নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘ ১১ বছরের অপেক্ষার অবসান ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়কপথে সংযুক্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের শহর ও বন্দর। সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ১টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় তিনি ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের সদস্যদের ভূমিকার কথা বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এসময়ে সেতুর নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমানের নামে করার কারণসহ ওসমান পরিবারের অবদানের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর মুখে নিজের পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতার বানী শুনে চোখের পানি জরালেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমান পরিবারের বিষয়ে বলেন, ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর নাম নাসিম ওসমানের নামেই দিয়েছি। কারণ ওনার বাবা শামসুজ্জোহা সাহেব আওয়ামীলীগের নেতা ছিলেন। ওনার দাদা ওসমান সাহেব ধরতে গেলে আওয়ামীলীগের একটা ঘাঁটি ছিলেন। ১৯৭১ সালে ধানমন্ডির ১৮ নং রোডের বাসায় আমার মা সহ আমরা সবাই বাসায় বন্দী ছিলাম। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী সারেন্ডার করার পরেও আমরা মুক্তি পাইনি। পাকিস্থানিরা আমাদের আটকে রেখে ছিল। কিন্তু জোহা সাহেব ভেবেছিল আমরা বোধহয় মুক্তি পেয়েছি। তিনি আমাদের বাসার রাস্তা দিয়ে ঢুকেন। তখন পাকিস্তানী সেনারা আমাদের বাসা লক্ষ্য করে তাকে গুলি করেন। তাঁর শরীরে গুলি লাগে। কিন্তু তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। তার কথা আমি স্মরণ করি। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে আমরা রিফিউজী হিসেবে দিল্লীতে ছিলাম। তখন তিনি গ্রেপ্তার হয়ে বন্দী ছিলেন। তিনি মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথে ছুটে গিয়েছিল দিল্লীতে, আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। সেইসব কথা আমরা স্মরণ করি।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট, আমাদের জন্য একটা কালোরাত্রি। ১৪ আগস্ট নাসিম ওসমানের বিয়ে হয়। নাসিম ওসমানের বিয়েতে কামালও (শেখ কামাল) গিয়েছিল। কামাল ফিরে আসে। এরমধ্যে নাসিম ওসমান ১৫ আগস্টের ঘটনা শুনে নবপরিণিতা স্ত্রীকে রেখে এই হত্যার প্রতিবাদ জানাতে চলে গিয়েছিল ভারতে। সেখানে তিনি এই হত্যার প্রতিবাদ করে। আমি সেইসব কথা সবসময়ে আমি স্মরণ করি। যদিও একসময় আমাদের পার্টি করতো না, অন্য পার্টিতে গিয়েছিল। কিন্তু আমার সাথে সবসময় যোগাযোগ ছিল, বড় বোন হিসেবে সম্মান করতো। সেতুটির বিষয়ে কথা বলার জন্য সে বার বার আমার সঙ্গে দেখা করেছিল। যখন আমরা সেতুটার কাজ শুরু করি, তখনই তিনি ইহলোক ছেড়ে চলে গেলেন। এজন্য তার নামেই সেতুটি উৎস্বর্গ করেছি। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার নামেই সেতুর নাম করেছি।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের এই পর্যায়ে চোখের চশমা খুলে চোখের পানি মুছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।