চীনের বিভিন্ন শহরের শিশুদের মধ্যে রহস্যজনক নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে রাজধানী বেইজিং ও উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লিওনিয়াংয়ে শিশুদের মধ্যে রোগটি রীতিমতো প্রাদুর্ভাব পর্যায়ে রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিন অসংখ্য শিশু শ্বাসতন্ত্রের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়া ভিড় শুরু হয়েছে।
শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া এই রোগটিকে রহস্যজনক নিউমোনিয়া বলে উল্লেখ করেছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন।
টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়েছে, রোগটিকে রহস্যজনক নিউমোনিয়া বলার কারণ হচ্ছে- নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের কফ ও বুকে ঘড়ঘড় শব্দের মতো উপসর্গ দেখা যায়- আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি। শ্বাসকষ্ট ও উচ্চমাত্রার জ্বরের মতো উপসর্গ রয়েছে আক্রান্ত শিশুদের।
আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ সংস্থা প্রোমেড জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এই রহস্যময় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত যত রোগী পাওয়া গেছে, তাদের প্রায় সবাই শিশু। সংস্থাটি শিশুদের মধ্যে ‘অনির্ণয় করা নিউমোনিয়া’ সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছে। এর আগে করোনা মহামারি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার আগেও সতর্কতা জারি করেছিল প্রোমেড।
তাইওয়ানের এফটিভি নিউজ জানিয়েছে, বেইজিং ও লিয়াওনিংয়ের হাসপাতালগুলোকে রহস্যজনক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের স্রোত সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেহেতু বেইজিং ও লিওনিয়াংয়ের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৮০০ কিলোমিটার, তাই রহস্যময় নিউমোনিয়াকে স্থানীয় প্রাদুর্ভাব হিসেবে মনে করা হচ্ছে না।
মূলত স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে পড়ায় অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন শিক্ষকও আক্রান্ত হয়েছেন রহস্যজনক এই নিউমোনিয়ায়।
চীনে অক্টোবরের শুরু থেকে এই নিউমোনিয়া আক্রান্ত বাড়তে শুরু করে। ক্রমেই তা ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানোর জন্য চিনকে অনুরোধ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)।
ডাব্লিউএইচও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই রোগটির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রথমিক তথ্য পর্যালোচনা করে ধারণা করা হচ্ছে, করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার জের, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মাইক্রোপ্লাজমা নিউমোনিয়া (শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে যে নিউমোনিয়া দেখা যায়), শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস, করোনার জন্য দায়ী সার্স ভাইরাস- এসবের যে কোনো একটি বা একাধিক কারণ অপরিচিত এই নিউমোনিয়ার উত্থানের জন্য দায়ী।
‘তবে চীন যদি আরও বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে, সেক্ষেত্রে এ ব্যাপারে আরও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব আমরা,’ বিবৃতিতে বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।