নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল ইসলাম রাজীবসহ ৩জন মারধরের শিকার হয়েছেন। তাদের দাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের পরিকল্পিভাবে মারধর করেছে। তবে ছাত্রলীগ নেতাদের দাবী তারা ছিনতাইয়ের সময় জনতার রোষানলে পড়ে আক্রান্ত হয়েছে। পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে তাদের মধ্যে রাজিবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। সে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে নগরীর তোলারাম কলেজ রোডের ডাকবাংলোর সামনে।
সরকারি তোলারাম কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র মোঃ শিহাব (২০) জানান, তিনি ও তার সাথে থাকা আরেক সহপাঠী মোঃ নাঈম হোসেন (২০) কোচিং পড়ে বাড়ি ফেরার সময় ডাক বাংলোর মোড়ে এসে পৌঁছালে ৫ জনের একটি ছিনতাইকারী চক্র তাদের পথরোধ করে মোবাইল, নগদ টাকা সহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় তারা ছিনতাইকারীদের বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা তাদের হাতে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে ছুরিকাঘাত করে। ছিনতাইকারীদের চুরিকাঘাতে শিহাবের ডান হাত রক্তাক্ত জখম হয়। এছাড়া তার মুখমন্ডলে সজোরে আঘাত করলে তার চশমা ভেঙ্গে যায়। পাশাপাশি শিহাবের বন্ধু নাঈম হোসেন এর পিঠে নীলাফুলা জখম হয়। এরই মধ্যে শিহাবের সাথে থাকা আনুমানিক এক হাজার সাতশত টাকা, ব্যবহৃত মোবাইল ফোন (ভিভো ওয়াই ২০) ও গলায় থাকা ১৪ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আত্মরক্ষার্থে তাদের ডাক চিৎকারে স্থানীয় জনতা এগিয়ে আসলে তিন ছিনতাইকারী পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় দুই ছিনতাইকারীকে আটক করলে ওই চক্রের অজ্ঞাত ২০-২৫ জন তাদের ছাড়িয়ে নিতে আসে। এসময় স্থানীয় জনতা ও আশপাশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা খবর পেয়ে এগিয়ে আসলে তাদের ধাওয়ায় ওই চক্রের সকলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আটক দুই ছিনতাইকারীকে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের জন্য স্থানীয় থানায় খবর দেয়া হলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন আনু, দুলাল ও মাসুদ সহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জন আটককৃতদের ছিনিয়ে নিতে গেলে স্থানীয়দের সাথে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। পরে আটক দুই ছিনতাইকারীকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
আহত ছাত্রদল নেতা রাজীব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এলাকায় আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ অনিক এসে বলে, তাকে ও তার বন্ধুকে রিয়াদের লোকজন মেরেছে। রিয়াদ ভাই আর আমি পাশাপাশি এলাকার। ছোটবেলা থেকে তাকে চিনি। আমি শুধু কথা বলতে গিয়েছিলাম যেন সোহাগকে ছেড়ে দেয়। এই কথা বলতে যেতেই আমাকে ঘিরে ধরে মারধর করতে থাকে। আমি প্রাণ বাঁচাতে টিপু ভাইকে ফোন দেই। তারা এসে আমাকে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করতেই পুনরায় মারধর শুরু করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে।’
এদিকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘সোয়া ৮টার দিকে ফোন দিয়ে রাজীব জানায় ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে মারধর করছে। আমি খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। এসে রাজীবকে ডাক বাংলোর এক পাশে নিয়ে যাই। তাকে অটোরিকশায় তুলতে গেলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আবার মারধর করে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে উদ্ধার করে। ছাত্রলীগের নেতা রিয়াদের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে।
তবে সরকারী তোলারাম কলেজের ভিপি হাবিবুর রহমান রিয়াদ জানান, ২ সাধারন শিক্ষার্থী ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে জানার পর আমি ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। এসে দেখি ২জন ছিনতাইকারীকে আটক করে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দিয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির ২০/২৫জন নেতাকর্মী জঙ্গী স্টাইলে সেখান থেকে ছিনতাইকারীদের ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে আশপাশের লোকজন তাদের ধাওয়া দেয়। এরপর পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়।
ওদিকে একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে রাজিবসহ দুইজনকে পুলিশের পিকআপে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান ও ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ নুরে আযম মিয়া রহস্যজনকভাবে ঘটনাটি এড়িয়ে যাচ্ছেন। সদর থানার ওসি বলছেন আমরা কাউকে আটক করিনি। বিষয়টি ফতুল্লা থানা পুলিশ জানে। অপরদিকে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি বলছেন, আমরা ঘটনার খোঁজ খবর নিচ্ছি। কাউকে আটক করা হয়নি।