সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেছেন, সরকার দেশে নিয়ন্ত্রিত-বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। আদালতকে ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার বানিয়েছে। মানুষের বিচার পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রাষ্ট্রকে হুমকীর মুখে ফেলেছে। আর সেজন্যই সাড়ে দশ বছরেও ত্বকী হত্যার বিচার শুরু হয় না, ১০০ বারেও সাগর-রুনী হত্যার অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়ে না। ৪৮ ঘন্টার মেয়াদ সাড়ে এগার বছরেও শেষ হয় না।
তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১২৫ মাস উপলক্ষে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোক প্রজ¦ালন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
রফিউর রাব্বি আরও বলেন, তদন্ত শেষ করে দশ বছর আগে ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র তৈরী করে রাখা হলেও, ঘাতক সরকারদলীয় বলে তা আদালতে জমা দেয়া হয় না। এইটি শুধু বিচারহীনতার নজিরই নায়, এইটি সরকারের দেউলিয়াপনার উদাহরণ। সরকার নিজের ব্যার্থতা রাষ্ট্রের কাঁধে চাপিয়ে রাষ্ট্রকেই আজকে প্রশ্নের মুখোমুখী দাঁড় করিয়ে দেউলিয়া করে দিতে চাচ্ছে। যে ওসমান পরিবার ত্বকী হত্যাসহ বহু অপকর্মের জন্মদাতা-সরকার বারে বারে তাদের পুরস্কৃত করেছে। সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ত্বকীর ঘাতকদের পক্ষ নেয়ার মধ্যদিয়ে তিনি পবিত্র সংসদকে কলুষিত করেছেন। আমরা প্রশ্নবিদ্ধ বিচার ব্যবস্থার অবসান চাই। সাগর-রুনী, তনু সহ নারায়ণগঞ্জের সকল হত্যার বিচার চাই।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ বলেন, সরকার ত্বকী হত্যার বিচারে ইন্ডেমনিটি জারি করেছে, ত্বকীর ঘাতক ওসমান পরিবারকে রক্ষার জন্য বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ত্বকী হত্যার বিচারের সাথে সুশাসনের সম্পর্ক জড়িত। আমরা ত্বকী সহ সকল হত্যার বিচার চাই।
ন্যাপের জেলা সাধারণ সম্পাদক এড.আওলাদ হোসেন বলেন, অপরাধ সংঘটনের ৯০ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দেয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতা থাকলেও সাড়ে দশ বছরে ত্বকী হত্যার বিচার শুরু না হওয়া, আমাদের সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ দায় সরকারের।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এড. এবি সিদ্দিক, সিপিবি শহর সভাপতি আবদুল হাই শরীফ, বাসদের জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, উদীচীর জেলা সভাপতি এড. জাহিদুল হক দীপু, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি হাফিজুর রহমান, সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি এড. জিয়াউর ইসলাম কাজল এবং এড, প্রদীপ ঘোষ বাবু।
বক্তারা আরও বলেন, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। এর দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবেন। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজো আদালতে পেশ করা হয় নাই। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।