ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ৮০ জনেরও বেশি যাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় অনেক যাত্রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে বেঁচে গেলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছেন শতাধিক। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দগ্ধ যাত্রীদের উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩৭টি লাশ বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। বাকিগুলো রীতিমতো পুড়ে অঙ্গার। এগুলোর অবস্থা এমন যে, বেশিরভাগই ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। লঞ্চ থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের আগে সেখানে দেখা গেছে কেবলই লাশ আর লাশ। সুগন্ধা নদীর দুই তীরের বাতাস যেন পোড়া লাশের গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছিল। লঞ্চে আগুন লাগার খবর পেয়ে বরগুনা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে স্বজনরা লঞ্চঘাটে ভিড় করেন। তাদের আহাজারিতে সৃষ্টি হয় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের।
দগ্ধদের চিকিৎসায় ইনস্টিটিউটের সাত চিকিৎসকের একটি দল ওষুধ ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে বরিশালে গেছেন। এদিকে লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনায় নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকার সদরঘাট থেকে পাঁচ শতাধিক যাত্রী নিয়ে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি বরগুনার উদ্দেশে যাত্রা করে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে সুগন্ধা নদীর দপদপিয়া এলাকায় লঞ্চটিতে আগুন লাগে। এ সময় কেবিন ও ডেকের বেশিরভাগ যাত্রীরা ঘুমিয়ে ছিলেন। আগুন দেখে নিচতলার ডেকের যাত্রীরা দোতলায় অবস্থান নেন। লঞ্চের স্টাফরা কেবিনের যাত্রীদের কেবিন থেকে বের হতে নিষেধ করেন। আগুন উত্তাপ টের পেয়ে অনেক যাত্রী নদীতে ঝাঁপ দেন। এরইমধ্যে ঝালকাঠির দিয়াকুল এলাকায় নদীর তীরে লঞ্চটি দ্রুত ভেড়ানো হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানো ও উদ্ধারকাজ শুরু করে। কিন্তু ততক্ষণে লঞ্চের দেড় শতাধিক যাত্রী দগ্ধ হন। এরমধ্যে অনেকে মারা যান। ফায়ার সার্ভিস ও কোস্ট গার্ডের ডুবুরি দল সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়।
যাত্রীরা জানান, এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি চাঁদপুর ও বরিশাল টার্মিনালে লঞ্চটি থামে এবং যাত্রী ওঠানামা করেন। লঞ্চে যাত্রী বোঝাই ছিল। কোথাও জায়গা না পেয়ে অনেকে ইঞ্জিন রুমের পাশে ছিলেন। লঞ্চটি রাত ২টার দিকে বরিশাল নদীবন্দর পার হয়। এর ঠিক ২০-২৫ মিনিট পর সুগন্ধা নদীর দপদপিয়া পয়েন্ট পেরুনোর পরপরই ইঞ্জিন রুমের পাশে প্রথম আগুন দেখা যায়। তখন অবশ্য তা খুব বেশি ছিল না। এ অবস্থাতে লঞ্চ চলতে থাকে। একইসঙ্গে স্টাফরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এভাবে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট চলার পর হঠাৎ করেই আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে যায়। ইঞ্জিন রুমের পাশেই থাকা চিকিৎসাধীন দগ্ধ আরেক যাত্রী বরগুনার ঢলুয়া এলাকার বাসিন্দা কালু মিয়া বলেন, ইঞ্জিন রুমের পাশেই ছিল সাত ব্যারেল তেল। এক পর্যায়ে সেগুলো বিস্ফোরিত হলে মুহূর্তেই আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। এর ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে তৃতীয় তলার কেবিনে থাকা যাত্রীদের প্রায় কেউই আর বেরুতে পারেনি। মুহূর্তেই পুড়ে তারা কয়লা হয়ে যান। আরেক যাত্রী বরগুনার খোলপটুয়া গ্রামের আসিফ সিকদার জানান, তীব্র শীতে ঠান্ডা বাতাসের হাত থেকে বাঁচতে একদিকে যেমন লঞ্চে ঢোকা বেরুনোর সব গেট আটকানো ছিল তেমনি চারপাশের মোটা পর্দাগুলো বেঁধে নামিয়ে রাখা হয়। চোখের পলকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে সবার আগে পুড়তে শুরু করে পর্দাগুলো। তীব্র উত্তাপে লঞ্চের স্টিল কাঠামোর আয়তন বেড়ে যাওয়ায় আটকে যায় প্রায় সব গেট। ফলে লঞ্চের দু’দিক দিয়ে যেমন যাত্রীরা নদীতে ঝাঁপ দিতে পারেনি তেমনি গেট আটকে যাওয়ায় আবার অনেকে বেরুতেও পারেনি। বদ্ধ উনুনে পুড়ে মরেছ মানুষ।
যাত্রী বামনা উপজেলার আবদুল্লাহ জানান, ইঞ্জিন কক্ষ থেকে লঞ্চে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। দুর্ঘটনার সময় কেবিন ও ডেকের বেশিরভাগ যাত্রীরা ঘুমিয়ে ছিলেন। বেঁচে যাওয়া আগুন দেখে নিচতলার ডেকের যাত্রীরা দোতলায় অবস্থান নেন। তিনিস আরও জানান, আগুন লাগার পরও প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট চালিয়ে লঞ্চটি প্রথমে ঝালকাঠির বিষখালী-সুগন্ধা-ধানসিঁড়ি নদীর মোহনায় মোল্লাবাড়ি তোতা শাহর মাজার এলাকায় থামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সেখানে লঞ্চের সব স্টাফসহ তিন শতাধিক যাত্রী নেমে যান। যাত্রী বাচ্চু মিয়া জানান, বেশিরভাগ যাত্রী ও স্টাফ মাজার এলাকায় নেমে গেলেও লঞ্চে আটকা পড়েন কেবিন ও ডেকের ঘুমন্ত যাত্রীরা। এখান থেকে লঞ্চটি ঝালকাঠির দিয়াকুল গ্রামের তীরে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে বেশ কিছু যাত্রীকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। অনেকে লঞ্চ থেকে লাফিয়ে নদীতে পড়েন। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা তিনি জানেন না।
অগ্নিকাণ্ডকবলিত লঞ্চে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনে ৮০ জনেরও বেশি যাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। দগ্ধ যাত্রীদের উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করেন। পুলিশ জানায়, ভোর ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ নদীর তীর থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এছাড়া উদ্ধার লাশ ঝালকাঠি পৌর মিনি পার্কে রাখা হয়। সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো মর্গে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক জোহর আলী জানান, উদ্ধার ৩৯টির লাশের মধ্যে পাঁচটি শনাক্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত করে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। তিনি জানান, ঘটনা তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এছাড়া নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে ঝালকাঠির ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, তদন্ত ছাড়া এ সম্পর্কে বলা সম্ভব নয়। তিনি জানান, লঞ্চ থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ৩৯ জনের লাশ উদ্ধার করেছে। লাশগুলোর পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। এগুলোর এমন অবস্থা যে-বেশিরভাগই ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। তিনি আরও জানান, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ৩০টি লাশ উদ্ধার করেছে। বাকি লাশ কোস্টগার্ড উদ্ধার করেছে। ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের ডুবুরি দল সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিকভাবে মৃত ব্যক্তির প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের ১৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম তারিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় পর্যন্ত ৩৭ জনের মৃত্যু এবং আহত হয়ে অন্তত ৭০ জন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
স্বজনদের আহাজারিতে ভারী ঝালকাঠি লঞ্চঘাট : স্বজনদের আহাজারিতে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। নিখোঁজ স্বজনদের তারা খোঁজ করছেন। বরগুনার হারুন বলেন, তার মেয়ে রিমু বেগম (২১), নাতি লিমা (১১) নিখোঁজ রয়েছে। একই এলাকার স্বজন আল-আমিন বলেন, তার বড় ভাই ইদ্রিস (৬০) নিখোঁজ। স্বজন ফোরকান বলেন, বোন রিনা (২৮) ভাগ্নি নুসরাতের (১০) কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ঝালকাঠিতে সুগন্ধা নদী তীরে নোঙ্গর করে রাখা অভিশপ্ত লঞ্চটি ঘুরে নজরে পড়েছে- বহু মানুষের পোড়া শরীর। এমনভাবে পুড়েছে যে সেগুলো চিহ্নিত করার কোনো উপায় নেই। বিশেষ করে তৃতীয় তলায় কেবিনগুলোতে নজরে পড়েছে এরকম অনেক পোড়া শরীরের অবশিষ্টাংশ। উদ্ধার হওয়া লাশ এবং চিকিৎসাধীনদের বাইরে বহু মানুষ যে নিখোঁজ রয়েছে তারও প্রমাণ মিলেছে স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে।
বরগুনার ঢলুয়া এলাকার বাসিন্দা দুলাল সরদার জানান, সকালে গ্রামের বাড়ি থেকে আসা ফোনের মাধ্যমে দুর্ঘটনার খবর পাই। জানতে পারি লঞ্চে থাকা আমার ৯ আত্মীয়ের মধ্যে ছয়জনই নিখোঁজ। ঢাকা থেকে গ্রামে আসছিলেন তারা। একই পরিবারের ৯ জনের মধ্যে মা পুতুল (৩৫), খালু রাসেল (৪০) এবং মামা কালুর (৩৮) সন্ধান পাওয়া গেলেও ২ শিশুসহ বাকি ছয়জনের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
লঞ্চে থাকা ভাইয়ের বউ ও শিশু ভাতিজির খোঁজে শেবাচিম হাসপাতালে আসা বামনার বাসিন্দা আলী মোহাম্মদ জানান, ‘একসঙ্গে চারজন লঞ্চে ছিলেন। দগ্ধ অবস্থায় দুইজনকে পাওয়া গেলেও বাকি দুইজনের সন্ধান মেলেনি। নারায়ণগঞ্জ থেকে বরগুনার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়া ১৩ বছরের রাকিবুলের খোঁজে বরিশালে আসা তার বাবা পাথরঘাটার শাহজালাল হাওলাদার জানান, ‘লঞ্চে ছিল রাকিবুল। সকালে খবর পাই লঞ্চে আগুন লেগেছে। ঝালকাঠিতে খুঁজে না পাইনি। এরকম আরও অনেক লঞ্চ যাত্রীর নিখোঁজ থাকার খবর দিয়েছেন তাদের সন্ধানে ঝালকাঠি এবং বরিশালে আসা স্বজনরা।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রীর : নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী শুক্রবার বিকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিকাল ৩টায় তিনি ঝালকাঠির পৌর মিনি পার্কে পৌঁছান। সেখান থেকে তিনি স্পিডবোটে দুর্ঘটনাস্থল দিয়াকুল গ্রামে লঞ্চটি ঘুরে দেখেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগুন লেগে পুরো একটি লঞ্চ ভস্মীভূত হওয়ার পেছনে কোনো রহস্য থাকতে পারে। এ রকম দুর্ঘটনা দ্বিতীয়টি আর বাংলাদেশে ঘটেনি।
সাত সদস্যের কমিটি গঠন : লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনায় সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদেন আগুন লাগার কারণ, দায়ী ব্যক্তি বা সংস্থা শনাক্ত করা এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব তোফায়েল ইসলামকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-বরিশাল অঞ্চলের নৌপুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন, ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আলম, নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার তাইফুর আহম্মেদ ভূইয়া।
তিন দিন নৌযানে কালো পতাকা উত্তোলন : লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় আগামী তিন দিন সব নৌযানে কালো পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশন। সংগঠনটির সভাপতি শাহআলম ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।
যাত্রীর সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা : এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে কতজন যাত্রী ছিলেন তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। মালিকপক্ষের দাবি লঞ্চে সব মিলিয়ে তিন থেকে সাড়ে ৩শ যাত্রী ছিলেন। বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের যুগ্ম পরিচালক এসএম আজগর আলীরও দাবি ঢাকা থেকে ৩১০ জনের মতো যাত্রী নিয়ে বরগুনার উদ্দেশে ছেড়ে আসে লঞ্চটি। এমনকি দুর্ঘটনার পর শুক্রবার দুপুরে আহত যাত্রীদের দেখতে বরিশালে আসা নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বলেছেন, রাতের বেলা সাড়ে ৪শর মতো যাত্রী ধারণের অনুমতি থাকা লঞ্চটিতে ৩ থেকে সাড়ে ৩শর বেশি যাত্রী ছিলেন না। তবে দুর্ঘটনার কবল থেকে বেঁচে ফিরে আসা যাত্রীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, দেড় হাজারের বেশি যাত্রী ছিলেন লঞ্চে।
শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যাত্রী বরগুনার রাশেদ জানান, নিচতলার ডেকে যাত্রীদের ভিড়ের কারণে বসার মতো জায়গা ছিল না। পরে ইঞ্জিনের পাশে কোনোভাবে একটু জায়গা করে ফিরছিলাম বরগুনায়। দগ্ধ আরেক যাত্রী কালু মিয়া জানান একই কথা। তার মতে, কম করে হলেও ১৬-১৭শ যাত্রী ছিলেন লঞ্চে।’
সবকিছু সঠিক থাকার দাবি লঞ্চ মালিকের : দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া লঞ্চ যাত্রীদের প্রায় সবাই ইঞ্জিন রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে দাবি করলেও তা মানতে নারাজ লঞ্চের মালিক মো. হানজালাল শেখ। মাত্র এক মাস আগে ইঞ্জিনের কাজ শেষ করে সেটি লঞ্চে বসানো হয়েছে বলে দাবি তার। ইঞ্জিন বসানোর পর ঢাকা-বরিশাল রুটে মাত্র চারবার রাউন্ড ট্রিপ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইঞ্জিন রুম থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়নি। হয়তো যাত্রীদের কারও সিগারেটের আগুন কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। লঞ্চের ফিটনেস সঠিক ছিল দাবি করে তিনি বলেন, লঞ্চে যেসব অগ্নি নির্বাপণ সামগ্রী রয়েছে তারও মেয়াদ শেষ হয়নি।
আগুনের সূত্রপাত হওয়ার পরও লঞ্চ না থামিয়ে কেন ৪০-৪৫ মিনিট চালানো হলো ব্যাপারে জানতে চাইলে মো. হানজালাল শেখ বলেন, আমি তো লঞ্চে ছিলাম না। সেখানে কি হয়েছে সেটা ভালো বলতে পারবে লঞ্চের সুকানি, মাস্টারসহ অন্যরা। তবে কোনোরকম অবৈধ পন্থায় আমি লঞ্চ পরিচালনা করছি না। সবরকম বৈধতা নিয়েই লঞ্চটি ঢাকা-বরগুনা রুটে চলাচল করছিল।