ইউরোপের ২৮টি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ২০১৬ সালের ২৩ জুন ব্রিটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার এই প্রক্রিয়া বা সিদ্ধান্ত হলো ‘ব্রিটিশ এক্সিট’ বা ব্রেক্সিট। গত ১০ বছরে নানা গোলযোগের মধ্য দিয়ে গেছে ইইউ ও ব্রিটেনের সম্পর্ক। কীভাবে আগামী ১০ বছরে ইইউর সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক ভালো হতে পারে সে নিয়ে একটি সম্যক ধারণা তুলে ধরা হয়েছে দ্য ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণে। দশ বছর আগে, জানুয়ারি মাসে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গের লন্ডন সদর দপ্তরে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। এতে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার সুচতুর পরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরেন। ডেভিড ক্যামেরন নেতৃত্বে আসার পর থেকেই মূলত মৌলিক সংস্কার কাজ শুরু করেন। তার দলকে ইউরোপবিষয়ক একঘেয়ে দ্বন্দ্ব থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেন ব্রিটেনের সদস্যপদ নিয়ে অন্তর্র্বতী গণভোটের মাধ্যমে। কিন্তু ২০১৬ সালে এই ব্লক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ভোট ব্রিটেনের অর্থনৈতিক অস্বস্তি বাড়িয়ে তোলে, বাণিজ্যের গতি বানচাল এবং বিনিয়োগ শিথিল করে।
এটি প্রকৃত মিত্রদের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ককে আরও খারাপ করে এবং তার নিজস্ব ইউনিয়নের বন্ধনকেও দুর্বল করে। সর্বোপরি, এটি খারাপ হয় যখন ব্রিটিশ রাজনীতিকে জাদুকরি চিন্তার ধ্বংসাত্মক রুপে ধারণ করে। ক্যামেরন নিজেই এর ভুক্তভোগী ছিলেন। ব্রিটেনের সঙ্গে মানানসই করার জন্য মৌলিক নীতিগুলো পরিবর্তন করতে ইইউ-এর ইচ্ছাকে খারাপভাবে অতিমূল্যায়ন করার কারণে এমনটি ঘটেছে। ব্রেক্সিটের পক্ষে যারা শুরু থেকেই তাদের নিজস্ব ধোঁয়াশার ওপর ঝুঁকে ছিল ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। ফলে যে লাভ হতে পারে তা বা আইরিশ সীমান্তের ইস্যুটি সরিয়ে নেওয়া হোক, যে কোন উপায়ে সেটিই তারা চাচ্ছিলেন। অবশিষ্টরাও, যদি মনে করেন বিভক্তিটি কেবল পূর্বাবস্থায় ফেরানো যেতে পারে তবে তারাও বেকায়দায় পড়বেন। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইউরোপের সঙ্গে ব্রিটেনের আরও ভালো সম্পর্কের বিকল্প পথ রয়েছে। এখন অনেক ব্রিটিশ নাগরিক ব্লক ছাড়ার সিদ্ধান্তকে ভুল বলে মনে করছে। ইইউ তার জটিল প্রতিবেশীর সঙ্গেও আরও ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। কিন্তু সেই পথ অবলম্বন করতে গেলে যাদু বাস্তবতার অবসান ঘটাতে হবে। এই পথ হতে হবে ধীরগতির ও ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
এটি আবেগপ্রবণ হলেও বিপ্লবী নয়। গণভোট আয়োজন এবং ব্রাসেলসে আল্টিমেটাম উপস্থাপন করার পরিবর্তে আস্থা ও ঐকমত্য লালন করতে হবে। বলা যায়, যে কেউ পাহাড় থেকে লাফ দিতে পারে। কিন্তু পাহাড়ে চড়া কঠিন কাজ। ব্রেক্সিটপন্থিদের জন্য অর্থ দাঁড়াবে, ব্রেক্সিট যে ক্ষতি করেছে তা অকপটে স্বীকার করে নেওয়া। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের অনুমান বলছে, ব্রেক্সিট ২০২১ থেকে গত পাঁচ বছরে প্রায় ২৫ শতাংশ বিনিয়োগে হতাশা সৃষ্টি করেছে। একটি থিংক-ট্যাংক মনে করে ব্রিটেন ইউরোপে থাকলে অর্থনীতি এখন ৫ শতাংশের বেশি বড় হতো। তবুও ব্রেক্সিটের মধ্যে বিশ্বস্ত সত্য-কথন এখনও পরষ্পর বিরোধী। গত ডিসেম্বরে কনজারভেটিভ সরকার ব্রেক্সিট লভ্যাংশ হিসাবে আর্থিক-পরিষেবা শিল্পে নমনীয় সংস্কারের পথ দেখিয়েছিল। যদিও তখন অনেক পরিবর্তন ইইউ-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। সরকার এখনও ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ সমস্ত ইইউ আইন প্রতিস্থাপন বা বাতিল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদিও এটি লক্ষ্যহীন।