বরগুনা, পাথরঘাটা ও পটুয়াখালী সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার নৌকায় চলতো ডাকাতি। জেলেদের অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করা টাকা নারায়ণগঞ্জ থেকে সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আবার বণ্টন হতো দস্যুদের মধ্যে।
অপহরণের এই টাকা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বসে সংগ্রহ করতেন ইলিয়াস হোসেন মৃধা নামে একজন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সূত্রে গোয়েন্দা নজরদারির পর ইলিয়াসকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব জানায়, সম্প্রতি পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় দস্যুরা জেলের মাছ ধরার ট্রলারে হামলা করে এবং জেলেদের অপহরণ ও মাছ-জাল লুটে নেয়। পরে জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়।
গ্রেপ্তাার ইলিয়াস মূলত এক দস্যুনেতার নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বসে মুক্তিপণের সাত লাখ টাকা নিয়েছিলেন। যার একটা অংশ আবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দস্যুদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেন তিনি।
বুধবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনা থেকে জেলেরা মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে যায়। ২০ নভেম্বর রাতে জেলেরা পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালী (বলেশ্বর ও পায়রা মোহনা) বঙ্গোপসাগরের তৎসংলগ্ন ৩০-৫০ কিমি অভ্যন্তরে বেশ কয়েকজন অপহৃত হয়।
এ সময় একটি নৌকার মূল মাঝি, কয়েকজন জেলে ও মোবাইল অপহরণ করে। আর দস্যুরা অপহরণ জেলেদের কাছে মুক্তিপণের টাকা দাবি করে এবং তাদের একটি নৌকা রেখে দেয়।
এই ঘটনার পর র্যাব জেলেদের উদ্ধার ও দস্যুদের গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করে। র্যাব-৮ এর আভিযানিক দল বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে ও সমুদ্রের নিকটবর্তী চরাঞ্চল যেমন-ডালচর, সোনার চর, চর মন্তাজসহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি শুরু করে। দস্যুরা র্যাবের গতিবিধি ও তৎপরতা আঁচ করতে পেরে ২৩ নভেম্বর অপহৃত জেলেদের নৌকায় রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়।
মোবাইল ব্যাংকিং ট্রান্সফারের মাধ্যমে মুক্তিপণের অর্থের ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। র্যাবের গোয়েন্দারা নারায়ণগঞ্জসহ আরও কয়েকটি জায়গায় এ সংক্রান্ত ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মঙ্গরবার (৩০ নভেম্বর) রাতে রূপপগঞ্জ থেকে ইলিয়াস হোসেন মৃধাকে মুক্তিপণের পাঁচ লক্ষাধিক টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
ইলিয়াসকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ইলিয়াস সংঘবদ্ধ জলদস্যু দলের সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জে বসবাস করলেও তার বাড়ি পটুয়াখালীতে। এই দস্যু দলে ১৫-১৭ জন সদস্য রয়েছে।
দলের সদস্যরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে মূলত ডাকাতির কাজ করেন। আর মুক্তিপণ সংগ্রহে ২/৩ জন কাজ করেন। ইলিয়াসের দায়িত্ব ছিল অপহৃতদের মুক্তিপণের টাকা সংগ্রহ ও বণ্টন করা। ডাকাত সর্দারের অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ায় ইলিয়াসকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সমুদ্র সীমানায় যেসব এলাকায় মাছ ধরতে জেলেদের আনাগোনা আছে সেসব এলাকার উপকূলে দস্যুরা অবস্থান নেয়। দিনে তারা ছদ্মবেশে বা আত্মগোপনে থাকলেও রাতে তারা সমুদ্রে গিয়ে জেলেদের নৌকায় ডাকাতি করে।
মাছ ধরার মৌসুম বাদে অন্য সময় তারা গার্মেন্টসকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, রাজমিস্ত্রী, সেমাই ও মিষ্টি তৈরির কারখানা ও ইটের ভাটায় কাজ করে।
অনেক সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক বিয়ে করে ছদ্মবেশে জীবনযাপন করছে। জেলেদের নৌকায় লুট করা মাছ, জাল, নৌকা, তেলসহ অন্যান্য জিনিস অল্প দামে বিক্রি করত। এগুলো কারা কিনছে তাদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
(তথ্যসুত্র : বাংলা নিউজ)