কাতারে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থখ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হতে বাকি মাত্র পাঁচ দিন। খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার অনেক বড় এক ক্ষেত্র এই বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ দিয়েই অনেক নামকরা ফুটবলার নিজের ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানেন। আবার অনেকে বিশ্বকাপে নিজের সেরাটা দিয়ে জাত চেনানোর চেষ্টা করেন। তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য বিশ্বকাপ ফুটবল আসর হতে পারে বেশ বড় উপলক্ষ। কাতারের ফুটবল বিশ্বকাপে নজর কাড়তে পারে এমন কয়েকজন তরুণ খেলোয়াড় নিয়েই কাটাছেঁড়া থাকছে এই প্রতিবেদনে।
গাভি (স্পেন)
বার্সালোনার এই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার চলতি বছরের ৫ আগস্ট ১৮ বছরে পা দিয়েছেন। সেই সাথে ডাক পেয়েছেন স্পেনের বিশ্বকাপ দলেও। স্পেনের বিস্ময় বালক ইতোমধ্যে নিজের প্রতিভাকে জানান দিয়েছেন বার্সার হয়ে। বার্সার হয়ে গাভি ১৯ ম্যাচ খেলেছেন। জাতীয় দলের হয়ে ১২ ম্যাচে এক গোল করেছেন।
বিলাল এল খান্নাওস (মরক্কো)
বিলাল এল খান্নাওস চলতি বছরের ১০ মে ১৮ বছরে পা দিয়েছেন। এই মিডফিল্ডার মরক্কোর বিশ্বকাপ দলে ডাক পেয়েছেন। বেলজিয়ামের ক্লাব রেসিং জেংকের হয়ে খেলছেন তিনি। বেলজিয়াম জাতীয় দলের হয়ে খেলারও সুযোগ ছিল তার সামনে। কিন্তু তিনি মরক্কোকে বেছে নিয়েছেন। ১৪ বছর বয়সে রেসিং জেংকে দলে যোগ দেন খান্নাওস। বেলজিয়ামের অনুর্ধ্ব ১৫ ও ১৬ দলের হয়েও খেলেছেন। চলতি মৌসুমে ১৬টি ম্যাচে অংশ নিয়ে একটি অ্যাসিস্ট করেছেন। মূলত মিডফিল্ডার হয়ে খেললেও রক্ষণভাগে বেশ ভালো ভূমিকা রাখেন তিনি।
জুইসন বেনেট(কোস্টারিকা)
চলতি বছরের ১৫ জুন ১৮ বছরে পা দিয়েছেন এই মিডফিল্ডার। বর্তমানে খেলছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সান্ডারল্যান্ডের হয়ে। বিশ্বকাপে কোস্টারিকার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন এই তরুণ। লিগে ১৬ ম্যাচে অংশগ্রহণ করে তিনটি গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করেছেন। জাতীয় দলের হয়ে এই তরুণ ফুটবলার ৭ ম্যাচে দুইটি গোল ও দুইটি অ্যাসিস্ট করেছেন। গতি ও দারুণ স্কিলের জন্য তিনি অল্প বয়সে সবার নজর কেড়েছেন।
গারাং কৌল (অস্ট্রেলিয়া)
চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮ বছরে পা দেয়া এই ফরোয়ার্ড বর্তমানে খেলছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের হয়ে। দারুণ পারফরম্যান্সে জায়গা করে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলে। ১২ টি লিগ ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন এই ফরোয়ার্ড। ২৫ সেপ্টেম্বর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম আর্ন্তজাতিক ম্যাচ খেলেন তিনি। দুরন্ত গতি, চমৎকার স্কিলের অধিকারী এই তরুণ ফুটবলার বিশ্বকাপে নজর কাড়বে সবার।
ইউসুফা মৌকোকো (জার্মানি)
আগামী ২০ নভেম্বর ১৮ বছরে পা দিতে যাচ্ছেন বুন্দেসলিগার ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের এই তরুণ স্ট্রাইকার। ক্যামেরুনে জন্মগ্রহণ করা এই তরুণ ফুটবলার ১১ বছর বয়সেই জার্মানিতে চলে আসেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে সেন্ট পাউলির হয়ে ১২ ম্যাচে ২১ গোল করেন তিনি। ১২ বছর বয়সেই বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের অনূর্ধ্ব-১৫ দলে জায়গা পান। সেখানেও একের পর এক গোল এসেছে মৌকোকোর পা থেকে। বরুশিয়ার তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে ইতোমধ্যে সমর্থকদে কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। তাকে তুলনা করা হচ্ছে পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে। নিজের জাত চেনাতে বিশ্বকাপের প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করতে চান জার্মান এই ফুটবলার। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে ২২ ম্যাচে ৬ গোল ও ৪টি অ্যাসিস্ট করেছেন তরুণ এই খেলোয়াড়।
পেদ্রি (স্পেন)
১৯ বছর বয়সী এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার একজন নিয়মিত খেলোয়াড়। বার্সা ও স্পেনের মধ্যমাঠের প্রাণভোমরা বলা হয় তাকে। একজন মিডফিল্ডার হলেও বিপক্ষের রক্ষণভাগে সব সময় থাকে তার আনাগোনা। ২০১৯ সালে লাস পালমাসের মূল দলে খেলার মাধ্যমে জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেন। লাস পালমাসের হয়ে মাত্র ১ মৌসুম খেলার পর ২০২০ সালে তিনি যোগ দেন বার্সায়। বার্সার হয়ে ৭৩টি ম্যাচ ইতোমধ্যে খেলেছেন পেদ্রি। স্পেনের হয়ে খেলেছেন ২০২০ সালের ইউরো। জাতীয় দলের হয়ে মোট ১৪টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। সব লিগ মিলিয়ে ১৩০ ম্যাচে ১৬ গোল করেছেন। এই বিশ্বকাপেও স্পেনের মাঝমাঠের অন্যতম প্লে-মেকার ভাবা হচ্ছে তাকে।
জামাল মুসিয়ালা ( জার্মানি)
১৯ বছর বয়সী এই তরুণ মিডফিল্ডার বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে খেলছেন। মূলত মিডফিল্ডার হলেও বিপক্ষের ডি-বক্সে তার উপস্থিতি থাকে সব সময়। ২০১৬ সালে মুসিয়ালা ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৫ দলের হয়ে খেলেছেন। ২০২১ সালে জার্মানির হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক হয় তার। জার্মানির জার্সি গায়ে তিনি এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন। কজার্মানদের হয়ে অংশ নিয়েছেন ২০২০ সালের ইউরোতে। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে চলতি মৌসুমে ৯ ম্যাচে ৫ গোল ও ৪ অ্যাসিস্ট করেছেন মুসিয়ালা। গোল করা ও গোলে সহায়তায় পারদর্শী তরুণ এ ফুটবলার বিশ্বকাপে নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে আলোচনায় থাকতে পারেন।
জুড বেলিংহাম (ইংল্যান্ড)
১৯ বছর বয়সেই ইংল্যান্ড দলের মাঝমাঠের ভরসা হয়ে উঠেছেন তরুণ জুড বেলিংহাম। পেয়েছেন বিশ্বকাপের দলে ডাক। ১৭ বছর ১৩৬ দিন বয়সে জাতীয় দলে তার অভিষেক হয়েছিল তার। সেই ১৭ বছর বয়সেই জাতীয় দলের হয়ে পুরো ৯০ মিনিট খেলে ইউরোর ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মধ্যমাঠেরও অন্যতম ভরসা এই তরুন। ইংল্যান্ডের হয়ে এ পর্যন্ত ১৭ ম্যাচ খেলেছেন বেলিংহাম। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে খেলেছেন ১২৩ ম্যাচ। তাতে ১৯ গোল ও ২৩ টি অ্যাসিস্ট করে আলো কেড়েছেন তরুণ এ ফুটবলার।