বাল্যবিবাহ, ভূয়া বিয়ে, ভূয়া কোর্ট ম্যারেজ, জন্ম নিবন্ধন জালজালিয়াতি, অতিরিক্ত অর্থ আদায়, প্রতারণা কোন কিছুতে কমতি নেই ভুয়া কাজী আবুল কাশেমের।
একটি বিবাহ সূত্রে জানা যায়, সোনারগাঁ সাদিপুর ইউনিয়নের ভূয়া কাজী আবুল কাশেম বিভিন্ন অপকর্ম করে একাধিকবার ধরা খেলেও পরিবর্তন হয়নি তার। বারবার অপরাধ করে অর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পার পেয়ে যান এই আবুল বাশার, এমনি মন্তব্য করেন এলাকাবাসী। এমনকি বিভিন্ন পর্যয়ের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি সহ বিভিন্ন মানুষকে ম্যানেজ করা তার খুবই সহজ ব্যাপার। আর তাই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তার এই অপকর্ম চলে আসছে বহুদিন ধরে।
জানা যায়, ২০২১ শালের অক্টোবরের ২৪ তারিখ সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের মোবারকপুর গ্রামের মৃত সোরাব হোসেনের নাবালিকা মেয়ে সানজিদা আক্তার সারা (১২) কে জোরপূর্ব ফুচলিয়ে ফাসলিয়ে একই উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের বরাব বাজার বাঘুড়ী গ্রামের শামসুল হক এর ছেলে হাফেজ কাউসার আহমদ (২৯) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়।
একটি অনিবন্ধন কাজী অফিস থেকে ভুয়া কোট ম্যারেজ প্রদর্শন করে মেয়ে পক্ষকে ভুলভাল বুঝিয়ে সমাজের কিছু অসচেতন ব্যক্তিদের কে নিয়ে এ বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়।
অবুঝ মেয়ে সানজিদা আক্তার সারা সংসার জীবনে কিছুই না বোঝার দরুন অল্প সময়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
স্বামী কাউসার আহমেদ এর অমানুষিক নির্যাতন ও জোরপূর্ব শারীরিক সম্পর্কের স্থাপনের কারণে মেয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় নিজ বাড়িতে চলে আসে।
ঘটনা দামাচাপা দেওয়ার জন্য মেয়ের মা ও ছেলে পক্ষের অভিভাবকরা মিলে সমাজের কিছু নামধারী ব্যক্তিদের নিয়ে গোপনে অসামাজিক ও আইনের তোয়াক্কা না করে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মেয়েকে অসহায়ত্ব জীবন যাপনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে স্বামী কাউসার আহমদ এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, পারিবারিকভাবে এই বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়, তারই এলাকার কাজী আবুল কাশেম এ বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন, দেড় লাখ টাকা কাবিন ধার্য করে ৫০ হাজার টাকা উসূলে এ বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়।
তার স্ত্রীর সানজিদা আক্তার ছারা সাংসারিক না হওয়ায় মনোমালিন্য তৈরি হয়, সেই সূত্রে অল্প সময়ের মধ্যে পরিবারের পরামর্শ অনুযায়ী দুপক্ষ মিলে এই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায়।
সরকারি নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কা না করে, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, মেয়েও ছেলেপক্ষ মিলে , স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বৌদ্ধের বাজার ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান আল আমিন সরকার ও ইউনিয়ন সদস্য সহ করুণা যোদ্ধা টিম লিডার সানাউল্লাহ কে সাথে নিয়ে সামাজিকভাবে এ বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন করা হয় বলে মন্তব্য করেন স্বামী কাউসার আহমেদ।
বৈদ্যের বাজার চেয়ারম্যান আল আমিন সরকারের সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা হলে তিনি জানান , এ ঘটনায় তিনি অবগত না, এরকম কোন বাল্যবিবাহ বিচ্ছেদ তিনি উপস্থিত ছিলেন না ও এ বিষয়ে জানেনও না।
তাছাড়া করুণা যোদ্ধার টিম লিডার সানাউল্লাহ এর সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা হলে তিনি কখনো মন্তব্য করেন বিষয়টি তিনি সমাধান করে দিয়েছেন, আবার কখনো বক্তব্য পরিবর্তন করে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দোষী সাব্যস্ত করেন, আবার কখনো তিনি এ বিষয় নিয়ে কিছুই জানেন না এমনও মন্তব্য করেন।
বিশ্ব সমাজব্যবস্থায় বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং একটি পবিত্র বন্ধনও বটে। নারী-পুরুষের সুখ-শান্তি প্রেম-প্রীতির মধুরতম বন্ধন সৃষ্টি ছাড়াও মানব বংশের স্থায়িত্ব ও সভ্যতার বিকাশ ঘটায়। তবে বাল্যবিবাহ দেশ ও জাতির জন্য অভিশাপ। সেই কবে কোনো যুগে বাল্যবিবাহ প্রথার সৃষ্টি হয়েছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট ইতিহাস না পাওয়া গেলেও আদিযুগের গোত্র ও পরবর্তীকালে সব সাংস্কৃতির গর্ব এ ঘৃণ্য নিন্দিত প্রথার জন্ম দেয়। পরবর্তীকালে এর বিস্তৃতি ঘটে সমাজে-সংসারে।
এ বাল্যবিবাহ নামের অভিশপ্ত বিবাহ হাজারো হাজার কিশোর কিশোরীর জীবন বিপদের মুখে তারি একটি নমুনা সোনারগাঁ নুসরাত জাহান ছারার বিবাহ বন্ধন।