ক্যাম্পাসের ভেতর ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেলের মৃত্যুর ঘটনায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনায় বসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে হিমেলের পরিবারের জন্য পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ দাবি মানেনি। তারা হিমেলের পরিবারকে প্রতি মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশ চত্বরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
এ সময় উপাচার্য ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনায় শিক্ষার্থীরা মোট সাতটি দাবি জানান।
দাবিগুলো হলো-
১. হিমেলের পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, বিভিন্ন স্থানে ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন করতে হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সব রাস্তা সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী না করা পর্যন্ত সব ধরনের ভারী যান চলাচল এবং নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে হবে।
৪. আহত রায়হান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাকেও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে হবে।
৫. নির্মাণাধীন বিজ্ঞান ভবনটি হিমেলের নামে হতে হবে। পাশের সড়কটি তার নামে নামকরণ করতে হবে। ভবনের পাশে শহীদ হিমেলের নামে স্মৃতিফলক নির্মাণ করতে হবে।
৬. এ ঘটনায় জড়িত ট্রাক ড্রাইভার ও ঠিকাদারের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট, কাজলা ও বিনোদপুর গেটে অনতিবিলম্বে ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের এসব দাবির প্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘আমি তার (হিমেল) মা ও মামার সঙ্গে কথা বলেছি। তার পরিবারের চিকিৎসা ও জীবন নির্বাহের জন্য যত অর্থ লাগবে তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহন করবে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে হিমেলের মায়ের অ্যাকাউন্টে প্রতিমাসে যেন ৩০-৩৫ হাজার টাকা জমা হয়, সে ব্যবস্থা করেছি। আমি নিজেই অ্যাকাউন্ট খুলেছি। আমি তোমাদের সাহায্য চাই। নতুন যে বিজ্ঞান ভবন হচ্ছে আমরা সেটি শহীদ হিমেলের নামে করব। আর যে সড়কে সে মারা গেছে তার নামকরণও হিমেলের নামে হবে।’
ক্ষতিপূরণের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘হিমেলের মায়ের নামে অ্যাকাউন্ট করা হয়েছে। আমরা ওনাকে আমাদের বোন হিসেবে দেখছি। সারা জীবন যেন তিনি ঠিকভাবে চলতে পারেন সে ব্যবস্থা আমরা করছি। উনি মাসে মাসে টাকা পাবেন। আর আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসা খরচ আমরাই বহন করব। আমি ৫০ বছর ধরে এই ক্যাম্পাসে আছি। তোমরা আছো ৪-৫ বছর ধরে।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা চারুকলা অনুষদে যাতায়াতের রাস্তায় যে রেলক্রসিং আছে সেখানকার নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তুললে উপাচার্য জানান, ওই রেলক্রসিংয়ে ওভারব্রিজ করা হবে।
উল্লেখ্য , মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে দুর্ঘটনায় গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেল নিহত হন। তিনি শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। এছাড়া তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ড্রামা অ্যাসোসিয়েশনের (রুডা) সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের দফতর সম্পাদক ছিলেন।
একই দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান প্রামাণিক আহত হন। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।