দক্ষিণাঞ্চলের ঈদযাত্রার চিত্র পুরোপুরি পালটে গেছে। প্রতিবছর ঈদযাত্রায় দুর্ভোগের কারণে যেখানে খবরের শিরোনাম হতো দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সেখানে এবার ফুরফুরে মেজাজে বাড়ি ফিরছেন সবাই। এক পদ্মা সেতু চোখের পলকে সব পালটে দিয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের নৌ আর সড়ক যোগাযোগের চিরচেনা দৃশ্য বদলে গেছে। পদ্মা সেতু পার হয়ে সড়কপথে ঢাকা থেকে এখন মাত্র ৩ ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে বরিশাল।
একইভাবে দক্ষিণের অন্য গন্তব্যগুলোর সঙ্গেও রাজধানীর সড়ক যোগাযোগের সময় কমেছে গড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। যাত্রী কম হওয়ায় চলছে না লঞ্চের ঈদ স্পেশাল সার্ভিস। কেবিন পেতেও খুব একটা বেগ পেতে হচ্ছে না কাউকে। এদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পয়েন্টে নেই যানবাহনের তেমন ভিড়। আগে যেখানে ফেরির জন্য অপেক্ষা করত গাড়ি, সেখানে শুক্রবার প্রায় সারা দিন গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকে ফেরি।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় বরিশালের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে নগরীর নবগ্রাম রোডের বাসিন্দা ইমরান হাওলাদার বলেন, স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে বাসে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে অফিস ছুটি হয়। এরপর আরামবাগ থেকে বাসে উঠেছি। ঢাকা থেকে বের হতে যতটা সময়। সোয়া ৩ ঘণ্টায় বরিশাল এসেছি।
তিনি আরও বলেন, আগে তো লঞ্চে আসতাম। ঈদের অন্তত ১ মাস আগে থেকে শুরু হতো লঞ্চের কেবিন পাওয়ার লড়াই। কোনোভাবে কেবিন মিললেও লঞ্চে যেতে হতো হাজার মানুষের মধ্যে অনেকটা চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে। কিন্তু এবার সে সবের কিছুই হয়নি।
সড়কপথে বাসে বরিশালে আসা সরকারি চাকুরে বজলু হাওলাদার বলেন, ঢাকা থেকে মাওয়া, তারপর ফেরি পার হয়ে এ পারে এসে আবার বাসে বরিশাল। শুনতে সহজ মনে হলেও কষ্ট আর দুর্ভোগ যে কতটা ভয়াবহ ছিল তা শুধু জানে বরিশাল অঞ্চলের মানুষ। গতবার যে ফেরিতে ভিড়ের চাপে লোক মারা গেল তাতে আমিও ছিলাম। যারা সেই দুর্ভোগ পোহাননি তাদের কষ্টের সেই বর্ণনা বলে বোঝানো যাবে না।
ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী সাকুরা পরিবহণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, একটা শঙ্কা ছিল ঈদের আগে সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লে পদ্মা সেতুর টোলে জ্যাম হবে। এক্সপ্রেস সড়কের টোলে জ্যাম হবে সেই শঙ্কাও ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেসবের কিছু হয়নি। শুক্রবারও ভালোভাবে আমাদের গাড়িগুলো নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে গেছে বরিশাল।