এই ম্যাচে জিতে অস্ট্রেলিয়ার সামনে সুযোগ ছিল সেমিফাইনাল নিশ্চিতের। তাতে আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তবে শেষমেশ আর আশা পূর্ণ হলো না। আফগানিস্তানের দুর্দান্ত বোলিং-ফিল্ডিংয়ের কাছে হার মানতে হলো অজিদের। ২১ রানের জয়ে সেমির স্বপ্ন বেঁচে রইলো আফগানদের। সেই সঙ্গে সেমিফাইনালের জন্য অপেক্ষা বাড়লো মিচেল মার্শের দলের।
রোববার (২৩ জুন) কিংসটাউনে আর্নস ভ্যালে স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইব্রাহিম জাদরান ও রহমানুল্লাহ গুরবাজের ফিফটিতে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৮ রান করে আফগানিস্তান। জবাব দিতে নেমে আফগানিস্তানের বোলিং তোপে ও দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে ১২৭ রানেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
রান তাড়ায় নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। নাভিন-উল-হকের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই ট্রাভিস হেডকে শূন্য রানে ফেরান নাভিন। ফুল লেংথে পিচ করা বলটা বুঝতেই পারেননি হেড। মারাত্নক সুইং করে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে ভেতরে ঢুকে যায় বল, এলোমেলো হয়ে যায় স্টাম্প।
হেডের বিদায়ে ক্রিজে আসেন মিচেল মার্শ। ফারুকির করা দ্বিতীয় ওভারে দুই চারে পরিবেশ কিছুটা হালকা করার চেষ্টা করেন মার্শ। তবে নাভিনের পরের ওভারেই আক্রমণ করতে গিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। আফগান পেসারের স্লোয়ার ডেলিভারি হাঁকাতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন ১২ বলে ৩ রান করা অজি অধিনায়ক। অনায়াসে বল তালুবন্দি করেন মিড অফে দাঁড়ানো মোহাম্মদ নবী।
এরপর ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ডেভিড ওয়ার্নার। তবে পাওয়ারপ্লে’র শেষ ওভারেই বাধে বিপত্তি। নূর আহমেদের লেগ স্পিনে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্প হারান ৩ রান করা ওয়ার্নার। পাওয়ারপ্লে’তে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ৩৩-৩!
ওয়ার্নারের বিদায়ে ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে এসে জুটি বাঁধেন মার্কাস স্টয়নিস। দুজন মিলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। একদিকে ধরে খেলছিলেন স্টয়নিস, অন্যপ্রান্তে মারদাঙ্গা মেজাজে ব্যাট চালান ম্যাক্সওয়েল। ১০ ওভারে অজিদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেট হারিয়ে ৭০ রান। পরের ওভারেই চড়াও হতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন স্টয়নিস।
গুলবাদিন নাইবের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে রহমানুল্লাহ গুরবাজের হাতে ধরা পড়ে শেষ হয় স্টয়নিসের ইনিংস। আউট হওয়ার আগে বল নষ্ট করে ১৭ বলে ১১ রানের ইনিংস খেলেন স্টয়নিস। এরপর ক্রিজে আসেন টিম ডেভিড। তবে অজি হার্ডহিটারকে টিকতে দেননি গুলবাদিন। ২ বলে ৪ রান করে আফগান পেসারের ফাঁদে পা দিয়ে উইকেট ছুঁড়ে আসেন ডেভিড।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলের মাঝেই ব্যক্তিগত ফিফটি করেন ম্যাক্সওয়েল। গুলবাদিনকে ছক্কা হাঁকিয়ে ৩৫ বলে পঞ্চাশের দেখা পান অজি তারকা। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পার হয় দলীয় একশ। তবে ইনিংসটা টেনে নিতে পারেননি ম্যাক্সি। পঞ্চাদশ ওভারের চতুর্থ বলে গুলবাদিনকে হাঁকাতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে নূরের হাতে বন্দি হয়ে শেষ হয় তার ৪১ বলে ৫৯ রানের ইনিংস। যাতে ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছয়ের মার।
ম্যাক্সওয়েল আউট হতেই যেন শনির দশা ভর করে অজি ব্যাটারদের ভাগ্যে। রশিদ খানের বলে করিম জানাতকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৫ রান করা ম্যাথু ওয়েড। এরপর গুলবাদিন ফেরান ৩ রান করা কামিন্সকে। একই পথ ধরে ফিরে যান ২ রান করা আগার। দুর্দান্ত ক্যাচে তাকে ফেরান গুলবাদিন। তাতে পথ আরও কঠিন হয়ে যায় অজিদের জন্য। আলিঙ্গন করতে হয় হারের বেদনা।।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই অ্যাস্টন আগারকে চার মেরে শুরু করেন গুরবাজ। এরপর দেখেশুনে খেলতে থাকেন গুরবাজ ও ইব্রাহিম। দুজন মিলে কোনো উইকেট না হারিয়ে পাওয়ারপ্লে’তে তোলেন ৪০ রান। এ নিয়ে চলতি বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বার অস্ট্রেলিয়া পাওয়ারপ্লে’তে কোনো দলের উইকেট নিতে ব্যর্থ হলো। এর আগে ইংল্যান্ড তাদের বিপক্ষে ওপেনিং জুটিতে তুলেছিল বিনা উইকেটে ৫৪ রান।
পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার পরও উইকেট আগলে রানের চাকা সচল রাখেন গুরবাজ ও ইব্রাহিম। দুজনের জুটিতে অষ্টম ওভারে দলীয় পঞ্চাশ পার করে অস্ট্রেলিয়া। তাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে ৫০ বা ততোধিক রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়ার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে ভাগ বসান গুরবাজ-ইব্রাহিম। দুজন চলতি বিশ্বকাপে ৩টি পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি গড়েছেন। তাদের আগে এই কীর্তি রয়েছে আরও ৫ জুটির।
দেখেশুনে খেলে ১০ ওভারে আফগানিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৬৪ রান। এরপরই চড়াও হতে শুরু করেন দুজন। চর্তুদশ ওভারের দ্বিতীয় বলে জশ হ্যাজেলউডকে চার মেরে দলকে শতরানের ঘর পার করেন ইব্রাহিম। একই সঙ্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে কোনো একক আসরে সর্বোচ্চ শতরানের জুটি গড়ার দিকে দিয়ে শীর্ষস্থান দখল করেন গুরবাজ-ইব্রাহিম। দুজন মিলে চলতি আসরে তিনটি শতরানের জুটি গড়েছেন।
রেকর্ড গড়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পথে পঞ্চাদশ ওভারের তৃতীয় বলে আগারকে ঠেলে ১ রান নিয়ে ফিফটি পূরণ করেন গুরবাজ। তার ৪৪ বলের ইনিংসে ছিল চারটি চার ও তিনটি ছক্কার মার। একই পথ ধরে পরের ওভারে ব্যক্তিগত পঞ্চাশের দেখা পেয়ে যান ইব্রাহিমও। ৪৫ বলে ৬ চারে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলেন তিনি।
ষোড়শ ওভারের পঞ্চম বলে মার্কাস স্টয়নিসকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে হাঁকাতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে ধরা পড়েন গুরবাজ। আউট হওয়ার আগে সমান চারটি করে চার-ছক্কায় ৪৯ বলে ৬০ রান করেন তিনি। গুরবাজের বিদায়ে ক্রিজে আসেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। তবে তাকে টিকতে দেননি জাম্পা। ৩ বলে ২ রান করে ফিরে যান ওমরজাই।
এরপর ইব্রাহিমকেও বিদায় করেন জাম্পা। মিচেল মার্শের ক্যাচ বানিয়ে ইরাহিমকে ফেরান এই লেগ স্পিনার। আউটের আগে ৪৮ বলে ৬ চারে ৫১ রান করেন ইব্রাহিম। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে আফগানিস্তান। স্রোতে গা ভাসিয়ে ২ রান করে বিদায় নেন রশিদ খানও। আফগান অধিনায়ককে ফেরান প্যাট কামিন্স।
রশিদকে ফেরানোর এক ওভার পর বোলিংয়ে এসে আবারও ভেলকি দেখেন কামিন্স। এবার তার শিকার করিম জানাত (১৩) ও কোনো রান না করা গুলবাদিন নাইব। সেই সঙ্গে আসরের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক আদায় করে নেন কামিন্স। টানা তিন উইকেট নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এক আসরে টানা দুই হ্যাটট্রিক করা একমাত্র বোলার হলেন এই অজি পেসার।