দীর্ঘদিন পর নির্বিঘ্নে বর্ধিত সভা করতে পেরে অনেকটা উজ্জীবিত বিএনপি নেতাকর্মীরা। ঐক্য আর সতর্কতার বার্তা নিয়ে ফিরেছেন তৃণমূলের নেতারা। বিএনপির শীর্ষ নেতাকে কাছে পেয়ে তৃণমূল নেতারা ক্ষোভ, স্থানীয় সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়েছেন।
তাদের ভাষ্যমতে, ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর দলে নিষ্ক্রিয় ও সুবিধাবাদী নেতাদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। তাদের ভিড়ে যেন দুর্দিনের ত্যাগী নেতারা হারিয়ে না যান। মৌসুমি নেতা ও বসন্তের কোকিলরা যাতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কোনোভাবেই মনোনয়ন না পান, সেদিকে হাইকমান্ডকে নজর রাখার অনুরোধ জানান তারা।
জবাবে হাইকমান্ড ঐক্যে গুরুত্বারোপ করে আগামী নির্বাচন নিয়ে সাবধানী বার্তা দিয়েছেন। সভায় কয়েকজন নেতা একসময়ের মিত্র জামায়াতের কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেন।
বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলের মাঠে বিএনপির এই বর্ধিত সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনিও ভার্চুয়ালি যুক্ত হন লন্ডন থেকে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ছয় স্তরের সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি নেতা এই বর্ধিত সভায় অংশ নেন।
দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সব কর্মকর্তা ও সদস্য, সব মহানগর, জেলা, থানা-উপজেলা-পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব রয়েছেন।
২০১৮ সালের পর অনুষ্ঠিত এই সভায় অনেকেই বক্তব্য রাখার আগ্রহ পোষণ করেন। তবে সময় স্বল্পতা এবং আগ্রহী অনেক বেশি হওয়ায় বক্তব্য দিতে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে বিএনপি। আগ্রহীদের মধ্য থেকে প্রথমে নাম জমা নেওয়া হয়। পরে লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় ভাগ্যবান বক্তব্যদানকারীর তালিকা।
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক সময়ের আলোকে বলেন, লটারির মাধ্যমে আমি বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। ৩ মিনিট সময় দেওয়া হয়। ৩ মিনিট পর মাইক বন্ধ হয়ে যায়। আমরা সবাই অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে বলেছি। কিছু লোকের জন্য যাতে দলের বদনাম না হয়। যারা বিগত লড়াই-সংগ্রামে অত্যাচারিত নিযাতিত হয়েছেন তাদের মূল্যায়ন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়রা পদ-পদবি নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যারা এতদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগসাজশ করে চলেছেন তারা এখন বড় পদে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এটা যাতে হতে না পারে। দলের পরীক্ষিত নেতারা যাতে মনোনয়ন পান সেদিকে নজদারি বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, জামায়াত নিয়ে অনেক নেতা সমালোচনা করে বক্তব্য রেখেছেন। জামায়াত এলাকায় বিএনপি নেতাদের নিয়ে যা-তা বক্তব্য দিচ্ছে। তাদের বিষয়ে সর্তক থাকার আহŸান জানিয়েছেন তারেক রহমান।
এক পর্যায়ে তিনি বলেন, একটি দল ইতিমধ্যে বেহেশের টিকেট বিক্রি করা শুরু করেছে। এতে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। ১০ জন ব্যক্তি ছাড়া কে বেহেশতে যাবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই ইসলাম ধর্মে। তবুও একটি দল বলে বেড়াচ্ছে তাদের সংগঠন করলে নাকি বেহেশতের টিকেট নিশ্চিত। এগুলো সস্তা রাজনীতি। কৌশলে মোকাবিলা করতে হবে।
একই সঙ্গে দলের হাইকমান্ড জনগণের সঙ্গে দলের ঐক্য মজবুত করে তুলতে জোর দেন।
বিএনপির সহসম্পাদক ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল সময়ের আলোকে বলেন, দলের হাইকমান্ডকে আমরা অনুরোধ করেছি যারা দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে ছিল তাদের যেন সামনে রাখা হয়। হঠাৎ কিছু নেতা দলের সুসময় দেখে সামনে চলে আসছে। তাদের জায়গা দেওয়া যাবে না। ত্যাগীরা যাতে সুবিধাবাদী ও মৌসুমিদের ভিড়ে হারিয়ে না যায়। আগামী নির্বাচনে যাতে যোগ্য রাজপথের পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করা হয়। কেননা নির্বাচনের আগে মৌসুমি নেতাদের ব্যাপক আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। এতে তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ মনোমালিন্য ও বিভেদ তৈরি হচ্ছে। এগুলোর দিকে নজরদারি বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, অপকর্মকারীরা যাতে পার না পায় সে জন্য কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।
কোনোভাবেই দলের সুনাম ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা যাবে না বলে নেতাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেন হাইকমান্ড।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবুল হাসেম ঢালী সময়ের আলোকে বলেন, অভ্যন্তরীণ অনেক কথা হয়েছে। ১০৫ জনের মতো নেতা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বিএনপি নিয়ে বেশি অপপ্রচার করছে জামায়াত। তৃণমূলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে জামায়াতের অপপ্রচার রুখে দিতে হবে। মৌসুমি পাখি, বসন্তের কোকিলরা এখন বেশি চাঁদাবাজি করছে। তাদের রুখে দিতে হবে।
সরকারের সমালোচনা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা প্রশাসনে বসে আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির খুবই বাজে অবস্থা সারা দেশে। বিএনপির বিরুদ্ধে সব দল মিলে ষড়যন্ত্র করছে। দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র চলছে। তাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।