ভেন্যু পাল্টেছে, বদলেছে খেলার সংস্করণও। তবে সিলেটে ওয়ানডেতে যে আগ্রাসী ক্রিকেটের ব্যান্ড দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশ দল তা অক্ষুন্ন থাকল চট্টগ্রামেও। লিটন দাস ও রনি তালুকদারের দুই শ ছাড়ানো স্ট্রাইক রেট ব্যাটিং পাওয়ারপ্লেতে চার-ছক্কায় বৃষ্টি বইয়ে তুলল রেকর্ড ৮১ রান। বড় রানের ভিতটা পেয়ে যায় ওই ৬ ওভারেই। সেটি কাজে লাগিয়ে ১৯.২ ওভারে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ২০৭ রান করে, যা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি স্কোর ২১৫ রানের রেকর্ডও ছাড়িয়ে যেতে পারত। কিন্তু ৪ বল বাকি থাকতে হানা দিল বৃষ্টি। দুই ঘণ্টার বেশি খেলা বন্ধ থাকার পর খেলা মাঠে গড়ালো তবে বাংলাদেশ আর ব্যাটিংয়েল সুযোগ পেল না। পরে বৃষ্টি আইনে পাওয়া লক্ষ্য আর মেলাতে পারেনি আয়ারল্যান্ড।
গতকাল চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ডিএলএস মেথডে আয়ারল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে ১৯.২ ওভারে ৫ উইকেটে ২০৭ রান তোলে স্বাগতিকরা। বৃষ্টি আইনে সফরকারীদের লক্ষ্য ছিল ৮ ওভারে ১০৪। প্রথম দুই ওভারে ৩২ রান তুললেও এরপরে দিক হারিয়ে ফেলে তারা। ৮ ওভারে পরে ৫ উইকেটে তুলতে পারে ৮১ রান। বাংলাদেশের মাটিতে ম্যাচটি শততম টি-টোয়েন্টি। উপলক্ষ্যটিও দারুণভাবে রাঙাল সাকিব আল হাসানের দল। তাতে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের শুরুটা করেছেন লিটন। ইনিংসের প্রথম ওভারেই আইরিশ অফ স্পিনার হ্যারি টেক্টরকে পেয়ে লং অন বাউন্ডারি দিয়ে বিশাল ছক্কা মারেন। বাংলাদেশের ইনিংস কেমন হতে পারে, সেটি অনুমান করা যাচ্ছিল লিটনের ওই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে মারা ছক্কায়। এরপর যে-ই বোলিংয়ে এসেছেন, সে-ই লিটনের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের শিকার হয়েছেন। একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, মোহাম্মদ আশরাফুলের দ্রুততম টি-টোয়েন্টি ফিফটির (২১ বল) রেকর্ড ভাঙবেন লিটন। শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। ২৩ বল খেলে ৪৭ রান করে ক্রেগ ইয়ংয়ের বলে আউট হন তিনি। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিল লিটনের ২০৪ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে। তিনি যখন আউট হন, তখন বাংলাদেশের রান ৭.১ ওভারে ১ উইকেটে ৯১।
সেখান থেকে বাংলাদেশকে বেশি দূর এগিয়ে নিতে পারেননি নাজমুল হোসেন। তিনে নেমে ১৩ বল খেলে ১৪ রান করে আউট হন তিনি। টেক্টরের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন। তবে আরেক ওপেনার রনি খেলে গেছেন তার সহজাত গতিতে। লিটন ফিফটি না পেলেও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পেয়েছেন তিনি। মাঠের চারপাশে ছিল তার বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের ছাপ। বিশেষ করে গুড লেংথের বলে রনি ছিলেন বিধ্বংসী। মিড অন, মিড অফের মাথার ওপর দিয়ে বেশ কয়েকটি বাউন্ডারি মেরেছেন। নিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটি করেছেন ২৪ বল খেলে, ৬টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল রনির ২০৮ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে। ফিফটির পর অবশ্য রানের গতি কিছুটা কমেছে। গ্রাহাম হিউমের বলে বোল্ড হওয়ার আগে রনির ব্যাট থেকে এসেছে ৩৮ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৭ রান।
রান রেট ১০-এর নিচে নামতে দেননি শামীম হোসেনও। মাঝের ওভারে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস। ২টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল শামীমের ইনিংসে। শেষের দিকে সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে আরও ২০ রান। সাকিবের ছোট্ট ইনিংসটাও এসেছে দ্রুতগতিতে (১৩ বল)।
পরে বোলিংয়েও কাজটা ছিল কঠিন। ম্যাচের ব্যপ্তি ছোট হয়ে এলে অনেক সময় তা সামলানো কঠিন। সেই কাজটা তাসকিন করলেন দারুণভাবে। মাত্র ১৬ রান দিয়ে নিলেন ক্যারিয়ার সেরা ৪ উইকেট। ৮ ওভারে আইরিশদের করতে হতো ১০৪ রান। ওভার প্রতি ১৩ রান করে নেওয়ার লক্ষ্যে প্রথম দুই ওভারে ৩২ নিয়ে নেয় আয়ারল্যান্ড। কিছুটা তখন ভয়ই ধরছিল বাংলাদেশের। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ ওভারে এসে খেলার পরিস্থিতি বদলে দেন হাসান ও তাসকিন। হাসান তার প্রথম ৪ বলে কোন রান না দিয়ে বোল্ড করেন রস অ্যাডায়ারকে। ওই ওভারে তিনি দেন মাত্র ৫ রান। তাসকিন পরের ওভারে ধরেন তিন শিকার। লোরকান টাকার ও স্টার্লিংকে বোল্ড করে দেন তিনি। জর্জ ডকরেলকে বানান ক্যাচ। ৪ ওভারে ৪০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে আয়ারল্যান্ড।
ক্রমশ নাগালের বাইরে চলে যাওয়া লক্ষ্য পরে আর মেলাতে পারেনি তারা। হ্যারি টেক্টর, গ্যারেথ ডেলানিরা রান বাড়ালেও প্রত্যাশিত গতি ছিল না। তাসকিন নিজের শেষ ওভারেও হানা দেন। টেক্টরকে তুলে নিয়ে পুরো করেন ৪ উইকেট। ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে ৩২ রান করতে হতো আয়ারল্যান্ডকে, তারা তুলতে পারে ¯্রফে ৯ রান।