নিউইয়র্কের একটি আদালতে আসার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখানে তিনি হচ্ছেন ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হওয়া প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
২০২৪ সালে হোয়াইট হাউসের জন্য রিপাবলিকানদের পছন্দ এই ব্যক্তি একই ভবনে ম্যানহাটন জেলা অ্যাটর্নির অফিসে আত্মসমর্পণ করেন।
মিনিট আগে, তিনি তার সিক্রেট সার্ভিস প্রোটেকশন টিমের একটি মোটর কাডে কোর্টহাউসে নিয়ে যাওয়ার আগে ট্রাম্প টাওয়ারে তার বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় তিনি তার মুষ্টি পাম্প করেছিলেন।
গাঢ় নীল স্যুট এবং লাল টাই পরা ট্রাম্পের আঙুলের ছাপ এবং প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে, তবে তার মুখের শট নেয়া হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
তারপরে ট্রাম্প তার অভিযুক্তের জন্য একটি আদালত কক্ষে যাবেন যেখানে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রকাশ করা হবে। সেখানে কর্মকর্তারা তার আঙুলের ছাপ নেবার এবং কাগজপত্র তৈরি করার পর তাকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নেয়া হবে কিনা সেটা বিবেচনা করা হবে। এরপর তাকে আদালতে হাজির করা হবে, যেখানে তার বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অভিযোগ পড়ে শোনানো হবে এবং তিনি নিজেকে দোষী বা নির্দোষ বলে আবেদন জানানোর সুযোগ পাবেন।
তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন : ‘ম্যানহাটন কোর্টহাউসের দিকে যাচ্ছেন। খুব অবাস্তব মনে হচ্ছে – বাহ, তারা আমাকে গ্রেফতার করতে যাচ্ছে। বিশ্বাস করতে পারছি না এটা ঘটছে আমেরিকায়। মাগা!”
বিচারক জোয়ান মুর্চিনের রায়ের পর আদালতের ভিতরে টেলিভিশন ক্যামেরার অনুমতি দেওয়া হবে না, তবে শুনানি শুরু হওয়ার আগে পাঁচজন ফটোগ্রাফার ট্রাম্প এবং দৃশ্যের ছবি তুলতে অ্যাক্সেস পাবেন।
তবে, বিল্ডিংয়ের হলওয়েতে টিভি ক্যামেরার অনুমতি দেওয়া হবে যাতে ট্রাম্প সেখানে থাকাকালীন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে পারেন।
ট্রাম্পের আদালতে আত্মসমর্পণকে ঘিরে নিরাপত্তার পুরো বিষয়টি দেখভাল করছে এফবিআই, এনআইপিডি, সিক্রেট সার্ভিস ও নিউইয়র্ক সিটি কোর্ট কর্মকর্তারা। সিবিসি টেলিভিশনকে একটি সূত্র জানিয়েছে যে, এসব সংস্থা এখন মিস্টার ট্রাম্প, বিচারক ও আইনজীবী সহ সংশ্লিষ্টদের ওপর হামলাসহ সম্ভাব্য নানা কিছু বিশ্লেষণ করছে। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস ইতোমধ্যেই ‘অনেকগুলো হুমকি’ পেয়েছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। শুক্রবার সকালে আদালত এলাকা ছিলো স্বাভাবিক। কিন্তু পরবর্তী সপ্তাহের কথা চিন্তা করে ব্যারিকেড দেয়া হচ্ছিলো। টহল দিচ্ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা। অনেকে মনে করছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট যখন আদালতে আসবেন তখন আসলে পুরো এলাকা লকডাউন করে দেয়া হতে পারে।
এর আগে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস ট্রাম্পকে শুক্রবারে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলো কিন্তু সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য সময় দরকার বলে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মোট কতগুলো অভিযোগ আনা হয়েছে তা এখনো পরিষ্কার নয়। কারণ সেগুলো প্রকাশ করা হয়নি। তার আইনজীবী জো ট্যাকোপিনা বলেছেন, মোট কত অভিযোগ আনা হচ্ছে সেটি এখনো তাদের জানা নেই। ওদিকে শুক্রবারও ট্রাম্প বিচারকদের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
এদিকে রিপাবলিকান স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থি ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে আগামী নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমকে ব্যবহারের অভিযোগ করে তীব্র সমালোচনা করেছেন। জর্জিয়ার কংগ্রেস সদস্য মারজরি টেইলর গ্রিন তার অনুসারীদের প্রতিবাদ করার আহবান করেছেন। তিনি নিজেও আদালতে উপস্থিত থাকার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্রাগ বলেছেন নিউইয়র্কের নাগরিকরা অভিযোগগুলো এনে তাদের নাগরিক দায়িত্ব পালন করেছেন- সাবেক প্রেসিডেন্ট বা কংগ্রেস কেউই বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। ওয়াশিংটনে ইউএস ক্যাপিটল পুলিশ বলেছে তারা মনে করছে যে সারাদেশেই প্রতিবাদ বিক্ষোভ হতে পারে এবং সে কারণে রাজধানীতে নিরাপত্তা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে তারা। এদিকে হোয়াইট হাউজ থেকে মিসিসিপি যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যদিও জো ট্যাকোপিনা বলেছেন অভিযোগগুলো নিয়ে ট্রাম্প মোটেও উদ্বিগ্ন নন।