রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘাত সৃষ্টি করতে চাইলে কেউ মাঠে টিকতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। অন্যদিকে ভোটের মাঠে নৌকার গণজোয়ার তৈরি হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বলেছেন, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের স্বার্থেই সিটির সোয়া চার লাখের বেশি ভোটারের সবাই নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করবেন।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রচারণার নবম দিনে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো রংপুর নগরী। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় দিন দিন ভোট উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ছে পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজার থেকে শুরু করে সবখানে। দিনভর গণসংযোগ আর পথসভায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। সারাদিন গানের ছন্দে আর স্লোগানে মুখর থাকছে পুরো নগর।
শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট, নবাবগঞ্জ বাজার, নিউমার্কেট ও মিনি মার্কেটসহ নগরীর বিভিন্ন মার্কেটে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, সিনিয়র সহসভাপতি লোকমান হোসেন, সহসভাপতি জাহেদুল ইসলাম, জেলা জাপার সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ফারুক আলম, মহানগর ছাত্রসমাজের সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত আসিফ প্রমুখ।
মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আমরা চাই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। যাতে সবার অংশগ্রহণে একটি ভালো ভোট হয়। কিন্ত কেউ সংঘাত সৃষ্টি তৈরি করতে চাইলে আমরাও করতে পারি। সংঘাত করে তারা মাঠে টিকবে না। তাই সংঘাতে জড়ানোর চেয়ে আমরা সবাই মিলে ভোটারদেরকে কেন্দ্র আনতে চেষ্টা করি।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রসঙ্গে সদ্য সাবেক এই মেয়র বলেন, ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে অভিযোগ করা ঠিক না। সবাই মিলে আমরা একটি ভালো ভোট করতে চাই। কিন্তু গত তিন দিনে সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ করেছেন। সকল প্রার্থী শুধু আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, তাহলে বোঝেন ব্যাপারটা। আমাদের কাছে তো নির্বাচনী আইন ও বিধিপত্র আছে, সেগুলো মেনেই আমরা নির্বাচন পরিচালনা করছি।
তিনি আরও বলেন, সকালে গণসংযোগ করতে আটজনকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়েছি। কোথাও গণসংযোগ করতে গেলে স্থানীয় লোকজন ভিড় করছেন। তাহলে কি আমি ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেব? মানুষজন মোটরসাইকেল নিযে ঘুরে ঘুরে আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। এজন্য তো আমি দায়ী না, ভোটারদেরকে তো আমি বাধা দিতে পারি না।
জাতীয় পার্টির এই প্রার্থী বলেন, গণজোয়ার দেখে অন্য প্রার্থীরা হতাশ। তারা লাঙ্গলের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে বিভিন্ন রকম অভিযোগ করছেন। এসব করে তারা কেউ লাভবান হবেন না। গত নির্বাচনের চেয়ে এবার ভোটের ব্যবধান আরও বাড়বে।
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও ভোটের ব্যবধান নিয়ে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এখন ব্যবধান কত হবে সেটা আমি বলতে পারছি না। তবে ইনশাআল্লাহ সৃষ্টিকর্তার যদি রহমত থাকে এবং কোনো ধরনের ঝামেলা না হয়, তাহলে গণমানুষ এখন যে রায় দিয়েছে তার প্রতিফলন ঘটবে ২৭ ডিসেম্বর। আশা করছি ফলাফল অত্যন্ত পজিটিভ হবে। আমরা সকলে মিলে এক্সক্লুসিভ একটি নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক রাখতে চাই। আচরণবিধি মেনে নির্বাচন করতে চাই। বিষয়গুলো যদি প্রতিটি প্রার্থী ঠিক রাখি, তাহলে সুন্দর একটি নির্বাচন করা সম্ভব হবে।
অন্যদিকে দুপুরে নগরীর প্রেস ক্লাব এলাকায় গণসংযোগে এসে রংপুর সিটির উন্নয়নের স্বার্থে জনগণ নৌকার পক্ষে রায় দিয়ে তাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন দাবি করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বলেন, আধুনিক ও মডেল সিটি করপোরেশন গড়তে রংপুরে একজন নৌকার জনপ্রতিনিধি প্রয়োজন। রংপুরে বিগত সময়ে যত উন্নয়ন হয়েছে, তার সবই হয়েছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। তাই জনগণ এবার ঋণ শোধ করতে চায়। সঙ্গে পরিকল্পিত উন্নয়নের স্বার্থে রংপুরবাসী এবার নৌকা মার্কায় ভোট দেবে।
বিকেলে নগরীর আরকে রোড টেক্সটাইল মিলস মোড়, পার্বতীপুর বাজার, বউ বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত এই মেয়র প্রার্থী। এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির (রংপুর বিভাগ) সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, সহসভাপতি আবুল কাশেম, দিলশাদ ইসলাম মুকুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিধুরাম অধিকারী, দপ্তর সম্পাদক সফিকুল ইসলাম রাহেল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান রনি প্রমুখ।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডালিয়া বলেন, আধুনিক, ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার হাত ধরেই রংপুর বিভাগ, সিটি করপোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে গ্যাস আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকারি, বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। রংপুর দিন দিন উন্নত হচ্ছে। এবার রংপুরের মানুষ নৌকায় ভোট না দিয়ে আর ভুল করবে না। শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীক দেখেই নগরবাসী ভোট দেবে। রংপুরজুড়ে নৌকার গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। আমার তো মনে হচ্ছে সোয়া চার লাখের বেশি যে ভোটার রয়েছে, সবাই নৌকা প্রতীকেই ভোট দিয়ে এবার নতুন মেয়র উপহার দেবে।