মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন

ইতিহাসের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩.০৪ এএম
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

আর চাই ১৪৩ রান। তাহলেই ইতিহাস। পাকিস্তানকে প্রথম টেস্টে হারিয়ে বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস লিখে। প্রথমবার পাকিস্তানকে টেস্টে হারানোর অমূল্য স্বাদ পায় বাংলাদেশ।

এবার সিরিজ জয়ের অপেক্ষা। লক্ষ্য ১৮৫ রান। সেই পথে আজ আরও একটু এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডিতে দিনের শেষ ঘণ্টার খেলা আলোকস্বল্পতায় ও বৃষ্টিতে পণ্ড হয়। তাতে স্কোরবোর্ডে বিনা উইকেটে ৪২ রান তুলে দিন শেষ করে সফরকারীরা। আগামীকাল মঙ্গলবার টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে ১৪৩ রান করতে পারলেই টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হবে। কাজটা কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশ এখন যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে হার চিন্তা করাও বিরাট সম্ভাবনার অপমৃত্যু।

বাংলাদেশের আরেকটি টেস্ট জয়ের সম্ভাবনা জোরালো করে দিয়েছেন বোলাররা, পেস বোলাররা। রাওয়ালপিন্ডিতে তিন পেসার হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা ও তাসকিন আহমেদ যে ছন্দে বোলিং করেছেন তা বেঁধে দিয়েছে জয়ের সুর। প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রান করা পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৭২ রানে। হাসান টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পেয়েছেন পাঁচ উইকেট। নাহিদের শিকার চারটি। অপর উইকেটটি নেন তাসকিন। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ইনিংসে সবকটি উইকেট পেলেন পেসাররা। সঙ্গে জানিয়ে রাখা ভালো, বাংলাদেশের প্রথম পেসার হিসেবে হাসান পাকিস্তানের মাটিতে পেলেন ফাইফারের স্বাদ।

পেসারদের এই বীরত্বগাঁথায় প্রথম ইনিংসে ১২ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ লক্ষ্য পায় ১৮৫ রানের। চা-বিরতির আগে এবং পরে ৭ ওভার ব্যাটিং করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। জাকির হাসান কাউন্টার অ্যাটাকে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৩ বলে ৩১ রান তোলেন। রক্ষণাত্মক খেলে সাদমান ইসলাম তুলে নেন ৯ রান। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দিন শেষ করায় বড় কিছুর আশা নিয়ে আছে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে আরেকটি ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে নিজেদের টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় অর্জনের হাতছানি। জিততে পারলে প্রথমবার কোনো পূর্ণ শক্তির দলের বিপক্ষে দেশের বাইরে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পাবে বাংলাদেশ।

বিদেশে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের একমাত্র সিরিজ জয়টি ছিল ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির খেলোয়াড়দের মিলিয়ে দল সাজিয়েছিল ক্যারিবীয়ানরা। এবার পাকিস্তান খেলছে পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে। নিশ্চিতভাবেই এই সিরিজের অর্জন ছাড়িয়ে যাবে অতীতের ইতিহাস। যেখানে লিখা হবে নতুন অধ্যায়। লিখা হবে নতুন বীরত্বগাঁথা। সমকাল তো বটেই, মহাকালেও ঠাঁই পাবে এই অর্জন।

আগের দিন হাসান দুই উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিলেন। সোমবার চতুর্থ দিন সকালে সায়েম আইয়ুব ও শান মাসুদ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দিনের শুরুর আধা ঘণ্টা তারা নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন। তাদের ফেরাতে প্রয়োজন ছিল বিশেষ কিছুর। অধিনায়ক শান্ত ফিল্ডিংয়ে সেই কাজটা করে দেন। তাসকিনের হাফভলি বল ড্রাইভ করেছিলেন সাইম। মিড অফে ফিল্ডিং করা শান্ত বামদিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ তালুবন্দি করেন। প্রথম টেস্টে বাবর আজমকে ফিরিয়েছিলেন নাহিদ রানা। পুরোনো বলে গতির ঝড় তুলেছিলেন। বাবর আসতেই শান্ত বোলিংয়ে ফেরান নাহিদকে। ম্যাচের মোড় পাল্টে যায় তার করা তিন ওভারে। প্রথম শান মাসুদকে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে তালুবন্দি করান। এরপর বাবর আউট হন স্লিপে সাদমানের হাতে ক্যাচ দিয়ে। সৌদ শাকিল টিককে পারেননি। লিটনের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজঘরে।

নাহিদ উইকেট পেতে পারতেন আরও একটি। রিজওয়ান স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন প্রথম বলেই। কিন্তু সাদমানের হাত ফসকে তা বেরিয়ে যায়। ৮১ রান তুলতেই পাকিস্তান হারায় ৬ উইকেট। সেখান থেকে তারা বেশিদূর যেতে পারবে না বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যান রিজওয়ান ও আগা সালমান। রিজওয়ান আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ৪৩ রান যোগ করেন। সালমান শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থেকে করেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৭ রান। দুজনের এই প্রতিরোধ হাসান মাহমুদ ভাঙলে পাঁচ উইকেট পাওয়ার পথে এগিয়ে যান। শেষমেশ নাহিদকে টপকে মীর হাজমার উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফারের স্বাদ পান ডানহাতি পেসার।

সম্মিলিত আরেকটি পারফরম্যান্সে টেস্টে আরও একটি সুন্দরতম দিন কাটিয়েছে বাংলাদেশ। মাঠের বাইরে নানা কারণে এই টেস্ট সিরিজ ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। অথচ মাঠের ভেতরে সেসবকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে ব্যাট-বলে সমানতালে পারফরম্যান্স করেছেন ক্রিকেটাররা। এখন কেবল শেষটা রঙিন করার পালা। সিরিজ জিততে ১৪৩ রান প্রয়োজন। ইতিহাস গড়ার খুব কাছে গিয়ে নিশ্চয়ই ক্রিকেটাররা হতাশ করবেন না, এমনটাই প্রত্যাশা ক্রিকেটপ্রেমিদের।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort