শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৭:০১ পূর্বাহ্ন

প্রকাশনা ডিজিটালাইজ করায় গুরুত্ব আরোপ প্রধানমন্ত্রীর

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ৪.০৯ এএম
  • ৫৯ বার পড়া হয়েছে

বই শুধু কাগজে প্রকাশ না করে ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য বিশ্বব্যাপী পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে প্রকাশকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলারও তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে নিরাপত্তার বেড়াজালে বইমেলায় এসে নিজের স্বাধীনতাটাই হারিয়ে গেছে বলেও আক্ষেপ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আসা, এতে কোনো মজা নেই। কারণ, স্বাধীনতাই তো নেই। ডানে তাকাবো নিরাপত্তা, বাঁয়ে তাকাবো নিরাপত্তা, পিছনে গেলে নিরাপত্তা, সামনে নিরাপত্তা, এই নিরাপত্তার বেড়াজালে স্বাধীনতাটাই হারিয়ে গেছে।’

বইমেলার স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এখানে আসলে মনে পড়ে স্কুলজীবনের কথা, ছোটবেলার কথা, এই প্রাঙ্গণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখন সে স্বাধীনতাটা নেই। জানি না, কবে আবার স্বাধীনতা পাব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার পথ অনুসরণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। স্বাধীনতার পর যখন জাতিসংঘ আমাদের স্বীকৃতি দিলো, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেখানে ভাষণ দিতে যান। তিনি কিন্তু বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন। বাংলা ভাষায় ভাষণ অর্থাৎ বাংলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। আমি আমার বাবার পথ অনুসরণ করে এই পর্যন্ত যতবার ভাষণ দিয়েছি, আমি কিন্তু প্রতিবার বাংলায় ভাষণ দিই।’

এ সময় প্রকাশকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা বলেন, এখন বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যুগ। বই প্রকাশ অবশ্যই থাকবে, এটা যাবে না। কারণ, হাতে নিয়ে বই পড়ার মধ্যে আলাদা একটা আনন্দ আছে। তবে আজ-কালকের যুগের ছেলেমেয়েরা ট্যাবে করে বই পড়ে। আবার ল্যাপটপে পড়ে। আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা উচিত।

‘প্রকাশকদের অনুরোধ করে বলব, শুধু কাগজে প্রকাশ করলে হবে না, ডিজিটাল প্রকাশক হতে হবে। ডিজিটাল প্রকাশক হলে এটা শুধু দেশে নয়, বিদেশও পৌঁছাতে পারব। মন-মানসিকতা পরিবর্তন করে আধুনিক প্রযুক্তিটাও রপ্ত করতে হবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে আমরা এগিয়ে যাব।’

অনুবাদ সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, একসময় দাবি উঠেছিল অনুবাদ করা যাবে না। কিন্তু, আমি অনুবাদের পক্ষে। অনুবাদ যদি না হয়, পৃথিবীর এত ভাষা আমরা কোথায় থেকে জানব? একটা দেশকে, তার সংস্কৃতিকে জানতে হলে তার ভাষার মধ্যে দিয়ে জানতে হবে। আমাদের বাংলা ভাষা যত বেশি অনুবাদ হবে, পৃথিবীর অন্যরাও তত বেশি জানতে পারবে।

খালেদা জিয়া আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রক্ত দিয়ে আমরা যে ভাষার অধিকার আদায় করেছি, সেটা এখন সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি যখন আমরা পেলাম, তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই যে, এখানে একটা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলব। আমরা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। আমার সঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান ছিলেন। কাজ শুরু করি। ২০০১ এর ক্ষমতা আসতে পারিনি, তখন খালেদা জিয়া সেই কাজটি বন্ধ করে দিয়েছিল।

‘আমি ধন্যবাদ জানাই তাকে, বন্ধ করে দিয়েছিলেন, ভালো হয়েছিল। কারণ, দ্বিতীয়বার যখন আমি সরকারে আসি, সেটা প্রতিষ্ঠা করে উদ্বোধন করি। এখন সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। সেটা যাতে আরো সমৃদ্ধ হয়, সেটা আমি চাই।’

তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের ভাষা আন্দোলনের মাস। এ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বাঙালির সত্ত্বা জাগ্রত হয়। এই পথ বেয়েই আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন।

‘আমরা বাঙালি বাংলা ভাষায় কথা বলি, মায়ের ভাষায় কথা বলি, এই অধিকারটা আমরা পেয়েছিলাম। সেটাও আমাদের রক্ত দিয়ে অর্জন করতে হয়েছে। বাংলা একাডেমি আমাদের অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার। বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা।’

বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন।
পরে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি বইমেলা ঘুরে দেখেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত এবং অমর একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশিত হয়। এর পর ভাষা শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এবারের মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মাসব্যাপী সেমিনারের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য ছবি আঁকা, সঙ্গীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হবে।

এবারের বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি মাঠে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ বছর মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়নও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।

বিগত বছরের মতো এবারও মেলার মূল মঞ্চ হয়েছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছে। রমনা কালী মন্দিরের পাশে সাধুসঙ্গ এলাকায় ‘শিশু চত্বর’ স্থাপন করা হয়েছে।

পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েনসহ মেলার নিখুঁত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলার আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ওয়াচ টাওয়ার এবং ফায়ার টেন্ডার স্থাপন করা হয়েছে। মেলার মাঠ ও এর আশপাশের এলাকা সিসি ক্যামেরা ও ড্রোন নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort