রুদ্রবার্তা২৪.নেট: রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হতাহতদের আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহŸান জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) দুপুরে অগ্নিকান্ড সংঘটিত ভবনে পরিদর্শনে এসে এ দাবি জানান নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজায় যারা মারা গেছে তাদেরকে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী না। সেই ক্ষতিপূরণ কমিটিতে আমরাও ছিলাম। এই হাসেম ফুড কোম্পানিতে নিহত ও আহতদেরকে সেইভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক। এই উদ্যোগ নেয়ার দায়িত্ব সরকারের। আমরা সবার সহযোগিতা করতে রাজি আছি। কিন্তু উদ্যোগ তো সরকারকে নিতে হবে। কারণ মূল দায়িত্ব অবহেলার সরকারের উপরও বর্তায়। নাগরিকের জীবন রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের । যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় তার জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা কিংবা জবাবদিহিতা থাকে না। যেহেতু তারা ক্ষমতায় অতএব এই দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা তাদেরকে স্বীকার করতে হবে। মৃত ও আহতদের পাশে দাড়াতে হবে।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘অবহেলা, ভুল, ব্যবস্থাপনার ত্রæটির কারণে মানুষগুলোর অকালে জীবন দিতে হয়েছে। আমরা তাদের আত্মার মাহফেরাত কামনা করি। যারা আহত হয়েছে তাদের দ্রæত আরোগ্য কামনা করছি। সারাবিশ্ব আজ জানে এই কারখানার আগুনের কথা। এই কারখানায় তারা যে প্রোডাক্ট উৎপাদন করতেন সেগুলো বেশ সুনাম ছিল দেশে এবং বিদেশে। কিন্তু সেই সুনাম পণ্যের যতটা ছিল সর্বক্ষেত্রে সেটা মোটেও ছিল না। এখনও যদি আপনারা চারদিকে দেখেন তাহলে দেখবেন একটি ভালো কারখানার পরিবেশ যেমন থাকার কথা তার কোনোটা এখানে দেখা যাচ্ছে না। এখনও আমরা জানালা দিয়ে ধোয়া বের হতে দেখলাম। এখনও যে আগুন নিভে গেছে এই কথা বলা মুশকিল।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, ‘আমরা শুনেছি নিচের তলায় আগুন লেগেছে এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় সব লোকজনকে নিয়ে একজন কেউ হয়তো সরল বিশ্বাসে একত্রে করে সেখানে গেট বন্ধ করে বসেছিলেন। তারা মনে করেছিলেন সেখানে তারা নিরাপদ। কিন্তু সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লাশ, পুড়ে যাওয়া লাশ, কয়লা হয়ে যাওয়া লাশ সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে। তার চেয়ে অত্যন্ত মর্মান্তিক বিষয় হচ্ছে এখানে প্রচুর শিশু শ্রমিক কাজ করতো। যেটা দেশের প্রচলিত আইনে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ১০ বছরের শিশু পর্যন্ত এখানে কাজ করেছে। যদিও আমাদের সরকার দাবি করেন আমরা অনেক উন্নত হয়ে গেছি। কিন্তু এতই যদি আমাদের উন্নতি হবে তাহলে এত শিশু করকারখানায় কাজ করছে কেন? আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে বাংলাদেশে এখনও প্রায় ৪০ লাখ শিশু শ্রমিক কাজ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেউ দেখে না। সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের আইন প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা সেটা দেখার কথা। তাদের তরফ থেকে বলা হয়েছে, তারা গত জুন মাসের ৩০ তারিখে নাকি মামলা করেছে। এবং অভিযোগ একটাই সেটা হচ্ছে, এখানে শিশু শ্রমিক কাজ করে। কিন্তু এখানের পরিবেশ যে কর্মের উপযোগী না। এখানে এত বড় ফ্লোর সেখানে মাত্র দু’টি সিড়ি, তাও শোনা যায় যে একটি সিড়ি ব্যবহার হয় না। এইগুলো দেখার দায়িত্ব তাদের ছিল। আমাদের দেশের আইনে ত্রæটি আছে কোনো সন্দেহ নাই। যাই-বা আছে সেই আইন বাস্তবায়নে সরকারের অনীহার জন্য আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা হওয়ার কথা না। এত শিশু শ্রমিকও এখানে কাজ করার কথা না। মালিকের অবহেলার জন্য আমরা নিন্দা জানাই। মালিক না হয় তার মুনাফা বাড়ানোর জন্য অবহেলা করেছে কিন্তু সরকার তো রাষ্ট্রের সব মানুষের কল্যাণ দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত। তারা কী করেছে? তাদের প্রতিষ্ঠানগুলি কী করেছে? এত প্রতিষ্ঠান আছে এইগুলো দেখার জন্য, এত জায়গায় রিপোর্ট দিতে হয়, এত ট্যাক্স দিতে হয় সেই সব জায়গা থেকে দেখার দায়িত্ব আছে। কিন্তু তারা কেউ আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করে নাই। যথাসময়ে দায়িত্ব পালন করলে আজকে ৫২ জন মানুষ অকালে প্রাণ দিতে হতো না।’
তিনি বলেন, ‘মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে কিনা আমরা জানি না। কারণ এখানে যারা কাজ করেছে তাদের সবার তো নিয়োগপত্রই ছিল না। যেহেতু তাদের উপযুক্ত বয়সই হয় নাই অতএব তাদের কোন অফিসিয়ালি নিয়োগও দেওয়া হয়নি। কাজেই আমরা জানি না কত মানুষ এখানে নিহত হয়েছে। যারাই জীবন দিয়েছে আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাদের পরিবার পরিজনদেরকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি আমরা জানাই।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক (সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক) অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম প্রমুখ।