ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় স্ত্রী ও দুই শিশু ছেলেকে হত্যা করে পুঁতে রাখার ঘটনায় আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
মঙ্গলবার (২১ মে) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কাকচর নয়াপাড়া গ্রামে গর্ত খুঁড়ে এক নারী ও দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম হোসেন জানান, গত রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আলী হোসেন জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, আলী হোসেন দিনমজুরের কাজ করেন। তার জমিজমা নেই। স্ত্রী আমেনা খাতুন এবং দুই শিশু ছেলে নিয়ে তার সংসার। বড় ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিকের বয়স ৪ বছর। ছোট ছেলে আনাছের বয়স ২ বছর ৬ মাস। আলী হোসেন তার চাচার দেওয়া জমিতে অনেক দিন ধরে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছিলেন। বিভিন্ন সময় তিনি স্ত্রী আমেনার নামে এনজিও থেকে টাকা তুলতেন। বেশ কিছু দিন আগেও এক এনজিও থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার ঋণ নেন। সেই টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় তাকে এবং তার স্ত্রীকে অপমান করা হতো। প্রায়ই ছেলে ও বৌ না খেয়ে দিন কাটাত। ঋণের বোঝা, মানুষের অপমান, সংসারের অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পেতে দুই/তিন মাস আগে আলী হোসেন সিদ্ধান্ত নেন, স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করবেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, শুক্রবার (১৭ মে) গভীর রাতে ঘুমিয়ে থাকা স্ত্রী ও সন্তানদের গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন। পরে আলী হোসেন তাদের লাশ বাড়ির পাশের জঙ্গলে নিয়ে গর্ত করে পুঁতে রাখেন। ভোরের দিকে ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন।
তিনি আরও জানান, আলী হোসেন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে হরিরামপুর এলাকায় চলে যান এবং বিকালে বাড়িতে ফিরে মালামাল নিয়ে গফরগাঁও মশাখালী স্টেশনে গিয়ে ট্রেনে উঠে ঢাকর উদ্দেশে রওনা হন। গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় গোপনে ছিলেন তিনি।
আলী হোসেন ত্রিশাল থানায় ২০১২ সালে দায়ের হওয়া ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধ করে হত্যার মামলায় ৫ বছর কারাভোগ করেছেন। ২০১৭ সালে আগস্ট মাসে ওই মামলায় জামিনে মুক্তি পান তিনি। সেই মামলাও বিচারাধীন রয়েছে।