আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে মন্ত্রী-এমপিদের সতর্ক করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এখানে কারও হস্তক্ষেপই মেনে নেওয়া হবে না।
শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে রংপুর বিভাগের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন করতে চায় সরকার। নির্বাচনকে প্রবাহিত করতে এমপি-মন্ত্রী কারও হস্তক্ষেপই মেনে নেওয়া হবে না। এমপি-মন্ত্রী আমার কেউ আছে, তাকে জেতানোর জন্য নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করব, এটা কেউ করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, নির্বাচনে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ, প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতায় আছে বলে করবে এটা কোনও অবস্থায় অ্যালাউ করা হবে না। যে উদ্দেশে নির্বাচন উন্মুক্ত করা হয়েছে সেটা ব্যাহত করা যাবে না। উপজেলা নির্বাচনকে সম্পূর্ণভাবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং পক্ষপাতহীন করতে চাই।
দায়িত্বশীলদের বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাফ জানিয়ে দেন, ফ্রি স্টাইলে দল চলবে না। তিনি বলেন, যার যেমন খুশি যখন-তখন দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য রাখবেন সেটার দায় দল বহন করবে না। একজনের একটা বক্তব্য গোটা দলের শৃঙ্খলার ওপর আঘাত হানে। এমন কিছু হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, জনগণের সঙ্গে সেতু তৈরি করতে হবে। সাংগঠনিক বিভিন্ন স্তরে যে দেয়াল রয়েছে তা ভেঙে দিয়ে সেতু রচনা করতে হবে। আমরা চ্যালেঞ্জিং সময় অতিক্রম করছি। এ সময় ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলতে হবে। দায়িত্বশীলরা দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিতে পারেন না।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পয়েট অফ পলিটিক্স, আর তার কন্যা শেখ হাসিনা হলেন মেজিশিয়ান অফ পলিটিক্স।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতিবাচক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপির রাজনীতিকে অন্ধকারে ফেলে দিয়েছে। এ থেকে তারা দ্রুতই বের হতে পারছে না।
কাদের বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিশ্বের ৮১টি দেশ এবং ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এমনকি নির্বাচনকে ঘিরে যারা আতঙ্ক ছড়িয়েছে, নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বলেছে তারাও বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশের বাস্তবতা। সেটা অনুধাবন করেই তারা এখন বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, গণতন্ত্রের হত্যাকারী বিএনপি আজ গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না করছে। সব হারিয়ে দলটি এখন নেমেছে ভারত বিরোধিতায়। পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভারত বিরোধিতা এবং এখন তার কন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারত বিরোধিতার অসুখ খেলা আবারও শুরু হয়েছে। আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। তাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই।
বিএনপির ৮০ শতাংশ নেতাকর্মী আটক নিয়ে ওবায়দুল কাদের বিএনপি মহাসচিবকে তাদের সেই তালিকা প্রকাশের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মিথ্যার বেসাতি করে রাজনীতি চলে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশ সঠিক পথে আছে। যে যাই বলুক, আমাদের ভেতরের কথা আমরা জানি। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে আমরা আমাদের অবস্থা জানি। আমাদের অবস্থা স্থিতিশীল। আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না।
এ সময় কমিটি গঠন ও জেলা কর্তৃক কমিটি ভেঙে দেওয়া প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, পকেট কমিটি না করে দলের ত্যাগীদের কমিটিতে রাখতে হবে। অনেক সময় কেন্দ্রকে না জানিয়ে উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন কমিটি ভেঙে দেওয়াসহ কমিটির কারও পদ বাতিল ও অব্যাহতি দিয়ে থাকে জেলা কমিটি। এটা করা যাবে না। জেলা কমিটি কাউকে অব্যাহতি কিংবা কমিটি ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রকে শুধু সুপারিশ করতে পারবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডক্টর হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কোষাধ্যক্ষ এইচ এম আশিকুর রহমান, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের নেতৃবৃন্দ।