রিপাবলিকান না ডেমোক্র্যাট— কার দখলে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেস, নির্ধারণে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন শুরু হয়েছে আজ। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার মেয়াদের বাকি সময় কংগ্রেসের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন কিনা— তাও নির্ধারণ করে দেবে এই নির্বাচনের ফল।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, অ্যারিজোনা, কলোরাডো,মন্টানা, নেব্রাস্কা, নিউ মেক্সিকো, উটাহ, ওয়াইয়োমিং, পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান, জর্জিয়া, নিউইয়র্কসহ সব অঙ্গরাজ্যেই ভোট শুরু মঙ্গলবার।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রথা অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ২ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস ও উচ্চকক্ষ সিনেটের একাংশ আসনের নির্বাচন। সেই প্রথা মেনেই নিম্নকক্ষের ৪৩৫টি আসন ও সিনেটের ৩৫টি আসনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে এই মুহূর্তে ডেমোক্রেটিক পার্টির তুলনায় ৫টি আসন কম রয়েছে বিরোধী রিপাবলিক পার্টির, আর সিনেটের ১০০টি আসনের মধ্যে ৫০টিতে রিপাবলিকান ও বাকি ৫০টিতে ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
সাধারণত হোয়াইট হাউসে যে দল ক্ষমতাসীন থাকে, কংগ্রেসে সেই দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না। তবে এবারের নির্বাচনে রিপাবলিক ও ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে কোন দল কংগ্রেসে আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হবে, সে সম্পর্কে আভাস দেওয়া বেশ কঠিন। কারণ, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের গত কয়েকমাস ধরে যে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি চলছে তাতে মার্কিন জনগণের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছে। সেই সঙ্গে, বর্তমান ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সন্ত্রাসও পৌঁছেছে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে।
এই হিসেবে চিন্তা করলে রিপাবলিক পার্টিরই এই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার কথা; কিন্তু তাদের জয়ের পথে সবচেয়ে বড় একটি বাধা হলো গর্ভপাত আইন। চলতি ২০২২ সালের ২৫ জুন এক আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট, সেই সঙ্গে বাতিল করেছেন এ সংক্রান্ত ৫০ বছরের পুরোনো ‘রো বনাম ওয়েড’ আইন। একই ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের সব গর্ভপাত ক্লিনিকগুলোও বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ জানিয়েছে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও সাধারণ মার্কিন জনগণের একাংশ। তবে রিপাবলিক পার্টির নেতারা এই আইনকে স্বাগত জানিয়েছেন। রিপাবলিকান নেতাদের এই স্বাগত জানানোকে মার্কিন জনগণের একাংশ তো বটেই, খোদ পার্টির অনেক সমর্থকও ভালো চোখে দেখেননি।
তাছাড়া গত ২০২১ সালে মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে যে হামলা চালিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা, সেই স্মৃতি থেকেও এখনও বেরোতে পারেননি অনেক ভোটার; আর বর্তমান নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিক পার্টির প্রচারাভিযানে দলের প্রধান মুখপাত্র ছিলেন ট্রাম্প।
মধ্যবর্তী এই নির্বাচনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জয়ী হতে পারেন, খানিকটা হলেও তার আঁচ পাওয়া যাবে। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আবারও নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন।
তবে সেই নির্বাচনেও বাইডেনকে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। কারণ সোমবার এক জনসভায় ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন— আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে তার।
কংগ্রেসে যদি রিপাবলিক পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য কোনো কাজ করা খুব কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষ করে নতুন কোনো বিল আইন আকারে যদি তিনি পাস করাতে চান, সেক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান জনপ্রতিনিধিরা তা আটকে দেবেন।
এছাড়া হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের নিয়ন্ত্রণ পেলে রিপাবলিকানরা ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা নিয়ে গত বছর থেকে শুরু হওয়া ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন তদন্ত বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি বাইডেন প্রশাসনের কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্তে নামবেন বলেও আভাস দিয়েছেন দলটির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা।
রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নকক্ষ বাইডেনকে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করবে না— এমন কথা বলতেও রাজি হননি দলটির অন্যতম নেতা কেভিন ম্যাকার্থি।
রিপাবলিকানরা নির্বাচনে জিতলে ম্যাকার্থি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার হতে পারেন। নিম্নকক্ষের এ স্পিকার পদটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোর সবচেয়ে প্রভাবশালী পদ।
ডেমোক্র্যাটরা যদি সেনেটের দখলও হারায় তাহলে আগামী দুই বছর বিচারক নিয়োগ, এমনকি প্রশাসনে নিজের পছন্দের লোক বসানোর ক্ষমতাও অনেকখানি হারাবেন বাইডেন।