার্চ টিসিবির পণ্য বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন, নীলিমা স্টোর। এটির মালিক শফিকুল ইসলাম। ২৬ ও ২৭ মার্চ ওই ওয়ার্ডে পণ্য বিতরণের দায়িত্বে ছিল পপুলার স্টোর। এটির মালিক ইয়াকুব হোসেন।

নীলিমা স্টোরের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, ২২ মার্চ সঠিক সময়ে গুদাম থেকে পণ্য না পাওয়ায় তিনি সঠিক সময়ে স্পটে যেতে পারেননি। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টায় তিনি স্পটে যান। বিতরণের পর প্রায় ২শ’ কার্ডের পণ্য থেকে যাওয়ায় তিনি পণ্যগুলো স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে সরকার নির্ধারিত দামের বিপরীতে দিয়ে আসেন। যাতে কার্ডধারীরা পরবর্তীকে সরকার নির্ধারিত দামেই কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে নিতে পারেন।

২৬ ও ২৭ মার্চ ওই ওয়ার্ডে পণ্য বিক্রির দায়িত্বে ছিলেন পপুলার স্টোর। এর মালিক ইয়াকুব হোসেন বলেন, তিনি ২ দিন নয় বরং ১দিন ওই ওয়ার্ডে পণ্য সরবরাহ করেছেন। তাহলে আরেকদিন কে পণ্য সরবরাহ করলো এর কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বেশ ক’জন কাউন্সিলর বলেন, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বলে এভাবে টিসিবির পণ্য নিতে অনেকই অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। আবার অনেকে ভেবেছিলেন, কার্ডের বিপরীতে বিনামূল্যে পণ্য পাবেন। এজন্য কার্ডের বিপরীতে টিসিবির পণ্য নিতে আসেন না অনেকেই। একারণে ডিলাররা তাদেরকে অবিক্রিত পণ্য সরকারি মূল্যে রেখে পরে বিতরণের কথা বললেও তারা রাজী হননি। কারণ সরকারি ভাবে নির্দেশ রয়েছে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে কোন পণ্য মজুদ রাখা যাবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কাউন্সিলর বলেন, প্রথম দু’দিন তার ওয়ার্ডে ১ হাজার ১৫০টি কার্ডের বিপরীতে পণ্য এসেছিল। তৃতীয় দিন ১ হাজার ৫০০ জনের পণ্য এলেও বিক্রি হয় মাত্র ৮৫০টি কার্ডের পন্য। বাকি গুলো ডিলার তার কাছে বিক্রি করতে চাইলেও তিনি তাতে রাজী হননি। চতুর্থ দিন ১ হাজার কার্ডের বিপরীতে পণ্য এলেও বিক্রি হয়েছে মাত্র দুই থেকে তিনশ কার্ডের পণ্য। ওই কাউন্সিলর বলেন, এক্ষেত্রে অবিক্রিত পণ্য কাউন্সিলর কিনে রাখলে সেখানে দুর্নীতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। কারণ কার্ডের বিপরীতে টাকা দিয়ে পণ্য নিতে অনেকেই আগ্রহী নয়। কারণ কার্ডগুলো দেওয়া হয় অস্বচ্ছল পরিবারগুলোকে। আবার ৩টি পণ্য দিয়ে প্যাকেজ তৈরী করে দেওয়ায়ও সমস্য তৈরী হয়। সবাই সব পণ্য নিতে চায় না।

১১ নম্বর ওয়ার্ডে টিসিবির পণ্য বিতরণ দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স পরিদর্শক শাহাদাৎ হোসেন ও সহকারি কর আদায়কারী মেহেদী হাসান। তারা দু’জনই দাবি করেন, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথম দিন পণ্য বিতরণে বিলম্ব হয়। ডিলার সকালের পরিবর্তে সন্ধ্যায় পণ্য নিয়ে আসেন। একারণে মানুষের চাপ ছিল অনেক। পণ্য বিতরণের পর তারা কিছু সময় সেখানে দেখভাল করেছেন। তাদের কাছে কোন অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়নি।

১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অহিদুল ইসলাম ছক্কুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৪৬০ টাকা পণ্য নিতে এসে অনেকের ৮০০ টাকার রোজ নষ্ট হয়েছে। এ ওয়ার্ডের মানুষ শ্রমজীবী। আবার টিসিবির ট্রাক সঠিক সময়ে না আসায় মানুষ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হয়ে চলে গেছেন। তাই ওয়ার্ডবাসীর সুবিধার কথা চিন্তা করে তিনি ডিলারের কাছ থেকে পণ্য কিনে তার কার্যালয়ে রেখে দেন। ওয়ার্ডবাসী সুবিধামতো সময়ে এসে তার কার্যালয় থেকে পণ্য নিয়ে যান। এটি যদি অনিময় হয়, তাহলে ওয়ার্ডবাসীর সুবিধার্থে তিনি এ অনিয়ম করেছেন বলে স্বীকার করেন। তার ওয়ার্ডের সব কার্ড বিতরণ হয়নি বা অনেকেই কার্ড নেননি বলেও স্বীকার করেন তিনি। পণ্য এবং কার্ড ফোন করে তিনি সংশ্লিষ্টদের পৌঁছে দিচ্ছেন বলে দাবি করেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জেলার উপ পরিচালক সেলিমুজ্জামান বলেন, এটা তো নিয়ম নয়। টিসিবির পণ্য একমাত্র ডিলারের মাধ্যমেই বিতরণ বা বিক্রি করতে হবে।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, বর্তমান নিয়মে কোন অবস্থাতেই টিসিবির পণ্য কার্ডধারীদের বাইরে বিক্রি করা যাবে না। ডিলার অবিক্রিত মাল স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে রাখতে পারবেন। তবে দেখতে হবে যেন কোন ভাবেই কার্ডের বাইরে কারও কাছে পণ্য বিক্রি করা না হয় বা কোন অনিয়ম না হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort