প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজের দেশের মাটিতে যদি জোর থাকত, সে রকম সমর্থন থাকত, তাহলে বিএনপিকে বিদেশিদের কাছে দৌড়াতে হতো না। ওই যে বলে- খুঁটায় যদি জোর থাকত অর্থাৎ নিজের শিকড়ের জোরটা যদি থাকত তাহলে তো বিদেশে ধরনা দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। জনসমর্থন থাকলে, জনগণের ওপর আস্থা থাকলে, বিশ্বাস থাকলে বিএনপি জনগণের কাছেই যেত। ওদের (বিএনপির) সেই শক্তি নেই।
‘তারা কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে? আগুন দিয়ে পোড়ানো, মানুষ খুন করা, বোমা মারা, গ্রেনেড মারা, সব জায়গায় তো আছে। তারা যদি সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন কী জবাব দেবে বিএনপি। এজন্যই তারা বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে বেড়ায়। দেশের মানুষের কাছে যায় না।’
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে বিএনপির সৃষ্টি। তারপর নির্বাচনের যে প্রহসন, সেটা তো তাদেরই সৃষ্টি। বরং আমরা নির্বাচনটাকে এখন জনগণের কাছে নিয়ে গেছি। ছবিসহ ভোটার তালিকা হচ্ছে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দেওয়া হচ্ছে। মানুষ যেন তার ভোটটা দিতে পারে, সে পরিবেশ বা ভোট সম্পর্কে মানুষের যে সচেতনতা, এটা কিন্তু আওয়ামী লীগই সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা তো বাধা দিচ্ছি না। আমরা তো বলছি- আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন। যত আন্দোলন করবে তত ভালো। কিন্তু করেও না, তো কী করব?
রাজনৈতিক দলগুলোকে এবারও চায়ের আমন্ত্রণ জানাবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সময় তো নিমন্ত্রণ-আমন্ত্রণ একটু কমই হচ্ছে। প্রায়ই করোনা দেখা দিচ্ছে। সাংবাদিকদের এর মধ্যে আসতেই দিত না। এবার আমি একটু জোর করেই বলেছি, কতদিন এভাবে আর দূরে থাকা যায়। সেজন্য করোনার কারণে এবার একটু চিন্তা করতে হবে। অনেকে আসবেও না, আসতেও পারবে না। এটা একটা সমস্যা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতবার যে সবার সঙ্গে বৈঠক করলাম, আলোচনা করলাম, নির্বাচনে এসে দেখা গেল, তিনশ সিটে সাতশ নমিনেশন দিয়ে যখন নিজেরা হেরে গেল তখন সব দোষ কার, আমাদের। তবে আমরা তো চাই-ই সব দল আসুক, ইলেকশন করুক; কার কোথায় কতটুকু যোগ্যতা আছে। আওয়ামী লীগ কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় এসেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ডিসেম্বর মাসে আমরা দলের সম্মেলন করব। আর পরবর্তী বছরই নির্বাচন। নির্বাচনের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। আর দলের প্রত্যেকটা বিষয়ে গঠনতন্ত্র মেনে আমরা সিদ্ধান্ত নিই।
এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আওয়ামী লীগের একজন কাউন্সিলরও যদি বলে আমাকে চায় না, আমি কোনোদিনও থাকব না। যেদিন আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট করেছিল তখন থেকেই এই সত্যটা মেনে যাচ্ছি। এটা ঠিক দীর্ঘদিন হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক। নেতৃত্ব কাউন্সিলররা নির্বাচিত করেন। তাদের সিদ্ধান্তটাই চূড়ান্ত। আর আমার তো আসলে সময় হয়ে গেছে। এখন বিদায় নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘ সফরে বিশ্বনেতাদের মধ্যে যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, সবাই অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন।তিনি বলেন, প্রত্যেকের মাঝে কিন্তু এই ধরনের একটা আশঙ্কা। সবাই বলেছে, ২০২৩ সাল বিশ্বের জন্য অত্যন্ত দুর্যোগময় সময় এগিয়ে আসছে। এমনকি বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষও দেখা দেবে, এমন আশঙ্কা সবার মনে আছে। এ নিয়ে সবাই চিন্তিত ও আতঙ্কিত।
তিনি বলেন, শুধু এটুকু বলব, আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে লং টার্ম, মিডিয়াম টার্ম বা ইমিডিয়েট, যে কোনো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের কোনো রিস্ক নেই। আমি কথা দিতে পারি। এটুকু ব্যবস্থা আমরা নিতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির যে টার্গেট আমরা নির্দিষ্ট করেছি, সেটা অর্জন করতে সক্ষম হব। এ ব্যাপারে সবাইকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই। এরপর যদি মহাদুর্যোগ দেখা দেয়, এমনিতেই সারা বিশ্ব তো কষ্ট পাচ্ছে। তাতে বেশিকিছু বলার নেই। এটুকু আশ্বাস দিতে পারি- আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী আছে।
এ সময় দুচিন্তা না করে সর্বোচ্চ চেষ্টা ও সাশ্রয়ী হওয়ার তাগিদ দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, দুশ্চিন্তা তো মানসিক ব্যাপার। কার কী মানসিকতা তার ওপরও নির্ভর করে। তবে সবাই মিলে যদি এই চিন্তা করে যে, না- দেশটা আমাদের।
রিজার্ভের বর্তমান অবস্থা নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের রিজার্ভ এখনো যথেষ্ট। যে রিজার্ভ আছে, যদি কোনো সংকট দেখা দেয়, ৫ মাসের খাদ্য কেনার মতো রিজার্ভ আমাদের আছে। বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধেও ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব প্রকল্প একান্তভাবে আমাদের জরুরি সে প্রকল্প এবং অধিক টাকা দিয়ে দ্রুত শেষ করে সেখান থেকে রিটার্ন পাওয়া যায়, সেই ধরনের প্রকল্প দ্রুত শেষ করে দিচ্ছি।
গণমাধ্যমের সমালোচনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কিছু কিছু পত্রিকা আছে, তাদের বোধহয় সারা জীবনই বাংলাদেশের খারাপ কথাটা বলতে পারলে তারা স্বস্তি পায়। এটা যুগ যুগ ধরে দেখছি। এরকম ধরনের মানুষ থাকে। সবসময় নেতিবাচক চিন্তা অথবা বলতে হবে যে পরশ্রীকাতরতায় ভোগে। বাংলাদেশ যত ভালো করুক, তাদের চোখে ভালো হওয়া যাবে না। তবে সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।
সরকার খাদ্যের ওপর জোর দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়ে বসেছিলাম। আমাদের কী কী করণীয়? একটা আলাদা বাজেটও রেখেছি। এই বাজেটটি হবে শুধু খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া আছে।
প্রধানমন্ত্রী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে তার ১৮ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষ ৪ অক্টোবর দেশে ফেরেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে তিনি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টক্রিয়ায় যোগ দেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের সময় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেন। এই সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্যে তার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন। প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সিনিয়র সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।