ফ্রি হিট পেয়ে থিকশানাকে সোজা মাথার উপর দিয়ে উড়িয়ে আছড়ে ফেললেন বাউন্ডারিতে। পরের ক্যারম বলে পরাস্ত তাওহীদ হৃদয়। ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল লাগে পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। হৃদয় সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন। তার বিশ্বাস তিনি আউট হননি। নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা নাসুম আহমেদকে ইঙ্গিত দিয়ে নিজে চলে আসেন ব্যাটিং প্রান্তে। কিন্তু না, রিভিউ হৃদয়ের বিপক্ষে যায়।
যেন হৃদয় ভেঙে চুরমার হৃদয়ের। মাথা নিচু করে ধীর পায়ে ফেরেন সাজঘরে। যেন পা চলছেই না। হৃদয়ের এই হেঁটে যাওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের যত আশা ছিল সব চলে যায়। স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। অপর প্রান্তে মুশফিকুর রহিমের পর শামীম হোসেনের বিদায়ের পরও হৃদয় ছিলেন অবিচল। কিন্তু ভাগ্য বিধাতা সহায় হয়নি। লড়াকু ইনিংসে পালটা প্রতিরোধ গড়ে দেখিয়েছিলেন স্বপ্ন। কিন্তু সঙ্গীদের আসা যাওয়ার মিছিলে পারেননি শেষ পর্যন্ত।
শনিবার এশিয়া কাপে সুপার ফোরের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ ২৫৮ রানের লক্ষ্য দেয় শ্রীলঙ্কা। রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ৪৮.১ ওভারে ২৩৬ রানে অলআউট হয়। ২১ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় সাকিব আল হাসানের দলকে।
নাঈম শেখ-মেহেদি হাসান মিরাজের জুটিতে বাংলাদেশের শুরুটা হয় সম্ভাবনাময়ী। ২৮ রানে মিরাজ ফিরলে ৫৫ রানে ভাঙে জুটি। এরপরই যেন ছন্দপতন ঘটে। বাংলাদেশ ২৩ রানে হারায় আরও ৩ উইকেট। থিতু হওয়ার পরও নাঈম আউট হন বাজেভাবে। শানাকার বাউন্স কি করবেন বুঝতে না পেরে উপরে তুলে দেন। তিনি ৪৬ বলে ২১ রান করেন এই ওপেনার।
নাঈমের সঙ্গী হল লিটন দাস ( ১৫) ও সাকিব (৩)। এরপর শুরু হয় মুশফিক-হৃদয়ের লড়াই। দুজনে ৮৪ বলে ফিফটির জুটি গড়ে এগোচ্ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শানাকার শিকার হয়ে। ভেঙে যায় ৭৪ রানের জুটি। এরপর শামীম এসেও হৃদয়কে সঙ্গ দিতে পারেননি (৫)। চাপের মুখে হৃদয় আউট হলে টেল এন্ডাররা কিছুটা চেষ্টা করেন। কিন্তু ৩৬ রানের বেশি করতে পারেননি নাসুম-তাসকিন-শরিফুলরা। নাসুম ১৫ রান করে। হাসান ১০ রানে অপরাজিত ছিলেন। লঙ্কানদের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন থিকাশান, পাথিরানা ও শানাকা।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে চার মেরে শুরু করে শ্রীলঙ্কা। তবে তিন বল পরেই তাসকিনের এলবিডব্লিউর শিকার হয়েছিলেন পাথুম নিসানকা। রিভিউ নিয়ে তিনি রক্ষা পান। দুজনে সতর্ক শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে এগোতে থাকেন। হাসান মাহমুদের ব্যাক অব লেন্থের দারুণ ডেলিভারিতে দিমুথ করুনারত্ন ফেরেন সাজঘরে। ওপেনিং থেকে ৩৪ রানের বেশি আসেনি শ্রীলঙ্কার।
শুরুতে ধাক্কা খেলেও দ্রুত সামলে নেয় স্বাগতিক শিবির। কুশল মেন্ডিসকে সঙ্গে নিয়ে নিসানকা প্রতিরোধ গড়েন। শরিফুলের এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফেরেন নিসানকা। ততক্ষণে জুটি থেকে আসে ৭৪ রান। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে শ্রীলঙ্কা। তবে এক পাশে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সাদিরা সামারাবিক্রমা।
ছোট ছোট জুটি গড়ে এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলকে। মাঝে অধিনায়ক শানাকাকে সঙ্গে নিয়ে মাত্র ৫৭ বলে যোগ করেন ৬০ রান। শানাকা ৩২ বলে ২৪ রান করে ফিরলেও সাদিরা ছিলেন অবিচল। শরিফুলরা রান আটকে রাখলেও শেষ দিকে সাদিরার কল্যাণে স্বাগতিক শিবির পেয়ে যায় চ্যালেঞ্জিং স্কোর। শেষ ছয় ওভারে তারা যোগ করেন ৫১ রান। শেষ ওভারে তাসকিনকে ছয়-চার হাঁকিয়ে সেঞ্চুরির পথে ছিলেন সাদিরা। তবে ভাগ্য সহায় হয়নি। শেষ বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ৯৩ রানে আউট হন সাদিরা।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট করে নেনে তাসকিন-হাসান। ২ উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। সাকিব-নাসুম-মিরাজ উইকেটের দেখা পাননি। সাকিব-নাসুম কোটা পূরণ করলেও মিরাজ ৩ ওভার করে ১৪ রান দেন।