শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন

সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল মেয়র আইভী

  • আপডেট সময় রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪.৪০ এএম
  • ২২৩ বার পড়া হয়েছে

রুদ্রবার্তা২৪.নেট: নারায়ণগঞ্জ শহরে মশক নিধনে নতুন কর্মপরিকল্পনায় সফলতা পেয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক)। বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছরে শহরে মশার উৎপাত কম বলে দাবি তাদের। এই দাবির সাথে দ্বিমত নেই নগরবাসীরও। একই সাথে সিটি এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অতি নগন্য। চলতি বছর সিটির তিনজন বাসিন্দা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে। স্বাস্থ্য বিভাগও বলছে, রোগীর সংখ্যাই সিটি কর্পোরেশনের কাজের সফলতার প্রমাণ দেয়।
মশক নিধনে কাজ করে নাসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ। এই বিভাগের কর্মকর্তা আলমগীর হীরণ জানান, ২০১৯ সালে রাজধানী ঢাকার সাথে সাথে নারায়ণগঞ্জেও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি এলাকায় বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। তখন মশক নিধনে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। মশক নিধন কার্যক্রমে বাজেট ও জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন কর্মপরিকল্পনায় টানা এক বছর কাজ করার পর চলতি বছরে সফলতা পেয়েছেন তারা।
নাসিকের দেওয়া তথ্যমতে, নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য মাত্র ৩০ জন কর্মী ছিল। অপ্রতুল কর্মী নিয়ে এই কার্যক্রম পরিচালনায় নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। পরে মেয়র আইভীর নির্দেশে প্রতি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে পাঁচজন করে একটি মশক নিধন টিম গঠন করা হয়। এছাড়া ৪০ জনের একটি বিশেষ টিমও রয়েছে নাসিকের। অন্য বছরগুলোতে বর্ষাকালকে কেন্দ্র করে মশক নিধন কার্যক্রম চলতো। তবে গত দু’বছর যাবৎ কোনো নির্দিষ্ট মৌসুমকে কেন্দ্র করে নয় সারাবছরই মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে নাসিক। দৈনিক সকালের রোদ প্রখর হওয়ার আগেই এই কার্যক্রম চালায় কর্মীরা। মশক নিধন কার্যক্রমে বাজেটও বেড়েছে নাসিকের। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মশক নিধন খাতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। গত বাজেটে এই ব্যয় ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ। এর আগের বছর ব্যয় হয়েছে মাত্র সোয়া কোটি টাকা।
পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক শ্যামল পাল বলেন, উড়ন্ত মশা নিধনের চেয়ে লার্ভা ধ্বংসের দিকে বেশি জোর দিচ্ছেন তারা। লার্ভা ধ্বংস করা গেলে উড়ন্ত মশার উৎপত্তির সম্ভবনা থাকে না। এক্ষেত্রে কেরোসিন ও ফার্নেস ওয়েলের সংমিশ্রণে তৈরি এলডিও অর্থ্যাৎ লাইট ডিজেল ওয়েল ব্যবহার করা হয়। বাজারের সাধারণ লার্ভা ধ্বংসের ওষুধ অ্যাডালটিসাইডের তুলনায় এলডিও সস্তা ও কার্যকরী। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪০ হাজার লিটার এলডিও ছেটানো হয়। একই সাথে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে নিয়মিত ডেঙ্গু নিধন অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিভিন্ন সময় জরিমানা করে নগরবাসীকে সতর্কও করা হচ্ছে।
শুরুতে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুরো সিটি এলাকায় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে মশার উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করা হয়। পরে কাজ শুরু করেন তারা। গতবছর কোভিডকালীন সময়ে দুই-তিন শিফটেও কাজ করেছেন বলে জানান মশক নিধন কার্যক্রমের সুপারভাইজার নিজ্জল খন্দকার। তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, ফগার মেশিনেই কেবল মশা নিধন হয়। ফগার মেশিনে প্রচুর ধোয়া হয়। ফলে আমাদের কার্যক্রম মানুষের চোখে পড়ে। তবে বেশি কার্যকরী এলডিও। ডেঙ্গুবাহী মশার উৎপত্তিস্থলে এলডিও নিয়মিত ছেটানো হয় বলে ডিম পাড়ার আর সুযোগ থাকে না। তারপরও উড়ন্ত মশা নিধনে নিয়মিত ৬০টি ফগার মেশিন দিয়ে কাজ করেন কর্মীরা।’
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব বলছে, চলতি বছর পুরো জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে গত দুই মাসে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে তিনজন রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি এলাকার বাসিন্দা। রাজধানী ঢাকাতে যেখানে দৈনিক ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সেখানে ঢাকার পার্শ্ববর্তী শহর নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাই সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রমের সফলতার প্রমাণ দেয় বলছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ।
তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরের তুলনায় নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গু রোগী কম। যেহেতু রোগীর সংখ্যা কম সুতরাং সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রমের সফলতা আছে। তবে আরেকটু জোরদার করতে হবে। উড়ন্ত মশাও মারতে হবে। তবে উড়ন্ত মশাও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কম।’ নগরীর অন্তত দশজন বাসিন্দার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের মতেও, অন্যান্য বছরের তুলনায় মশার উপদ্রব কম। পাইকপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘অন্যান্য বছর এই সময় দরজা-জানালা খোলা যেত না। এই বছর অন্তত জানালা খুলে রাখা যায়।’
তবে মশক নিধন ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের এই কৃতিত্ব একার নয় বলছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটিতে সারা বছরব্যাপী মশার ওষুধ ছিটানো হয়। মানুষ ঘুম থেকে জাগার আগেই মশার ওষুধ সারা শহরে ছিটানো হয়। গতবছরও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কম ছিল। এর কৃতিত্ব ওয়ার্ড কাউন্সিলরদেরও। তাদের তত্ত¡াবধানে প্রতি ওয়ার্ডে টিম করে মশক নিধন কার্যক্রম চলেছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা নিয়মিত কাজ করছি। তারপরও মানুষের সচেতনতা আরও বেশি প্রয়োজন। নিজের বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখা, পানি জমতে না দেওয়ার দায়িত্ব সকলের। সকলে মিলে কাজ করলে মশক নিধন সম্ভব।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort