যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতনের স্বীকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ফারজানা আক্তার আঁখি (১৯) নামের এক গৃহবধু। ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ জেলার চিটাগাং রোডস্থ সিদ্ধিরগঞ্জ হীরা ঝিল এলাকায়। এ ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহবধু ফারজানা আক্তার আঁখি বুধবার (১৯ জানুয়ারী) রাতে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত স্বামী ওমর ফারুক ও মামা শশুর আব্দুল গনী ওরফে খোকনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ফারজানা আক্তার আঁখি জানান, গত ১ বছর পূর্বে মামলার ১নং আসামী ওমর ফারুক স্থায়ী সাং কুতুবপুর সোনারগাঁও থানাধীন পিতা,মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে সাথে সামাজিক রীতি অনুযায়ী এক বছর পূর্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের দাম্পত্ত জীবনে বিয়ের পর থেকেই আশান্তি চলতে থাকে। তার স্বামী ওমর ফারুক, তার মা (শাশুড়ী) এবং মামা শশুরের যোগসাজশে বিভিন্ন অযুহাতে তার স্বামী যৌতুকের দাবীতে শারিরিক ভাবে নির্যাতন শুরু করে।
পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে তার বাবা আক্তার হোসেন পাটোয়ারী সাংহাই, শাহারাস্তি চাঁদপুর, বর্তমান ঢাকায় বাবার বাড়ি থেকে এযাবত কয়েক লক্ষ টাকার অধিক যৌতুক এনে স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, গত এক বছর যাবত তার স্বামী ওমর ফারুক একাধিক পরকীয়ায় ও মাদকাসক্ত হয়ে পরে। এনিয়ে গত বুধবার (১৯ জানুয়ারী ) সন্ধ্যায় তাদের পরিবারে দ্বন্দ-কলহ দেখা দিলে পূনরায় তাকে ৫ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়।
একপর্যায়ে বাবার বাড়ি থেকে আর কোন টাকা এনে দিতে পারবেনা বলে জানালে গৃহবধু আখিকে তার শাশুড়ী ও মামা শশুরের সহযোগীতায় বেধরক পিটিয়ে গুরুতর আহত লীলা ফুলা ও রক্তাক্ত জখম করে তার সামী ওমর ফারুক।
এক পর্যায়ে তাকে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালায়। গৃহবধূ আখি কোন রকম জান বাচিয়ে ৯৯৯ ফোন করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তা জীবন বাচাতে সক্ষম হয়।
পুলিশ ততৎক্ষনাৎ গৃহবধূ আঁখিকে উদ্ধার করে নারায়নগঞ্জ জেনারেল(ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরন করা হয়। পরে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা নারী শিশু নির্যাতন দমন ২০০৩ এ ১১(গ)/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে।
যৌতুক লোভী স্বামীর হাতে স্ত্রী নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ সারা শরীরের কালশিটে দাগ। চোখের কোনায় জমাট বাধা রক্ত। মুখগহব্বরে গভীর ক্ষত নিয়ে বাকরুদ্ধ। মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে সদর হাসপাতালে কাঁতরানো অবস্থায় প্রেরণ করে পুলিশ।
মাদকাসক্ত স্বামী ওমর ফারুক, শাশুড়ী এবং মামা শশুরের অকথ্য নির্যাতনে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে । শরীরের এমন কোন স্থান নেই যেখানে আঘাত করা হয়নি। যৌতুক লোভী ও মাদকাসক্ত স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে করার প্রতিবাদ ও নিয়মিত মা ছেলের নেশার টাকা দিতে না পারায় এমন নিষ্ঠুর ও নির্দয় ভাবে গৃহবধূকে মারধর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী ও গৃহবধূ আখির অভিযোগ করে বলেন, মাত্র এক বছরের দাম্পত্য জীবনে নানা ভাবে অত্যাচার নির্যাতনের মাঝেও নিজের সুখের কথা চিন্তা করে স্বামীর ঘর আঁকড়ে ছিলাম। সম্প্রতি ৫লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য স্বামী শাশুড়ী ও মামা শশুর মিলে চাপ দিতে থাকে। সেই সঙ্গে গৃহবধূ আঁখির মামা শ্বশুর আব্দুল গনী ওরফে খোকন বকাঝকা ও মরধর করতেন। কিন্তু আমার পিতা অতিশয় গরীব।
কিন্তু মেয়ের সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করে বিয়ের সময় সকল আসবাবপত্র সহ ছয় ভরি সর্নালংকার প্রদান করেছেন যার আনুমানিক মূল্য ছয় লাখ টাকা ও বিয়ের ছয় মাস পরে আরো ২ লাখ টাকা প্রদান করেছিলেন। এদিকে টাকা না দেওয়ায় পরিবারের প্ররোচনায় আবার দ্বিতীয় বিয়ে করার চেষ্টা করেন।এমনকি বিয়ে পরে জানা গেছে এর আগেও তিনি আরো একটি বিয়ে করেছেন এবং একই ভাবে নির্যাতনের কারনে তার পিতা মেয়েকে ছেড়ে নিয়ে যায়।
আঁখি অভিযোগ করে বলেন, সংসারে সতীন আনার চেষ্টার কারণে আমার উপর নির্যাতন আরো বেড়ে যায়। গত বুধবার (১৯ জানুয়ারী) রাতে আমার সামী ওমর ফারুক ও তার মা (শাশুড়ী )এবং মামা শশুর ফারুক আমার রুমে ঢুকে বেধড়ক মারপিট করে। শাশুড়ী সায়মা হক (৪২) আমাকে ধরে রাখে আর স্বামী ওমর ফারুক ও মামা শশুর ফারুক মারপিট করতে থাকে।
শারীরিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে এলে সুকৌশলে ৯৯৯ ফোন করলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে নারায়নগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ব্যাপারে বুধবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নির্যাতিত গৃহবধু ফারজানা আক্তার আঁখি একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই মো.আবু হানিফ এ ঘটনার সত্যতা শিকার করে বলেন, মেয়েটিকে আমি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। তার উপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে। মামলা রুজু করে হয়েছে এবং ৩ আসামীর মধ্যে ২ জনকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনা বুধবার(১৯ জানুয়ারি) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধু অভিযোগের সূত্র ধরে মামলা রুজু করে ২ আসামীকে গ্রেপ্তারসহ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে । মামলার অন্য আসামি শাশুড়ী পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।