নিজস্ব প্রতিনিধি: নবীগঞ্জ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সায়মা খানমের বিরুদ্ধে স্বেচ্চাচারিতা, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তার পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
এর আগে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বিভিন্ন অভিভাবকদের স্কুল গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কারণ জিজ্ঞাস করলে সাংবাদিকদের তারা জানান, আমরা খাবার নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের ভিতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। তাই হতাশ হয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আরেক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে এই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। বেশ কয়েকদিন যাবতই তাকে বাসায় চাপ দিচ্ছে বিদ্যালয়ে একশত টাকা জমা দেওয়ার জন্য নাকি প্রধান শিক্ষক প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বলে দিয়েছে। এমনকি টাকা ছাড়া শ্রেণিতে প্রবেশ করতেও নিষেধ করে দিয়েছেন। কিন্তু কিসের টাকা সেই বিষয়ে শিক্ষার্থীরা কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তিনি আরও জানান, মাঝে মাঝেই তাদের কাছে একশত দুইশত করে টাকা চান। এমন অবস্থার কারণে অনেক পরিবারই সেই টাকা পরিশোধ করতে না পারার ভয়ে তাদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারেন না। পরে টাকা যোগার করে তারপর স্কুলে পাঠাতে হয়। টাকা ছাড়া স্কুলে প্রবেশ করলে বিভিন্ন কথা শুনতে হয় বলে ও জানান তিনি।
অন্যদিকে গতকাল বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কিছু শিক্ষার্থী গেটের সামনে অবস্থান করছে। কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ তাদেরকে বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে আসতে বলেছেন। কিন্তু তারা স্কুলের গেটের সামনে গিয়ে পরিচয় দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাদেরকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। পরে নাসিক ২৩ ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কাওসার আশা আসলে গেট খুলে দেওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য, সাংবাদিকসহ অভিভাবকগণ ভিতরে প্রবেশ করার সুযোগ পান। এ সময় অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন। একই সময় প্রধান শিক্ষিকার পক্ষে এবং বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে হৈ-হুল্লোর শুরু হয়। অনেক অভিভাবকই অভিযোগ করেন তাদের সন্তানদের কাছ থেকে অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে কথা না বলার জন্য চাপ দেওয়া হয় এবং পক্ষে কথা না বললে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়।
স্থানীয় অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সায়মা খানমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতিসহ প্রায় দেড় কোটি টাকার আত্নসাথের অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীও সাধারণ শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ করার বিষয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ এসেছে। কিন্তু সে সময় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের তৎকালীন এমপি একেএম সেলিম ওসমান এর দোহাই দিয়ে তিনি প্রতিবাদকারীদের দমন করেন। কিছুদিন আগেও তার সাথে জি-আজ্ঞা বা তাবেদারী করতে না পারায় একজন অন্ত:সত্ত্বা শিক্ষিকাকে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করেন তিনি। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এমপি সেলিম ওসমানের হস্তক্ষেপে বিষয়টি ধামাচাপা দেন তিনি।
অন্যদিকে সায়মা খানমের উপর তৎকালীন স্থানীয় এমপিসহ পারিবারিকভাবে প্রভাবশালীদের সাথে হাত থাকায় বিভিন্ন অভিযোগ থাকার পরও তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলার সাহস দেখাতে পারেননি কেউ।