যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেংকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। তার জায়গায় নতুন অর্থমন্ত্রী করা হয়েছে সাবেক পররাষ্ট্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেরেমি হান্টকে।
শুক্রবার ব্রিটেনের মন্ত্রিসভায় এসেছে এ পরিবর্তন। দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত কয়েক মাস ধরে চলতে থাকা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থির পরিস্থিতি সামাল দিতেই ট্রাস এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ওয়াশিংটনে ছিলেন কোয়ার্টেং; কিন্তু বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তলব আসার পর ওইদিন রাতেই লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হন এবং সকালে পৌঁছানোর পরই প্রথমেই পদত্যাগপত্র জমা দেন।
অবশ্য কোয়ার্টেংয়ের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর নিজের টুইটার অ্যাকউন্টে সেই পদত্যাগপত্রের ছবি দিয়ে লিজ ট্রাসের উদ্দেশে এক টুইটে তিনি বলেন, ‘আপনি আমাকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন, এবং আমি তা করেছি।’
রি-টুইটে তার জবাব দিয়ে লিজ ট্রাস বলেন, ‘আপনি আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহকর্মী। মন্ত্রিসভা থেকে আপনাকে হারিয়ে আমি গভীরভাবে ব্যাথিত। আমরা একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করি।’
তার আগে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে স্বল্পকালীন অর্থমন্ত্রী ছিলেন আয়ান ম্যাকলিওড। ১৯৭০ সালে তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৩০ দিনের মাথায় মারা যান। কোয়াটেং বরখাস্ত হলেন দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৩৮ দিন পর।
লিজ ট্রাস নিজেও অবশ্য তার প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ নিয়ে ঝামেলায় আছেন। বিগত সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদে এসেছেন মাত্র ৩৭ দিন হলো, কিন্তু এর মধ্যেই ভঙ্গুর অর্থনীতি সামাল দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাস।
দলের এমপি ও সদস্যদের ব্যাপক চাপের মুখে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পদত্যাগ করার পর ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির শীর্ষ নেতা ও দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ লাভ করেন ট্রাস। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পরেই দলীয় এমপি ও পার্টির সদস্যদের ভোট নিজের পক্ষে টানতে ব্যাপক কর কাটছাঁটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাস।
সেই অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কোয়ার্টেংকে সঙ্গী করে একটি মিনি বাজেটও পার্লামেন্টে পেশ করেন তিনি। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সেই মিনি বাজেট পেশ করা হয় পার্লামেন্টে।
কিন্তু তারপরই শুরু হয় বিতর্ক। কোয়ার্টেং সরকারের ট্যাক্সের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ছাড় দিতে ঋণ গ্রহণ বাড়ানোর পরিকল্পনা জানিয়েছিলেন, তাতে চাপে পড়ে ব্রিটেনের বাজার। পাউন্ডের অবমূল্যায়ন হয় দ্রুত।
ফলে শেষ পর্যন্ত সেই মিনি-বাজেটের জেরেই চাকরি খোয়াতে হল কোয়াটেংকে। আর তার মতো একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সমর্থককে বরখাস্ত করার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হল লিজ ট্রাসকে।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এক নেতা রয়টার্সকে বলেন, ‘পার্টি সবসময় নতুন পরিকল্পনা ও নেতৃত্বের সমালোচনাকে উৎসাহিত করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাটাই আসল ব্যাপার।’