রুদ্রবার্তা২৪.নেট: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হাশেম ফুড লিমিটেডের ছয়তলা ভবনটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ভবনের কিছু অংশ ধেবে গেছে, ফাটল ধরেছে আরও কিছু অংশে। সম্ভবনা রয়েছে ভবন ধসে পড়ার।
শনিবার (১০ জুলাই) সকাল ১১টায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের ভবনের ষষ্ঠ তলায় কাজ করতে দেখা যায়। পানি ছিটিয়ে ডাম্পিংয়ের কাজ করছেন তারা। খুঁজে দেখছেন আরও কোনো মৃতদেহ আছে কিনা। বেলচা ও কোদাল দিয়ে মৃতদেহ খুঁজতে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক তানহার প্রেস নারায়ণগঞ্জকে বলেন, গতকাল শুক্রবার দুপুরে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে আগুন থেকে বাঁচতে ভবন থেকে ঝাপিয়ে পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। নতুন করে কোনো মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। তবে তারা খুঁজে দেখছেন আর কারও মরদেহ পাওয়া যায় কিনা। একই সাথে পানি ছেটাচ্ছেন ভবনের প্রতিটি তলায়। যাতে নতুন করে কোথায়ও আগুনের সৃষ্টি না হয়।
ভবনের কিছু অংশ ধেবে গেছে এবং ফাটল দেখা দিয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ভবনের ষষ্ঠ তলা ও ছাদের কিছু অংশ ধেবে গেছে। ধসে পড়েছে ষষ্ঠ তলার একটি অংশ। ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে বলে জানান তিনি।
সকালে পুরো ভবন ঘুরে দেখা যায়, ছয়তলা ভবনটির উত্তর-পশ্চিম পাশে একটি সিড়ি এবং দক্ষিন-পূর্ব পাশে আরেকটি সিড়ি রয়েছে। দু’টো সিড়িই ভবনের ছাদে গিয়ে শেষ হয়। ছাদে সরেজনিনে দেখা যায়, সেখানে আগুনে পোড়ার চিহ্ন অনেকাংশে কম। দুই পাশের সিড়ির কিছু অংশে পোড়ার কারণে কালো হয়ে আছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক তানহার প্রেস নারায়ণগঞ্জকে জানান, দক্ষিন-পূর্ব পাশের সিড়িটি নেটের জাল দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া ছিল। আর উত্তর-পশ্চিম পাশের সিড়িতে জ্বলছিল আগুন। যার ফলে ভবনে আটকে পড়া শ্রমিকরা ছাদে উঠতে পারেননি। ছাদে ওঠার উপায় থাকলে অনেকের প্রাণ বাঁচানো যেত বলে মনে করেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সজীব গ্রæপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডস লিমিটেডের কারখানার ছয়তলার একটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান কারখানার ৫২ জন শ্রমিক-কর্মচারী। ফায়ার সার্ভিস ও বেঁচে ফেরা শ্রমিকদের দেওয়া তথ্যমতে, ভবনের নিচতলায় প্রথমে আগুন লাগে। নিচতলায় ছিল ফয়েল প্যাকেটসহ বিভিন্ন কার্টন। এসব সহজেই দাহ্য হওয়ার কারণে মুহুর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবনের অন্যান্য তলায়। শ্রমিকদের অভিযোগ, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পরই ভবনের দু’টি দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগেই কিছু শ্রমিক কারখানা থেকে বেরিয়ে যান। আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়লে ভীত-সন্ত্রস্ত শ্রমিকরা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন ভবন থেকে। এই ঘটনায় আহত দুই নারীকে রাতেই পার্শ্ববর্তী ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যান তারা। পরে গুরুতর আহত আরও এক পুরুষ শ্রমিক মারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ৫টা ৪২ মিনিটে তারা অগ্নিকান্ডের খবর পান। ৩০ মিনিটের মধ্যেই তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এর আগেই আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই ২৫ জন শ্রমিককে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছিলেন তারা। দুপুর দেড়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেন তারা। অধিকাংশ মরদেহ ছিল ভবনের চতুর্থ তলায়।