আমার সামনে যে ধাক্কা আসছে, আমার পরিবারের মানুষের কবরের উপর শ্মশানের মাটি দেখে সেদিন আমার বুকে ব্যাপক কষ্ট ছিল। এ কষ্টে হয়তো সেদিন আমিও পরপারে চলে যেতাম। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের কবর এখনো চেনার উপায় নেই।
বাবা-মা, ভাই একসাথে মারা গেলে যেমন কষ্ট হয়, আমারো একই অনুভূতি হয়েছিল। আমি সেদিন চাইলে নারায়ণগঞ্জ জ্বালাতে পারতাম। কিন্তু ধৈর্য্য ধরেছি।
মঙ্গলবার (২১ জুন) বিকালে চাষাড়ায় শিশু একাডেমির জেলা অফিসের হল রুমে নারায়ণগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিশনের নব গঠিত কমিটির সদস্যরাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় নব গঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দ শামীম ওসমানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
শামীম ওসমান সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, কবরের পরিস্থিতি দেখার পর থেকে জেলায় বেশি আসতাছি না। কারণ কখন কি বলে বসি, ঠিক নাই। তবে কিছু সাংবাদিক আমাকে রাগান্বিত করার জন্য বিভিন্ন কথা বলে।
আমার দলকে ও আমাকে রাগান্বিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি রাগব না, কারণ আমি বিষ খেয়ে হজম করার চেষ্টা করছি। কিছু ভাইকে মেসেজ দিতে চাই।
রাজাকারের ছেলে নাকি মুক্তিযোদ্ধার সেই কথা বলব না। যতই রাগান্ত্বিত করার চেষ্টা করেন, পারবেন না। যা আশা করছেন, তা এবার পাবেন না। কিন্তু আমি রাগান্বিত না হলেও নারায়ণগঞ্জের মানুষ রাগান্বিত হলে, কারো
জন্য ভালো হবে না। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা বিষ খেয়ে হজম করতে পারলে আমি কেন পারব না। এটা খুব কষ্টের। করছি, যেন নারায়ণগঞ্জে শান্তি থাকে। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ এনেছি।
সাংসদ আরো বলেন, সামনে আমার আবারো লড়াই করতে হবে। এই বিষয়ে একটা সভাও ছিল। সেই সভা রেখে এখানে চলে এসেছি। সামনের সময়টা কঠিন সময়। রাজনীতি পরিবর্তন হচ্ছে।
কঠিন সময়ে একটা কথা বলতে চাই, ব্যক্তি স্বার্থে এখন পর্যন্ত রাজনীতি করি নাই। আগামীতেও করতে চাই না। তবে ভালো ও সুন্দর কাজ করতে চাই। সবাইকে নিয়েই করতে চাই।
এজন্যই অসুস্থ স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে সামাজিক কিংবা ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলাম। রির্টান কি পেয়েছি, তা সবাই দেখেছে। কাউকে দায়ী করিনি। তবুও একটা প্রেস রিলিজ দেখে কষ্ট পেয়েছিলাম।
আমি, আমার স্ত্রী ও আমার সন্তান চেষ্টা করছি অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে। ভবিষ্যতেও এই চেষ্টা অব্যহত থাকবে। এসব কাজে কোন আশা নেই। তবে শুনলাম বাংলাদেশে ‘মানবতার মা’ পদের নমিনিতে আমার স্ত্রীর নাম এসেছে।
সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, আমি অনেক ধাক্কা খেয়েছি, বোমা হামলায় পড়েছি। রাজনীতিতে এমনো হয়েছে, সামনে থেকে গুলি করেছে বাবুরাইলে । আমি আবার তাদের সাথে মিলেই আবার কাজ করেছি। আমি কিছু মনে রাখিনি। ১৯৯৬ সালে এমপি হওয়ার পর আমার সাথে দেখা করেছে, সব ভুলে গেছি।
সাংবাদিকতা হোক কিংবা রাজনীতি যখন ধাক্কা খাবেন, তখন একাই মুখোমুখি হতে হয়। মুখোমুখি হওয়ার সেই সাহসিকতা থাকলে সাংবাদিকতা করবেন, সাহসিকতা না থাকলে সাংবাদিকতা করবেন না।
ভাগ্য যদি বলে, সামনে কঠিন ঝড় আসছে, সড়ে যাও । তখন বলতে হবে, আমিই ঝড়, আমার সামনে ঝড় আসতে পারবে না। এই মানসিকতা থাকলে সাংবাদিক সাংবাদিকতা করতে পারে। আর আমিও রাজনীতি করতে পারি।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের জেলা প্রতিনিধি আবদুস সালাম, বাংলাভিশনের জেলা প্রতিনিধি আফজাল হোসেন পন্টি, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের স্টাফ করস্পোনডেন্ট আহসান সাদিক, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি আনিসুর রহমান জুয়েল, সময় টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি শওকত আলী সৈকত, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি হাসান উল রাকিব, মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি আজমীর ইসলাম, দেশ টিভির জেলা প্রতিনিধি বিল্লাল হোসেন, নিউজ টুয়েন্টিফোর এর রুপগঞ্জ প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম হানিফ, মাইটিভির সোনারগাঁ প্রতিনিধি আসাদুজ্জান নূর, আরটিভির সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি শাহাদাত হোসেন স্বপন, বাংলাভিশন এর সোনারগাঁ প্রতিনিধি মো: আল আমিন, বিজয় টিভির সোনারগাঁ প্রতিনিধি দ্বীন ইসলাম অনিক প্রমুখ।