রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

শ্রমিক ধর্মঘটে নৌপথে অচলাবস্থা, ভোগান্তি

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২২, ৪.১৯ এএম
  • ২৪৬ বার পড়া হয়েছে

শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে সারা দেশে নৌপথে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বন্ধ রয়েছে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান। ঢাকা নদীবন্দরসহ (সদরঘাট) দেশের বিভিন্ন বন্দরে লঞ্চ না পেয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। অনেকে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। কেউ কেউ বিকল্প পথে গন্তব্যে যান। একইভাবে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের পণ্য পরিবহণ বিঘ্নিত হয়েছে। এ দুই বন্দরের কার্যক্রমে কার্যত স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এদিকে ধর্মঘট নিয়ে অনড় অবস্থানে মালিক ও শ্রমিক নেতারা। শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবিতে ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ধর্মঘট তুলে নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শ্রম মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। আজ নৌযান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছে নৌপরিবহণ অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক যুগান্তরকে বলেন, মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দুই পক্ষই ছাড় দিলে সহজেই এর সমাধান সম্ভব। আমরা আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে।

তবে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে। শ্রমিকরা তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজে ফিরবেন না।

সূত্র জানায়, মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান যোগাযোগ রাখছেন। বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারাও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই পক্ষই আগের চেয়ে নমনীয় অবস্থায় আছেন। এর মধ্যে মজুরিসংক্রান্ত একটি কমিটি কাল বৈঠকে বসছে। ওই বৈঠকেই যাতে সমস্যার সমাধান হয়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

জবি : সকাল থেকে সদরঘাট নদীবন্দর ঘুরে দেখা যায়, কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। অন্যদিনের তুলনায় ঘাট এলাকা অনেকটা ফাঁকা ছিল। এতে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করা যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নৌযান ধর্মঘটের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। ফলে অনেকে ঘাটে এসে ফিরে গেছেন। সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে চাঁদপুরগামী লঞ্চে উঠতে সকালে সদরঘাটে আসেন কুলসুম বেগম। তিনি বলেন, সকাল ৮টার দিকে টার্মিনালে এসে দেখি লঞ্চ বন্ধ। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো লঞ্চ পেলাম না। পরে লঞ্চের লোকজন জানান, লঞ্চ ছাড়বে না। এখন বাসেই যেতে হবে।

নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের দশ দফা দাবিতে ধর্মঘট চলছে। তবে তিনটা দাবির প্রতি আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। এগুলো হলো-শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাশ প্রদানসহ ভারতীয় সীমানায় সব হয়রানি বন্ধ এবং দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ২ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহণ) সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামাল বাদল বলেন, আমাদের করার কিছু নেই। শ্রম মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। শ্রমিক-মালিক সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।

বরিশাল : সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমনকি লঞ্চগুলো ঘাট থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। যার ফলে রোববার ভোর থেকে বরিশাল নদীবন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদীবন্দর ও লঞ্চঘাট থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। এতে বিপাকে পড়েন নৌযাত্রীরা। অনেক যাত্রীই ঘাটে এসে লঞ্চ চলাচল বন্ধ দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন। ভোলা সদরের বাপ্তা ইউনিয়নের বাসিন্দা আশিকুর রহমান জানান, শনিবার সকালে মায়ের চিকিৎসার জন্য বরিশালে আসেন। সারা দিন চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রাতে লঞ্চঘাটে গিয়েছিলেন। ভোরে লঞ্চ ছাড়বে-এমনটাই আশা ছিল। কিন্তু রাত ১২টা থেকে লঞ্চ ধর্মঘট শুরু হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন তারা। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত অর্থব্যয় করে হোটেলে থাকতে হয়েছে তাদের। সকালে কীর্তনখোলা নদী পার হয়ে চর কাউয়া থেকে বাসে করে লাহারহাট যেতে যান। সেখান থেকে ফেরিতে করে ভেদুরিয়া ও পরে বাসে বাড়িতে যান।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবদুর রাজ্জাক বলেন, নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে বরিশাল ঘাট থেকে সকাল থেকে কোনো লঞ্চ চলাচল করেনি। যাত্রীরা এসে ফিরে গেছেন।

মোংলা (বাগেরহাট) : মোংলা সমুদ্রবন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্যখালাস-বোঝাই ও পরিবহণ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় বন্দরে অচালাবস্থা বিরাজ করছে। একই সঙ্গে ভারতগামী ট্রানজিট রুটের পণ্য পরিবহণের লাইটার চলাচলও বন্ধ রয়েছে। এদিকে দাবি আদায়ে বিকাল ৪টায় মোংলা পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শ্রমিকরা। এ সময় পৌর মার্কেটের সামনে সমাবেশে শ্রমিক নেতা আনোয়ার হোসেন মাস্টার, মামুন হাওলাদার বাদশা, মাঈনুল হোসেন মিন্টু বক্তব্য দেন। নেতারা বলেন, তাদের প্রস্তাবিত দাবি বাস্তবায়নে মালিকপক্ষ কালক্ষেপণসহ উদাসীন থাকায় এ কর্মবিরতি পালনে বাধ্য হয়েছেন তারা। তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত লাগাতর এ কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।

আমতলী (বরগুনা) : রোববার আমতলী লঞ্চঘাট থেকে কোনো লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। এতে দুর্ভোগে পড়েন আমতলী, তালতলী ও কলাপাড়া উপজেলা এবং পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার যাত্রীরা। নিরুপায় হয়ে অনেক যাত্রী সড়কপথে গন্তব্যে যান। বিকাল ৪টায় আমতলী লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালে এমভি তরঙ্গ-৭ লঞ্চ নোঙর করে আছে। যাত্রীরা ঘাটে এসে লঞ্চ না ছাড়ার খবর পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তালতলী থেকে আসা যাত্রী লায়লা বেগম বলেন, ঢাকা যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু লঞ্চ ছাড়বে না। তাই বিকল্প পথে যাওয়ার চিন্তা করছি।

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : নৌযান শ্রমিকরা বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে আসা রাসায়নিক সার, কয়লা ও জ্বালানি তেলবাহী সব কার্গো জাহাজ বন্দর জেটি থেকে সরিয়ে বড়াল নদীতে নোঙর করে একত্রে বেঁধে রেখেছে। নৌবন্দরের লেবার (শ্রমিক) এজেন্ট আবুল হোসেন বলেন, ধর্মঘটের কারণে কোনো কার্গো জাহাজ থেকে মালামাল লোড-আনলোড হয়নি। কোনো জাহাজ এখান থেকে ছেড়ে যায়নি, আবার আসেওনি। এ বন্দরে কর্মরত প্রায় ৪ শতাধিক শ্রমিক সারা দিন কর্মহীন হয়ে বসে বসে সময় পার করেছেন। বাঘাবাড়ি অয়েল ডিপোর যমুনা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপক আবুল ফজল মো. সাদেকিন বলেন, শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে কোনো জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল আনলোড করা সম্ভব হয়নি।

ভোলা : সকাল থেকে ভোলা-বরিশাল, ভোলা-ঢাকা, ভোলা-লক্ষ্মীপুর, দৌলতখান-আলেকজান্ডারসহ ৮ রুটে চলাচলকারী সব ধরনের লঞ্চ বন্ধ ছিল। এতে আটকা পড়েন কয়েক হাজার যাত্রী। এদিকে নৌ-শ্রমিকদের ধর্মঘটের সুযোগে ভোলা-বরিশাল রুটে স্পিডবোট মালিকরা চড়া ভাড়ায় যাত্রী পরিবহণ করে।

আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : আশুগঞ্জ বন্দরে অর্ধশতাধিক পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ আটকা পড়ে। নৌযান শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করায় কার্গোজাহাজ থেকে সব ধরনের পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে।

খুলনা : খুলনা থেকে দক্ষিণদিকের (দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, সাতক্ষীরা) সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বন্ধ রয়েছে পণ্যবাহী লঞ্চও। এদিকে সকালে খুলনা বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চঘাটে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শ্রমিকরা।

অভয়নগর (যশোর) : অভয়নগরের নওয়াপাড়া নৌবন্দরে দিনব্যাপী কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়ন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort