ঠিক যেভাবে জয়ের ক্যানভাসটা সাজানোর দরকার ছিল ঠিক সেভাবেই তুলির আঁচড় ছড়ালেন তামিম ইকবাল। জ্বলে উঠলেন সঠিক সময়ে। খেললেন দৃষ্টিনন্দন এক ইনিংস। যে ইনিংস দিয়ে ফরচুন বরিশালকে তুলে নিলেন বিপিএলের দশম আসরের প্লে’অফে। যেখানে এলিমিনেটর ম্যাচে তাদের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
শুক্রবার মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে চতুর্থ দল হিসেবে প্লে’অফে উঠেছে বরিশাল। এর আগে রংপুর রাইডার্স, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স প্লে’অফ নিশ্চিত করে।
২ দিনের প্রত্যাশিত বিরতির পর বিপিএল আবার মিরপুর শের-ই-বাংলায় ফিরলেও উইকেটের আচরণ একটুও পরিবর্তন হয়নি। মাঠের আউট ফিল্ডে চাকচিক্য আনার চেষ্টা করেছেন কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা। কিন্তু উইকেট যেন চিরচেনা ২২ গজ। মন্থর, অসমান বাউন্স। বল ব্যাটে যাচ্ছে ধীর গতিতে। টাইমিং মেলাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হলো ব্যাটসম্যানদের। সঙ্গে আবহাওয়া গুমট থাকায় কন্ডিশনও কিছুটা খাপছাড়া।
এমন উইকেট ও কন্ডিশনে টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়া আদর্শ। তামিম টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে যেন ম্যাচটাই জিতে নিলেন। কুমিল্লাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে মাত্র ১৪০ রানে আটকে রাখে বরিশাল। জবাবে তামিমের অধিনায়কোচিত ৬৬ রানের ইনিংসে ম্যাচটা জিতে প্লে’অফ নিশ্চিত করেছে বরিশাল।
তামিমের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। ১৩৭.৫০ স্ট্রাইক রেটে ইনিংসটি সাজাতে খেলেছেন ৪৮ বল। ম্যাচটা জিতে মাঠ ছাড়তে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার। কিন্তু যেখানে পৌঁছে দিয়েছিলেন, সেখান থেকে হারের শঙ্কা থাকে না।
তাতে আড়াল হয়েছে প্রথম ইনিংসে জাকের আলীর কীর্তি। ফরচুন বরিশালের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন বেসামাল। ইনিংসের শেষ দিকে জাকের আলী ছিলেন বলে কুমিল্লার রান বেড়েছে। নয়তো যে গতিতে রান উঠছিল তাতে বলার মতো কিছুই হতো না। জাকের ১৬ বলে ৩৮ রান করেন ২ চার ও ৪ ছক্কায়। শেষ ৩ ওভারে কুমিল্লা ৪২ রান পায়। যেখানে জাকের একাই তোলেন ৩৭ রান।
ওপেনিংয়ে নারিন ও লিটনকে পাঠিয়েছিল কুমিল্লা। তাদের জুটি খুব একটা জমেনি। দলীয় ২৪ রানে নারিন ড্রেসিংরুমে ফেরেন ওবেদ ম্যাকয়ের বলে সৌম্যর হাতে ক্যাচ দিয়ে। ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে ১৮ বলে ১৬ রান করেন ২ চার ও ১ ছক্কায়। সঙ্গী হারানোর পর লিটনও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। একাদশে ফেরা তাইজুল ইসলামের ভেতরে ঢোকানো বলে বোল্ড হন ১২ রানে।
বাঁহাতি স্পিনার নিজের দ্বিতীয় ওভারে আরেকটি উইকেট পান মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে ফিরিয়ে। ৬ বলে ১ রান করে সীমানায় ক্যাচ দেন মাহিদুল। মঈন আলী ক্রিজে এসে ছক্কা হাঁকিয়ে রানের খাতা খোলেন। কিন্তু উইকেট ব্যাটিংবান্ধব না হওয়ায় মঈন আলীও বেশি কিছু করতে পারেননি। ২২ বল খেলে রান করেন মাত্র ২৩।
আগের ম্যাচে আন্দ্রে রাসেল মাত্র ১২ বলে ৪৩ রান করে কুমিল্লাকে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। আজ ১১ বল খেলে ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি। তাইজুলকে উড়াতে গিয়ে বোল্ড হন ১ চার ও ১ ছক্কা হাঁকিয়ে। ৯৬ রানে ৬ উইকেট হারানো কুমিল্লা তখন রান খরায় ভুগছিল।
সেখান থেকে জাকের আলী ছড়ান মুগ্ধতা। বাঁহাতি পেসার আকিফকে ছক্কা উড়ানোর পর সাইফ উদ্দিন ও ওদেব ম্যাকয়ের বল সীমানার বাইরে আছড়ে ফেলেন চোখের পলকে। শেষ ওভারে দুই ছক্কা ও এক চারে ১৬ রান তুলে নেন যা ছিল ইনিংসের সর্বোচ্চ।
জাকের শো’এর আগে বরিশালের বোলিং ছিল দুর্দান্ত। ৩ ওভারে ২০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তাইজুল তাদের সেরা। এছাড়া ১৬ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন সাইফ উদ্দিন।
লক্ষ্য তাড়ায় বরিশালের শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথমবার সুযোগ পাওয়া এনামুল হককে উড়াতে গিয়ে বল মিস করে স্ট্যাম্পড হন আহমেদ শেহজাদ। এ ধরণের উইকেটে টিকে থাকতে হলে শুরুতে কিছুটা সময় দিতে হয়। ধীরে ধীরে বাড়াতে হয় রানের গতি।
চিরচেনা এই উইকেট সম্পর্কে সবটা জানেন বলে তামিম সময় নিয়েছিলেন। জুটি গড়েছিলেন কাইল মায়ার্সকে নিয়ে। দুই বাঁহাতির জুটিতে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে বরিশাল স্কোরবোর্ডে জমা করে ৫৭ বলে ৬৪ রান। এরপর বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারির সঙ্গে এক-দুই নিয়ে ইনিংস বড় করেন তারা। মনে হচ্ছিল এই জুটিই যথেষ্ট কুমিল্লাকে হারানোর।
কিন্তু কুমিল্লাও সহজে হার মানেনি। দলের তরুণ পেসার মুশফিক হাসান বোলিংয়ে এসে ভাঙেন এই জুটি। মায়ার্সকে শর্ট বল করে ফেরান ২৫ রানে। এরপর তৃতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে ৩৯ রানের জুটি গড়েছিলেন মুশফিক। এই জুটিও ভাঙেন ডানহাতি পেসার। তার শর্ট বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মুশফিক, ১৭ রানে।
১৮তম ওভারে মুশফিককে ফিরিয়ে মাত্র ১ রান দিলে বরিশাল কিছুটা চাপে পড়ে। শেষ ৩ ওভারে তাদের প্রয়োজন তখন ১৮ রান। রাসেলের করা পরের ওভারের চতুর্থ বলে তামিম দারুণ এক ছক্কা হাঁকালেন চাপ কিছুটা কমে যায়। কিন্তু পরের বল তামিম আবার উড়াতে গেলে ক্যাচ দেন ওয়াইড লং অনে। তামিমের ইনিংসটি সেখানে কাটা পড়লেও ক্রিজে এসে রাসেলকে ফাইন লেগ দিয়ে বিশাল ছক্কা মারেন সৌম্য।
তাতে শেষ ১২ বলে মাত্র ১৩ রানের লক্ষ্য পায় বরিশাল। মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্যর ব্যাটে অনায়েসে তারা জয় পেয়ে যায়।
১২ ম্যাচে সাত জয়ে বরিশালের পয়েন্ট ১৪। সমান ১৪ পয়েন্ট চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সেরও। ২৬ ফেব্রুয়ারি এই মাঠেই এলিমিনেটরে দুই দল মুখোমুখি হবে।