মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

আলো ঝলমলে রাতে বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন বরিশাল

  • আপডেট সময় শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪, ৩.৪৪ এএম
  • ৮৯ বার পড়া হয়েছে

এক প্রতিযোগিতায় বরিশালের কত নাম। বরিশাল বার্নার্স দিয়ে শুরু। এরপর বরিশাল বুলস এলো। সবশেষ ফরচুন বরিশাল। প্রতিটি নামে আগের নয় আসরে একবার হলেও বিপিএল ফাইনাল খেলেছে বরিশাল। বরিশাল বার্নার্স প্রথম আসরে। বলিশাল বুলস তৃতীয় এবং ফরচুন বরিশাল অষ্টম আসরে। কিন্তু শিরোপায় চুমু খাওয়া হয়নি একবারও। নয় আসরে যে শিরোপা বরিশালের ছিল আরাধ্য, দশম আসরে তা পূর্ণ হলো।

বিপিএলের সফলতম দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দশম আসরের শিরোপা জিতে নিলো ফরচুন বরিশাল। হ্যাটট্রিক শিরোপার আশায় থাকা কুমিল্লার পথ আটকে গেল শুক্রবারের ফাইনালে। যেখানে ব্যাটে-বলে ও ফিল্ডিংয়ে অভূতপূর্ব পারফরম্যান্সে বরিশাল জিতে নিয়েছে প্রথম শিরোপা।

শুধু বরিশাল নয়, দেশের ক্রিকেটের দুই ধ্রুবতারা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমের অপেক্ষাও ঘুচল। বিপিএলের সবকটি আসর খেলেও মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ শিরোপা পাননি। একাধিক ফাইনাল খেললেও রানার্স-আপ হয়ে বিজয় উল্লাস দেখেছেন তারা। আজ মিরপুরে শোনা গেল তাদের গগণবিদারী চিৎকার। সঙ্গে অধিনায়ক তামিম ইকবাল পেলেন দ্বিতীয় শিরোপা। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম।

এদিন টস জিতে বরিশাল কুমিল্লাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে ম্যাচটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ৬ উইকেটে ১৫৪ রানের বেশি করতে পারেনি কুমিল্লা। লক্ষ্য তাড়ায় বরিশাল ম্যাচ জিতে নেয় অতি সহজে ৬ বল হাতে রেখে। তাদের জয়ের নায়ক কাইল মায়ার্স। বোলিংয়ে ২৬ রানে ১ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমে ৩০ বলে ৪৬ রান করে পার্থক্য গড়ে দেন।

ম্যাচটা তামিম টস জিতেই জিতে নিয়েছিলেন কিনা সেটা বিরাট প্রশ্ন। মিরপুরে এবারের আসরে আগের ২১ ম্যাচের ১৭টিই টস জেতা দল ম্যাচ জিতেছে। আর টস জিতে প্রতিপক্ষকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে লক্ষ্য নাগালে রেখে ম্যাচ জিতে নেওয়ার ঘটনা ষোলোটি। ফাইনালে এই সমীকরণটাই যেন সত্য হলো। পরিসংখ্যান কখনো কখনো নিশ্চিত ধাঁধায় ফেলে দেয়!

ম্যাচের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহূর্ত ছিল প্রথম ইনিংসে সাইফ উদ্দিনের করা ২০তম ওভার। আগের ওভারে জেমস ফুলারকে তিন ছক্কা হাঁকিয়ে আন্দ্রে রাসেল চেনা রূপে। যার একটি ৯৮ মিটারের, এবারের বিপিএলের দীর্ঘতম। শেষ ওভারে সাইফ উদ্দিনের ওপর কি যাবে তা অনুমান করা যাচ্ছিল। কিন্তু ডানহাতি পেসার সব হিসেব পাল্টে দেন। ওয়াইড ওয়ার্কার, লো ফুলটস, টো বরাবর ইয়র্কার দিয়ে স্রেফ মুগ্ধতা ছড়ান। কোনো বাউন্ডারি হজম না করে মাত্র ৭ রান দিয়ে কাজের কাজ করে দেন।

ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকে ভুগেছে কুমিল্লা। পাওয়ার প্লে’তে ৪৯ রান তুললেও টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে ফেরেন তেমন কিছু না করেই। সুনীল নারিন ব্যাটিংয়ে টানা ব্যর্থ। ৫ রান করে স্বদেশি ম্যাকয়ের দুর্দান্ত ক্যাচে আউট হন। চার ম্যাচে একটি শূন্যসহ তার রান কেবল ৩৬।

আগের ম্যাচে ১৪৩ রানের জুটি গড়ে দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন লিটন ও তাওহীদ। তাদের ব্যাটে সেরকম আভাস পাওয়া গিয়েছিল। তাওহীদ ডাউন দ্য উইকেটে এসে দুই চার পান সাইফ উদ্দিন ও মায়ার্সের বলে। লিটন স্লগ সুইপে তাইজুলকে হাঁকান চার। কিন্তু পথ ভুলে তারাও ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন যথাক্রমে ১৬ ও ১৫ রান করে।

শেষ আসরে কুমিল্লার ফাইনালের নায়ক ছিলেন জনসন চার্লস। আগেভাগে ব্যাটিংয়ে নেমে পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিলেন। কিন্তু ক্যারিবিয়ান হার্ডহিটার দলের ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে নিজেও ছিলেন নিষ্প্রভ। ২ ছক্কায় ১৫ রানে তামিমের হাতে ক্যাচ দেন।

মিডল অর্ডারে মঈন আলী ভরসা হলেও পয়েন্ট থেকে মিরাজের দুর্দান্ত এক থ্রোতে কুমিল্লা হারায় পঞ্চম ব্যাটসম্যানকে। স্কোরবোর্ডে রান তখন ৭৯। ওখান থেকে খেলায় চলে আসে ধীর গতি। জাকের আলী ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন বরিশালের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তেমন কিছু করতে পারেননি। বল আর রানের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য গড়তে পারেনি তারা। দুজনের জুটি থেকে আসে ২৯ বলে ৩৬ রান। সাইফ উদ্দিনের বলে অঙ্কন আউট হলে ভাঙে তাদের প্রতিরোধ। ৩৫ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় অঙ্কন ৩৮ রান করেন।

তার বিদায়ে ক্রিজে আসেন আন্দ্রে রাসেল। তবে রাসেল একটু দেরি করেই ক্রিজে এলেন কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। ২০ বল বাকি থাকতে মাঠে নেমে ১২ বল খেলেছেন। ৪ ছক্কায় ২৭ রানের বেশি করতে পারেননি। আরও ৪ রান স্কোরবোর্ডে যুক্ত করার সুযোগ ছিল। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল দিয়ে রান নিতে আগ্রহ দেখাননি হার্ডহিটার। ১৯২.৮৫ স্ট্রাইক রেটে যে ইনিংসটি খেলেছেন তা সময়ের তুলনায় পর্যাপ্ত ছিল না। তার সঙ্গে অপরাজিত থাকা জাকের আলীও শেষের দাবি মেটাতে পারেননি। ২৩ বলে ২০ রান করেছেন মাত্র ২ বাউন্ডারিতে।

বরিশালের বোলাররা ছিলেন নিয়ন্ত্রিত। ৪ ওভারে ৪৩ রানে ২ উইকেট নেওয়া জেমস ফুলার নিজের শেষ ওভারে কেবল ২১ রান দিয়েছিলেন। নয়তো স্কোরবোর্ডটা সুন্দর দেখাত। দুর্দান্ত শেষ ওভার করা সাইফ উদ্দিন ৩৭ রানে পেয়েছেন ১ উইকেট। এছাড়া মায়ার্স ও ম্যাকয় পেয়েছেন ১টি করে উইকেট।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তামিমের প্রতি আক্রমণ ও মিরাজের জমাট ব্যাটিং বরিশালকে এগিয়ে নেয়। উদ্বোধনী জুটিতে ৮ ওভারে ৭৬ রান তুলে নেন দুজন। তানভীরকে দ্বিতীয় ওভারে টানা দুই ছক্কা হাঁকান তামিম। মঈন আলীর এক ওভারে এক ছক্কা ও দুই বাউন্ডারি মেরে দর্শক মাতিয়ে রাখেন বাঁহাতি ওপেনার। তবে ওই ওভারেই তাকে বিদায় নিতে হয়। ২৬ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৩৯ রান করে তামিম সর্বোচ্চ ৪৯২ রান করে বিপিএল শেষ করেন। তার সঙ্গে এই প্রতিযোগিতায় থাকা তাওহীদ হৃদয় করেন ৪৬২ রান।

তামিম ও মিরাজের শুরুর ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বরিশাল শুরুতেই এগিয়ে যায়। পরে মুশফিক ও মায়ার্সের জুটি জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। ৪২ বলে ৫৯ রান করেন তারা। যেখানে মুশফিকের অবদান কেবল ১৩। মায়ার্স ৪৬ রান করে গড়ে দেন ব্যবধান। শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে তারা দুজন জয় নিশ্চিত করতে পারেননি অবশ্য। মিলার ডিপ কভার দিয়ে চারে মেরে নিশ্চিত করেন দলের শিরোপা। তখন ক্রিজে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বল বাউন্ডারির দড়িতে চুমু খাওয়ার আগেই বরিশালের ক্রিকেটাররা মাঠে ঢুকে শুরু করে দেন উল্লাস। বিপিএলের শিরোপা জয়ের আনন্দ কতটা বোঝা যাচ্ছিল ওই উন্মাদনাতেই।

ফাইনালের রাতে মিরপুর শের-ই-বাংলার গ্যালারি ছিল হাউসফুল। দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে দেখা গেছে প্রচুর দর্শককে। জার্সির রং একই হওয়ার কারণে মাঠে দুই দলকে আলাদা করা যায়নি। গ্যালারিতেও সমর্থকদের আলাদা করা যায়নি। ম্যাচের উন্মাদনাতে বুঁদ হয়ে ছিল গোটা গ্যালারি। শেষ পর্যন্ত বরিশালের আনন্দ দ্বিগুণ হয়েছে। ভিক্টোরি ল্যাপ দিয়ে সমর্থকদের প্রতি ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছেন তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, মিরাজরা। শিরোপা জিতে মায়ার্স, মিলারদের মুখের হাসিও চওড়া হয়েছে।

৪৩ দিন ও ৪৬ ম্যাচের পর পর্দা নামলো বিপিএলের দশম আসরের। সাত দলের প্রতিযোগিতা শেষ হলো আলো ঝলমলে রাতে। যেখানে শেষ জয়গান গেয়েছে বরিশাল। বেজেছে তাদের থিম সং, ‘চেইতা গেলে রক্ষা নাই, কলিজা ভরা সাহস ভাই… আমরা ফরচুন বরিশাল…।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort