উন্মাদনা, উত্তেজনা, রুদ্ধশ্বাস লড়াই, শরীরী আক্রমণ; কি ছিলো না উরুগুয়ে-কলম্বিয়ার ম্যাচে? কোপা আমেরিকার টিপিক্যাল লড়াই যাকে বলে তার সবটাই দেখালো দুই দল। তাতে হলুদ কার্ডের স্রোতে লাল কার্ডও দেখাতে হলো রেফারিকে। সব ছাপিয়ে জয়টা হলো ১০ জনের কলম্বিয়ার। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে উরুগুয়েকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে চলে গেল তারা। শিরোপার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় শুরু হওয়া ম্যাচে প্রথমার্ধে বল দখলের লড়াইয়ে দুই দল প্রায় সমানে সমান লড়ে যায়। পরে অবশ্য এগিয়ে যায় উরুগুয়ে। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় হলো না। উরুগুয়ের ৬২ শতাংশ বল দখলের বিপরীতে ৩৮ শতাংশ বল নিজেদের কাছে রাখে কলম্বিয়া।
ম্যাচে ১১টি শট নিয়ে দুটি লক্ষ্যে রেখে কোনো গোল আদায় করতে পারেনি উরুগুয়ে। বিপরীতে ১১টি শট নিয়ে ৪টি লক্ষ্যে রেখে ১টি গোল আদায় করে নেয় কলম্বিয়া। ম্যাচে শুরু থেকেই ছিল ফাউলের ছড়াছড়ি। তাতে উরুগুয়ে ১১টি ফাউল করে, কলম্বিয়ার ফাউল ১৩টি। দুই দল ৩টি করে হলুদ কার্ড দেখলেও কলম্বিয়া বিরতির ঠিক আগে লাল কার্ড খায়।
ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে প্রথম আক্রমণটা করেন কলম্বিয়ার জন অ্যারিস। তার শট বক্সের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। ষোড়শ মিনিটে আরেকটি মিস করেন লার্মা। সপ্তদশ মিনিটে প্রথম আক্রমণ করে উরুগুয়ে। তবে সেই শটে লক্ষ্য খুঁজে পাননি দারউইন নুনেজ।
এর মাঝেই ২৬তম মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন উরুগুয়ের নিকোলাস দে লো ক্রুজ। তার পথ ধরে ৩১ মিনিটে একই কার্ড দেখেন কলম্বিয়ার দানিয়েল মুনোজ। এর আট মিনিট বাদেই এগিয়ে যাওয়ার উল্লাসে মাতে কলম্বিয়া।
ডান কর্নার থেকে বল উড়িয়ে দিয়েছিলেন কলম্বিয়া অধিনায়ক রুদ্রিগেজ। গোলপোস্ট থেকে তিন হাত দূরের অবস্থানে ছিলেন লার্মা। উড়ে আসা বলে চোখ রেখে লাফিয়ে উঠে মাথাটা ছুঁইয়ে দেন তিনি। এগিয়ে যায় কলম্বিয়া। কিছুই করার ছিলো না উরুগুয়ে গোলরক্ষকের।
এগিয়ে যাওয়ার পরপরই শনির দশা ভর করে কলম্বিয়ার ভাগ্যে। প্রথমার্ধের সময় শেষ, যোগ করা সময়ের খেলা চলছে। ঠিক তখনই লাল কার্ড দেখেন মুনোজ। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটেই উরুগুয়ের একজনকে কড়া ট্যাকলের মাশুল হিসেবে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় তাকে। প্রথমার্ধে এক গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় কলম্বিয়া।
বিরতির পর রুদ্রিগেজের কর্নারে মিস করেন জন করডোবা। এরপরই এক সতীর্থের ফাউলের প্রতিবাদ করে হলুদ কার্ড দেখেন কলম্বিয়া অধিনায়ক। পরের দশ মিনিটে মাঠের খেলার চাইতে শারিরীক লড়াইয়েই বেশি মনোযোগী হয় দুই দল। এর জের ধরে ৬৩তম মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন গিলার্মো ভারেলা।
৬৮তম মিনিটে সমতায় ফেরানোর ভালো একটি সুযোগ পেয়েছিলেন ক্রুজ। ফেদে ভালভার্দের ক্রস কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে বাঁক খাওয়ানো শট নিয়েছিলেন তিনি। তবে তার শট রুখে দেন কলম্বিয়া গোলরক্ষক। এর এক মিনিট পর হলুদ কার্ড দেখেন উরুগুয়ের জোসে গিমারেজ।
৮৫তম মিনিটে উরুগুয়ের আরেকটি সুযোগ নসাৎ করে দেন কলম্বিয়ার গোলরক্ষক। শেষ কয়েক মিনিটে লং পাস দিয়ে খেলতে থাকে দুই দল। তাতে একের পর এক আক্রমণ হলেও জাল খুঁজে নিতে ব্যর্থ হয় লাতিন আমেরিকার দল দুটি। নির্ধারিত সময়ের যোগ করা সময়ে কলম্বিয়ার আরেকটি আক্রমণ শেষ হতেই শেষ বাঁশিতে ফুঁ দেন রেফারি, উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা দল।
টানা ২৮ ম্যাচ অপরাজিত থেকে ফাইনালে পা রাখা কলম্বিয়ার প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা। সোমবার (১৫ জুলাই) বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় শিরোপার লড়াইয়ে একে অপরের মোকাবেলা করবে দুই দল।