জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশপ্রধান ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালকসহ আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের ট্রাইব্যুনালের মামলায় কারাগারে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি আগামী ১৯ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশসহ আসামিদের আদালতে হাজির করার নির্দেশও দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বুধবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এদিন বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বিচার কাজ শুরু হয়। প্রথমে আইনজীবী নাজনীন আহসান দাঁড়ান জিয়াউল আহসানের পক্ষে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতের সামনে সাবেক আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কি কি অভিযোগ আছে সেসব তুলে ধরেন। প্রথমে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম পুলিশের সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুনের ওপর আনা অভিযোগগুলো আদালতের সামনে তুলে ধরেন। এরপরে ‘সার্ভিয়ান কসাইয়ের’ সঙ্গে জিয়াউল আহসানের তুলনা করে তার ওপর আনা অভিযোগগুলো আদালতের সামনে তুলে ধরে চিফ
প্রসিকিউটর বলেন, ‘সার্ভিয়ান কসাইয়ের’ সঙ্গে জিয়াউল আহসানের তুলনা করলে কম হবে। আয়নাঘর বানানোর পেছনে তার ভূমিকা ছিল। পাশাপাশি দেশে যত কল রেকর্ড ফাঁস হতো তার পেছনে জিয়াউল আহসানের হাত থাকত। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এনটিএমসি সবার ওপর আড়ি পাতার যে টেকনোলজি ছিল তা বাংলাদেশে প্রথম আনেন জিয়াউল আহসান।
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে গুম-খুনের অভিযোগ আছে। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীসহ আরও অনেক গুম-খুনের পেছনে তার হাত ছিল। তিনি এনটিএমসির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিরোধীদের নজরদারি করে থাকতেন। জুলাই আন্দোলনে ইন্টারনেট বন্ধের পেছনে তার হাত ছিল।
এরপর চিফ প্রসিকিউটর ঢাকা জেলা সাবেক পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহ আল কাফির ওপর আনা অভিযোগগুলো আদালতের সামনে তুলে ধরেন। তারপর গুলশান থানার সাবেক ওসি মো. মাজহারুল ইসলামের ওপর আনা অভিযোগগুলো আদালতের সামনে তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর।
চিফ প্রসিকিউটর যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসানের ওপর আনা অভিযোগগুলো আদালতের সামনে তুলে ধরে বলেন, ছাত্র আন্দোলনে সবথেকে বেশি মানুষ হত্যা করা হয় যাত্রাবাড়ীতে আবুল হাসানের নেতৃত্বে। তার নির্দেশে সেখানে শত শত ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায় পুলিশ। পাশাপাশি নিজেরা খুন করে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে ধরে এনে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে নিয়ে অত্যাচার করত।
মামলায় আটজনের মধ্যে ছয়জনকে বুধবার গ্রেফতার দেখানো হয়। তারা হলেন- সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, বরখাস্ত হওয়া ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, গুলশান থানার সাবেক ওসি মো. মাজহারুল ইসলাম ও ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন। মামলায় আগেই গ্রেফতার ছিলেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লা ও ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম। বুধবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে তাদের দুই প্রিজনভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আদালতের কার্যক্রম শেষে দুপুর সোয়া ১টার দিকে দুই প্রিজনভ্যানে তারা আদালত ত্যাগ করেন।
গত ২৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের আবেদন মঞ্জুর করে এই ৮ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে নির্দেশ দেন। ওই আদেশে পুলিশের সাবেক ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে যারা গ্রেফতার রয়েছেন তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।