সিদ্ধিরগঞ্জে ঘনবসতি আবাসিক এলাকায় পরিবেশ ছাড়পত্র ও ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ১৫টি চুনা কারখানা। এসব চুনা কারখানার আগুনের তাপ, ধুঁয়া ও ধুলা-বালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন।
এসব কারখানার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরে একাধিক লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। পরিবেশ দূষণ রক্ষার্থে কারখানা বন্ধ বা স্থানান্তরের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর শুধু নোটিশ দিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই কারখানা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা।
জানা গেছে, পরিবেশ নীতিমালা ও তিতাসের সার্কুলার অমান্য করে সিদ্ধিরগঞ্জের আবাসিক এলাকায় চলছে চুনা কারখানা। একাধিক কারখানায় ছাদ না দিয়ে খোলা আকাশে পুড়ানো হচ্ছে পাথর। যা সম্পূর্ণ নীতিবহির্ভূত। পাথর পুড়িয়ে চুনা তৈরি করতে এসব কারখানায় সারাক্ষণ জ্বলে আগুন। ফলে উদগিরণ হয় ধোঁয়া।
পরিবেশবীদদের মতে ধোঁয়াতে নাইট্রোজেন আক্সাউড, কার্বন মনোক্সাইড এবং হাইড্রোকার্বনসহ অন্যান্য গ্যাসীয় বায়ূ দূষণকারী অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যা বিষাক্ত হতে পারে। যার সংস্পর্শে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া পাথর পুড়ানোর পর চুনের ডাস্ট (পাউডার) বাতাসে উড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশ এলাকা। এতে পরিবেশ দূষিত হয়ে শ্বাসকষ্ঠসহ নানান রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে আশপাশের বাসিন্দারা।
সরিজমিনে দেখা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার ১৫ টি চুনা কারখানার মধ্যে নাসিকের ১ নং ওয়ার্ডেই ১০ টি আর ৪ নং ওয়ার্ডে ৫ টি। কারখানা গুলো হলো সিআইখোলায় ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের জাজিরা লাইমস্, হীরাঝিলে সাবেক কাউন্সিলর ওমর ফারুকের মদিনা লাইমস্, ঢাকাইয়া জালাল উদ্দিনের সুরমা লাইমস্, চাঁন মিয়ার রনি লাইমস্, ফয়সাল রানার ফয়সাল লাইমস্, আটিতে আব্দুল হাইয়ের মেঘনা লাইমস্, জালাল উদ্দিনের আশরাফ আলী লাইমস্, পাইনাদী পূর্বপাড়ায় খোরশেদের ঢাকা লাইমস্ ও যমুনা লাইমস্, মক্কীনগরে হযরত আলীর আরাফাত লাইমস্, মিজমিজি পূর্বপাড়ায় আসমা তালেবের ভাই ভাই লাইমস্, মজিববাগে শফিউল্লাহ‘র শরীফ লাইমস্, আটি ওয়াপদা কলোনিতে সোহেলের খাজা লাইমস্, আব্দুল করিমের হারুন লাইমস্ ও শহীদ হাসান বিটুর রহমান লাইমস্।
এসব কারখানার বিরুদ্ধে হীরাঝিল এলাকাবাসীর পক্ষে গত ৯ মে মো. রফিকুল ইসলাম নামে একজন নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, চুনা কারখানার আগুনের লেলিহান শিখা ও চুনার ধুলা-বালিতে আশপাশের সকল বাড়ী ঘরের লোকজনের শ্বাসকষ্ঠসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত এবং আগুনের তাপে বাড়ীর দেয়াল, ফ্লোরসহ গরম হয়ে যায়। এতে বসবাস কষ্ঠকর হয়ে পড়েছে।
আগুন ও ধুলা-বালি নিয়ন্ত্রনমূল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কারখানা মালিকদের বারবার অনুরোধ করার পরও কোন উদ্যোগ নিচ্ছেনা। তাছাড়া বিগত কয়েক বছর ধরে পরিবেশ ছাড়পত্র ও সিটি করপোরেশন ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করছেন না। তারপরও অবৈধভাবে চুনা কারখানা পরিচালনা করে আসছেন। অভিযোগে এলাকাবাসীকে চুনা কারখানার বিপর্যস্ত থেকে বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করা হয়।
এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অভিযোগটি পরিবেশ অধিদপ্তরে গৃহিত হলেও অদ্যবধি পর্যন্ত কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। কারখানাগুলো বৈধতা না থাকা সত্তেও কিভাবে চলছে এ প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
জানতে চাইলে মদিনা লাইমস্ মালিক ওমর ফারুক বলেন, জনদুর্ভোগ যেন না হয় এসরকম ব্যবস্থা আমার কারখানাতে করা আছে। কেহ যদি অভিযোগ দিয়ে থাকে তা পরিবেশ অধিদপ্তর দেখবে।
এবিষয়ে রনি লাইমস্ মালিক চাঁন মিয়া পরিবেশ ছাড়পত্র ও সিটিকরপোরেশন ড্রেট লাইসেন্স নবায়ন না করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশ পাওয়ার পর থেকেই কারখানা স্থানাস্তরের চেষ্টা করছি। জায়গা নির্ধারণ করে স্থানান্তরের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে অনুমতিপ্রাপ্তির আবেদন করেছি। এখন পর্যন্ত অনুমতি পাইনি। অনুমতি পেলেই কারখানা স্থানান্তর করা হবে।
সিআইখোলার জাজিরা লাইমসের মালিক নাসিক ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম বলেন, কারখানা করার সময় এলাকায় বসতি ছিলনা। এখন হয়েছে। চুনা কারখানা থেকে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে। তবে সরকার চাইলে কারখানা সরিয়ে নিব। তার জন্য সময় ও জায়গার দরকার। বললেইত আর রাতা রাতি সরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, একেক কারখানাকে একেক মেয়াদে সময় দেয়া হয়েছিল। সরিয়ে না নেওয়ার বিষয়টি প্রধান কার্যালয়কে অবগত করেছি। এসব কারখানার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। দ্রুত অভিযান চালানো হবে।