সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এই পূজাকে কেন্দ্র করে হাজারো দেশি-বিদেশি ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত বাগেরহাটের সিকদার বাড়ির পূজা মণ্ডপ। হিন্দু পুরাণের চারটি যুগের দেব-দেবীর মোট ৫০১টি প্রতিমা তৈরি করে এই মণ্ডপে দেশের বৃহৎ দুর্গাপূজা পালিত হচ্ছে। এক মন্দিরে দেব-দেবীর শত শত প্রতিমা দেখে আনন্দ প্রকাশ করেন দর্শনার্থীরা।
এদিকে, পূজা মণ্ডপ ও ভক্ত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ, আনসার ও র্যাব সদস্যরা কাজ করছেন। সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। রয়েছে আয়োজকদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দলও।
শনিবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে সিকদার বাড়ি দুর্গা মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, হাকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক থেকে মূল মন্দির পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার সড়কসহ আশপাশ এলাকাজুড়ে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। মন্দিরের যত কাছে যাওয়া যায় ভিড় তত বাড়তে থাকে। নির্ধারিত ফটক দিয়ে প্রবেশ করে পাঁচ শতাধিক প্রতিমা দেখে বের হয়ে যাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থীদের অনেককেই দেবী দুর্গাসহ অন্যসব প্রতিমার সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। পরিবার-পরিজন নিয়ে শিকদার বাড়ি মন্দিরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরে খুশি ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।
মন্দিরের প্রতিমা দেখতে আসা আলো বালা বলেন, প্রতিমা দেখতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। এই মন্দিরে আসলে সনাতন ধর্মের অনেক পুরাণিক কাহিনী সম্পর্কে জানা যায়। এমন একটি আয়োজন করার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ।
মাদারীপুর থেকে আসা ঐশী দাস বলেন, সিকদার বাড়ি দুর্গাপূজার কথা অনেক শুনেছি। এবছর পূজায় আসার জন্য প্ল্যান করে রেখেছিলাম। এখন আসতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। প্রতিটি প্রতিমা দেখেছি, ছবি তুলেছি। মা দুর্গার দর্শন নিয়েছি। এখানকার আয়োজন আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।
ভারত থেকে আসা প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ী বলেন, ইন্ডিয়া থেকে যখন বাংলাদেশে এসেছি, তখন পরিচিত অনেকেই বলেছেন বাগেরহাটের সিকদার বাড়ির পূজা দেখে আসতে। ভারতের চেয়ে বৈচিত্রের দিক থেকে সিকদার বাড়ির এই আয়োজন ব্যতিক্রম। এখানের আয়োজন শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটা একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। ব্যতিক্রম এই পূজার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ।
সিকদার বাড়ি দুর্গাপূজার আয়োজক ব্যবসায়ী লিটন শিকদার বলেন, আমার স্বর্গীয় বাবা দুলাল শিকদার ২০১০ সালে ১৫১টি প্রতিমা নিয়ে প্রথমবারের মতো দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। এরপর থেকে প্রতিবছরই আমরা প্রতিমার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকি। ২০১৯ সালে ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে আমরা দুর্গাপূজার আয়োজন করি। আমাদের এই পূজা দেখতে সারা বাংলাদেশ থেকে ভক্ত দর্শনার্থীরা আসেন। দেশের বাইরে থেকেও অনেক ভক্তরা আসেন। তবে করোনার কারণে আমরা গেল তিন বছর সীমিত পরিসরে পূজার আয়োজন করেছিলাম। এবছর সাড়ম্বরে আমরা দুর্গাপূজার আয়োজন করেছি। এবার ৫০১টি প্রতিমার মাধ্যমে আমরা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী তুলে ধরেছি। দর্শনার্থীরাও অনেক খুশি হচ্ছেন।