নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে শুরু হওয়া মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব ২০২৪ বেশ জমে উঠছে।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখরিত ছিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন আয়োজিত লোকজ উৎসব। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী এ উৎসবে আসেন।
গত মঙ্গলবার বিকেলে ফাউন্ডেশনের ময়ূরপঙ্খী লোকজ মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার এ মেলার শুভ উদ্বোধন করেন।
বিলুপ্তপ্রায় বাংলার লোক ও কারুশিল্পের সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন, বিপণন ও পুনরুজ্জীবনের লক্ষে সোনারগাঁয়ের বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব উৎসবের আয়োজন করেছে। ১৯৯১ সাল থেকে নিয়মিতভাবে মাসব্যাপী এ লোকজ মেলার আয়োজন করে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।
উৎসবের মূল আকর্ষণ কর্মরত কারুশিল্প প্রদর্শনীতে উৎসুক দর্শনার্থীর প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ করা গেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কারুশিল্পীরা এ উৎসব চত্বরে তাদের কারুপণ্য তৈরি ও বিক্রি করছেন। সাধারণ মানুষ এ কারুপণ্য তৈরির কলাকৌশল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন।
শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থীর ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো। বিপুল দর্শনার্থীর চাপে উৎসব চতুরের সামনের সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দর্শনার্থীসহ স্থানীয়রা বেশ ভোগান্তিতে পড়ে। দর্শনার্থীর ব্যাপক উপস্থিতিতে কারুশিল্পীরা বেশ খুশি।
গজারিয়া থেকে আগত দর্শনার্থী আরিফা জানান, শুক্রবার ছুটির দিন থাকার সুবাদে এসেছি লোকজ উৎসবে। হাতের তৈরী কাঠের, তাঁতের বিভিন্ন পন্য ক্রয় করেছেন। লোকজ মেলায় এসে তারা মুগ্ধ হয়েছেন বিভিন্ন কারু পন্য দেখে ও ক্রয় করে।
বরিশাল থেকে আগত দর্শনার্থী আরমান জানান, তিনি চাকরি করেন। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়াতে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে এসেছেন লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে। দেশীয় হাতের তৈরী পন্য ক্রয় করেছেন।
টেপা পুতুল তৈরির কারুশিল্পী জানান, দর্শনার্থী বেশি হওয়ায় তুলনামূলকভাবে বিক্রিও বেড়েছে।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক একেএম আজাদ সরকার জানান, হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ উৎসব শেষ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারিতে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উৎসব প্রাঙ্গণ খোলা থাকবে। উৎসবে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা তবে বিকেল ৫টার পর উৎসবে ফ্রি প্রবেশ করা যাবে।
এবার মেলায় সাধারণ স্টল ও কর্মরত কারুশিল্পী প্রদর্শনীর ৩২টি স্টলসহ সর্বমোট পালের সংখ্যা ১০০টি। এতে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রথিতযশা ৬৪ জন কারুশিল্পী সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।
এ বছর মৌলভীবাজার ও ঝালকাঠীর শীতল পাটি, মাগুরার শোলাশিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি ও মাটির পুতুল, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁ, টাঙ্গাইল ও ঠাকুরগাঁয়ের বাঁশ বেতের কারুশিল্প, ঐতিহ্যবাহী জামদানি, কাঠের চিত্রিত হাতি-ঘোড়া-পুতুল, বন্দরের রিকশা পেইন্টিং, কুমিল্লার, তামা-কাঁসা-পিতলের কারুশিল্প, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারুশিল্প, কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা পুতুল, বগুড়ার লোকজ খেলনা ও কুমিল্লার লোকজ বাদ্যযন্ত্রের শিল্পীসহ মোট ১৭ জেলার কারুশিল্পীরা মেলায় অংশ নেবেন। প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় বিশেষ কর্মসূচি হিসেবে কারুশিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ১৫টি স্টল দেওয়া হয়েছে।
মাসব্যাপী লোকজ উৎসব ২০২৪ এর প্রতিদিনের সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানমালায় লোকজ মঞ্চে পালাক্রমে বাউলগান, পালাগান, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালী গান, জারি-সারিগান, হাসন রাজার গান, শাহ আব্দুল করিমের গান, লালন সঙ্গীত, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ খেলা, লাঠিখেলা, মুড়ি ওড়ানো, চর্যাগান, লোকগল্প বলা ইত্যাদি অনুষ্ঠান পরিবেশনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।