স্টাফ রিপোর্টারঃ সোনারগাঁয়ে আমিনপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। সেবা নিতে সেখানে পদে পদে ঘুষ দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ঘুষ না দিলে ফাইলই ধরেন না অথবা ভূল রিপোর্ট দিয়ে হয়রানী করা হয় সেবাপ্রার্থীদের। রীতিমতো শতাংশ প্রতি তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা রেট নির্ধারন করে ঘুষ নেন বলে জোরালো অভিযোগ এবং প্রমান পাওয়া গেছে। এছাড়াও রয়েছে (খ) তফসিল এর নামে মোটা অংকের ঘুষের অভিযোগ।
আলাপকালে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা রোমানা আক্তারের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে ঘুষ বাণিজ্য। প্রতিবাদ করলে বা ঘুষ দিতে না চাইলে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে নামজারী করতে ও সরকারকে খাজনা দিতে বাঁধার সৃষ্টি করা হয়। কথায় কথায় তিনি সোনারগাঁয়ের বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার আত্মীয় বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে সেবাপ্রার্থীদের হুমকি প্রদান করেন।
তারা আরও অভিযোগ করেন, ঘুষ না পেলে একটি ফাইলেও স্বাক্ষর করেন না তিনি। শুধু তাই নয়, একজনের জমি আরেকজনকে খারিজ করে দিয়ে ঝামেলা লাগান এবং সংশোধনের নামে আবারও মোটা অংকের উৎকোচ দাবি করে থাকেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার আমিনপুর আওতাধীন বিভিন্ন মৌজার বাসিন্দারা জিম্মি হয়ে আছে এই ভুমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা তথা নায়েব রোমানা আক্তারের কাছে। তিনি এই অফিসে যোগদান করার পর থেকেই দুর্ণীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে আমিনপুর ইউনিয়ন ভুমি অফিস। নামজারী করার জন্য সরকারী ফি ১১’শত টাকা নির্ধারিত থাকলেও এর বাইরে তিনি নিজের মতো করে ফি নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
পৌরসভার বাজারসহ প্রতিটি এলাকার সড়কের পাশের জমির নামজারি করতে হলে শতাংশ প্রতি ৫ হাজার এবং অন্যান্য যে কোনো জমির নামজারি করতে হলে শতাংশ প্রতি ৩/৪ হাজার টাকা তাকে দিতে হবে বলে নির্ধারণ করেছে। রোমানা আক্তারকে সহযোগিতায় রয়েছেন মোজাম্মেল ও মামুন নামের দু’জন ওমেদার । ঘুষ দিতে না চাইলে বা এর কম দিলে ভূল রিপোর্ট দিয়ে হয়রানী ও নামজারী বাতিল করার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু সরকারী কর্মকর্তা হওয়ায় মুখ খুলতে সাহস পায় না কেউ।
আরও জানা গেছে, এলাকাভিত্তিক দালাল ও ওমেদার নিয়োগ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওমেদার মামুন ও মোজাম্মেল বাড়ী বাড়ী গিয়ে নামজারীর কথা বলে উৎকোচ নিয়ে আসে এবং জনগনকে তাদের মাধ্যমেই খারিজ করতে বাধ্য করে। এদের মাধ্যমে জমির কাগজপত্র এদিক সেদিক করে বিপুল পরিমান টাকার মালিক বনে গেছেন ইউনিয়ন অফিসের কর্মকর্তা ও ওমেদারগন।
দুর্নীতি দমন কমিশন গোপন তদন্ত করলেই রোমানা আক্তারের বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার তথ্য বের হবে বলে মনে করেন ভূক্তভোগী ও সচেতন মহল। এদিকে দুর্নীতিবাজ ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে অর্থ আদায়কারী রোমানা আক্তার ওমেদার মামুন ও মোজাম্মেলকে প্রত্যাহারসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানান ভুক্তভোগীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভূমি অফিসের কতিপয় কর্মচারী জানান, এমন দুর্নীতিবাজ অফিসার আমরা জীবনেও দেখি নাই। সকালে অফিসে এসেই টাকা টাকা করে। কয়টা নামজারির আবেদন জমা পড়ছে, সেই খবর নিয়ে হিসেব করতে বসে, কোনটা থেকে কতো টাকা নিবে? টাকা ছাড়া ফাইলই দেখেন না তিনি। আগে বলে, টাকা কতো আছে সেটা বলো। এমনকি আমাদের নিজস্ব আত্মীয় স্বজনের নামজারী করতেও নায়েব রোমানা আক্তারকে উৎকোচ দিতে হয় বাধ্যগত।
তারা জনান, উপজেলায় মোট ১১টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর তিনজনের মধ্যে ১ নম্বর হচ্ছে এই নায়েব রোমানা আক্তার।
এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূমি কর্মকর্তারা জানান, এই দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দূদক তদন্ত চালালে চাঞ্চ্যল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে তারা মনে করেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা রোমানা আক্তারের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা ও বারবার কল দিলেও কল রিসিভ করেননি তিনি।
এবিষয়ে সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেহা নূর এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায় নি।