রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
উত্তর ভারতের প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামানো হচ্ছে ‘পুষ্পা-২’ জাকের-শামীমকে ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’ পুরস্কার দেওয়ার সুপারিশ বিশপের ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত ১৬ ভোট আয়োজনের পর নিজের কাজে ফিরে যাব : প্রধান উপদেষ্টা কাউন্সিলরদের স্বপদে বহাল চায় না জাতীয় নাগরিক কমিটি তিন আসামি কারাগারে, দুজনের শরীরে অ্যালকোহলের উপস্থিতি মিলেছে রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়ির ধাক্কায় নারীর মৃত্যু ফতুল্লায় যুবককে কুপিয়ে হত্যা রোটারি ক্লাব অফ নারায়ণগঞ্জ ফোর্ট ও চর সৈয়দপুর সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প সোনারগাঁয়ে বোনের পাঠানো টাকায় নিজের নামে জমি’ ফেরত চাওয়ায় হত্যার হুমকি, থানায় মামলা

হাসিনার সমালোচনায় ভারতের সায় নেই

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১.১৯ এএম
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিভিন্ন বিষয়ে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকে অংশ নিতে গত সোমবার ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। বৈঠক শেষে দেশে ফিরে গত বুধবার তিনি দেশটির পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে বাংলাদেশ ইস্যুতে বক্তব্য পেশ করেন। তার বক্তব্যকে ইতিবাচক মনে করছেন কূটনীতিকরা।

তারা বলছেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত গত সাড়ে চার মাসের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণভাব দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে দুপক্ষের সম্পর্কে বিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যাওয়ায় সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারত যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সে বিষয়ে তাদের জনগণের কাছে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে হবে ভারত সরকারকে। শুধু মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে বাংলাদেশ নিয়ে প্রকৃত এবং স্পষ্ট বার্তা প্রকাশ করতে হবে। তা না হলে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না এবং আবারও টানাপড়েন বাড়বে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সদ্য সমাপ্ত ঢাকা সফর নিয়ে গত বুধবার দেশটির পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে ব্রিফ করেন। এই সময়ে কমিটির সভাপতি কংগ্রেস নেতা শশী থারুর উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনায় ভারতের সায় নেই এবং এটা নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা অস্বস্তি আছে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশের একক কোনো রাজনৈতিক দল বা একটি সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না। ভারত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। শেখ হাসিনা তার মন্তব্যের জন্য ব্যক্তিগত যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছেন। ভারত সরকার তাকে (শেখ হাসিনা) এমন কোনো প্ল্যাটফর্ম বা সুযোগ-সুবিধা দেয়নি, যা দিয়ে তিনি ভারতের মাটিতে বসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারেন। এটি তৃতীয় কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ না করার ঐতিহ্যগত রীতির অংশ। ঢাকা সফরে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, ভারত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং ভারত বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করবে।

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বাণিজ্য ও যোগাযোগের বৃহত্তম অংশীদার। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দুপক্ষ রেল যোগাযোগ, বাস সংযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌপথ নির্মাণ করেছে। তবে দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা স্থগিত আছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতার অভিযোগের স্বীকৃতি নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন ছিল। বাংলাদেশ জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে এ-সংক্রান্ত সহিংসতার ঘটনায় ৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমন ঘটনাকে স্বাগত জানায় ভারত। গত বছর বাংলাদেশিদের জন্য ১৬ লাখ ভিসা ইস্যু করে ভারত। এ সময়ে বাংলাদেশিদের জন্য সবচেয়ে বেশি ভিসা ইস্যু করেছে দেশটি। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে দেখে না ভারত, বরং ভালো প্রতিবেশী সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে দেখে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত সোমবার যখন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় বৈঠক করতে আসেন তখন ওই বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আপত্তি উপস্থাপন করা হয়। শেখ হাসিনা ইস্যুতে বলা হয়, পতিত প্রধানমন্ত্রী ভারতের মাটিতে অবস্থান করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলে ঢাকা কীভাবে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষা করবে? সীমান্তে ভারত পাখির মতো বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করছে, এটা ভারতের কেমন বন্ধুত্বের পরিচয়? ঢাকার এসব উদ্বেগের বিষয় শুনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বৈঠকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে বার্তা দেন যে, সম্পর্কে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে, অচিরেই সব ঠিক হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ভারতের সচিব তাদের উদ্বেগগুলোও বৈঠকে উপস্থাপন করেন। ভারতের উদ্বেগের বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে বৈঠকে বলা হয়, গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের সময়ে কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে, যা রাজনৈতিক, ওইসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ধর্মীয় ইস্যুতে ঘটেনি।

বিক্রম মিশ্রি জানান, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ইস্যুতে তাদের কাছে প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি আছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আরও জানান, তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় এবং উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করে উন্নয়নের স্বার্থে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল হক সময়ের আলোকে বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব তাদের পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে খুবই ইতিবাচক ব্রিফ করেছেন। ভারতের সচিবের ব্রিফ থেকে এটা পরিষ্কার যে, বাংলাদেশ যেসব বিষয়ে আপত্তি তুলেছে সেগুলো তারা নোট করেছে এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। ভারত এর আগে কখনো বাংলাদেশের আপত্তিকে পাত্তা দেয়নি। এটা ইতিবাচক। মূলত সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে আগে হাত বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ, এবার ভারতও হাত বাড়িয়েছে । তবে বাংলাদেশকে সফল হতে হলে আরও পরিশ্রম করতে হবে। বিশেষ করে ত্রিপুরা ও কলকাতার মিশন দ্রুত চালুর ব্যবস্থা করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারি সময়ের আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় কমিটিকে অবগত করার বিষয়টি ইতিবাচক। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ব্রিফ করার ১০-১২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের গণমাধ্যমগুলোর চেহারাও বদলে গেছে। ভারতের গণমাধ্যমগুলো গত চার মাসে শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার বলেনি; কিন্তু তাদের পররাষ্ট্র সচিবের ব্রিফের পর গণমাধ্যমগুলো শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার বলা শুরু করেছে। গত ১৩ বছরে শেখ হাসিনা সরকার যে সব অপকর্ম করেছে সেসব প্রকাশ করা শুরু করেছে ভারতীয় মিডিয়া। তবে এসব কিছুই ভারত তার নিজের স্বার্থে করছে। ভারত কিছুটা দেরিতে হলেও টের পাচ্ছে যে, বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা বলে লাভ নেই বরং নিজেদেরই (ভারতের) ক্ষতি। বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। এখন বাংলাদেশ যদি ভারতকে বাদ দিয়ে পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অন্যদের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করে তা হলে দিল্লি বিপাকে পড়বে।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছে যে, ঢাকার অনেক বিদেশি বন্ধু আছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেরও একটা চাপ আছে। শেখ হাসিনার পর বাশার আল-আসাদের পতন ঘটেছে। এরপর কার পতন ঘটবে তা বিশ্ব দেখতে চায়। এখানে ভারতের ভয় আছে। কেননা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও স্বৈরাচারী এবং অন্ধভাবে হিন্দু ধর্মকে এগিয়ে নিতে চান। তারা যেভাবে বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা যে কোনো সময়ে তাদের (ভারত) জন্য বুমেরাং হতে পারে। তাদের সংসদে ইন্ডিয়া জোট মোদির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব তুলতে পারে। এখানে নরেন্দ্র মোদির ভয় আছে। এ কারণে তারা বাংলাদেশ নিয়ে অবস্থান পরিবর্তন করছে। তবে শেখ হাসিনাকে ভারত অন্তর থেকে ভালোবাসে। যাই হোক, সর্বশেষ পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত হাত বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। ভারতের মধ্যে উষ্ণতার উদয় হয়েছে, যা হিমশীতল সম্পর্কে বরফ গলানোর সূচনা করেছে। বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের বক্তব্য আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ হলে সম্পর্কে বরফ গলা তীব্র হবে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এবং অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বার্তা ইতিবাচক। তারা এটা নিশ্চিত করেছে যে, গত সাড়ে চার মাসে যা করেছে, সেভাবে আর এগোতে চায় না এবং তারা আর শেখ হাসিনাকেন্দ্রিক চিন্তা করতে চাচ্ছে না, যা সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে প্রাথমিক পদক্ষেপ। যেহেতু বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বিশ্বাসের ঘাটতি দেখা গেছে তাই সম্পর্কে আস্থা ফেরাতে আরও কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভারতকেই এগিয়ে আসতে হবে, কেননা তারাই বিশ্বাসের জায়গা নষ্ট করেছে। ভারতের সরকারকে তাদের জনগণের কাছে বাংলাদেশ ইস্যুতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়ে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করতে হবে। তা না হলে আস্থার সম্পর্ক ফিরবে না। উল্টো টানাপড়েন বাড়বে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort