সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ছয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দুজন ও রংপুরে একজন করে নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী, একজন পথচারী এবং বাকি দুজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মহানগরের মুরাদপুর এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত প্রায় শতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে বিজিবির টহল শুরু হয়েছে।
বিজিবি চট্টগ্রাম-৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহেদ মিনহাজ ছিদ্দিকী জানান, চট্টগ্রামের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিজিবির একাধিক টহল টিম রাস্তায় নেমেছে। তারা নগরীর মুরাদপুর, অক্সিজেন ও পাহাড়তলি এলাকায় টহল দিচ্ছে।
এদিকে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে মুরাদপুর এলাকায় তিনজন হয়েছেন। নিহতরা হলেন- ফারুক, ওয়াসিম আকরাম ও ফিরোজ। এদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ ছিলেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন তিনজন নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, সংঘর্ষে কমপক্ষে শতাধিক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অবস্থান করে দেখা গেছে, একের পর এক আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। এদের কেউ ছাত্র, কেউ সাধারণ পথচারী। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা।
পুরো চট্টগ্রাম নগরে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। নগরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ঢাকা: রাজধানীতে ঢাকা কলেজের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত হয়ে একজন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ঢাকা সিটি কলেজের সামনে থেকে একজনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে ও সন্ধ্যায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিটি কলেজের সামনে একজন পড়ে ছিলেন। স্থানীয় কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে পপুলার মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নেয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। তার কানের নিচে ও মুখের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়াও, ঢাকা সিটি কলেজের সামনে থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে যাকে আনা হয়েছে, কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
রংপুর: মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাইদ নিহত হন। আবু সাইদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেরোবির ইংরেজি বিভাগের প্রধান আসিফ আল মতিন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ দুপুর ২টায় রংপুর খামার মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং ফটকের সামনে আসেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাইদ নিহত হন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এসেছেন। দুপুরের পর থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব ও চানখারপুল এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ চার জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।