কলাগাছিয়া ইউনিয়নের মাঠঘাট যেন রঙিন। রঙের বাহারের সঙ্গে নানা সুবাস এখানকার বাতাসেও। গ্রামের পথ ধরে হাঁটতে মন ভরে যায়। চারদিকে ফুল আর ফুল। গাঁদা, ডালিয়া, গ্লাডিওলাস, চেরি, ক্যালেনডোলা, স্টার, জিপসি—আরও কত নাম। খেতে খেতে ব্যস্ত চাষি-শ্রমিকেরা। এক দল ফুল তুলছে, আরেক দল আঁটি বাঁধছে। কয়েকজন মালা গাঁথছেন। আরেক দল নতুন ফুলের চারা লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কথা বলার ফুরসত নেই কারও।
ব্রম্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষা নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদী গ্রামে গিয়ে এই চিত্র চোখে পড়ে। যতো দূর চোখ যায়, দেখা মিলে ফুলের সমারোহ। শুধু সাবদীই নয়, এ উপজেলার দীঘলদি, মাধবপাশা ও আইছতলা ও সোনারগায়ের ফরদী, দরিগাঁও, এলাহিনগর, শম্ভুপুারা, একরামপুরাসহ দশটি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করা হয় প্রতি বছর।
এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফসলের চেয়ে ফুলে আয় বেশি হওয়ায় ধীরে ধীরে লোকজন ফুল চাষে ঝুঁকছেন। তবে ফুল চাষে পরিশ্রম খুব বেশি বলেও জানালেন চাষিরা। দিনরাত পরিশ্রম করতে হয়। বিশেষ করে প্রতিদিন বাজারে ফুল নিতে হয় বলে ফুরসত থাকে না। আবার প্রতিদিন বিক্রি থাকে বলে নগদ টাকার প্রবাহই কৃষকদের পরিশ্রমে উৎসাহ জোগায়।
এবছরও বেশ ফুল হয়েছে। প্রতিদিন স্থানীয় ফুলের বাজার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সামনে বসে বিক্রি করা হচ্ছে এসব ফুল। তবে, পরিবহন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় মূল্য কম পান কৃষকরা।
স্থানীয় ফুলের চাষি বাতেন জানান, এবছর জমি থেকে পানি নামতে দেড়ি হওয়ায় ফুলের চারা রোপন করতে দেড়ি হয়েছে। তাই ফুল কিছুটা কম হয়েছে। এছাড়া সার, কিটনাশকসহ প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্যের মূল বেশি থাকায় উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। তবে এ বছর ফুলের দাম অনেক কম।
নারায়ণগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক লিটন দেবনাথ জানান, সাবদী ও আশপাশের গ্রামের ১৫ হাজার নারী পুরুষ এই ফুল চাষের সাথে জড়িত। এবছর ৭২ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকার ফুল বিক্রির প্রস্তুতি রয়েছে। পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এই ফুল বিক্রির বড় বাজার।