বিশেষ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের বিশ্বস্ত হজ এজেন্সি খ্যাত শীতলক্ষ্যা ট্রাভেলস লিমিটেড এর মালিকানা নিয়ে ব্যাপক প্রতারণা আর অনিয়মের অভিযোগ উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব দবির উদ্দিন আহমেদ প্রায় ১৫ মাস আগে মৃত্যুবরণ করলেও বর্তমানে তার ছবি ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে চলছে ব্যাপক জালজালিয়াতি। মৃত ব্যক্তিকে জীবিত উপস্থাপন করে দেখানো হচ্ছে মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।কিন্তু কেন এমনটি করা হচ্ছে তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। তবে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এমনটি করা হচ্ছে বলে জানা যায়। গতকাল গণমাধ্যমে প্রেরিত প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুল্লাহ বাতেন সায়মন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শীতলক্ষা ট্রাভেলস লিমিটেড এর মালিকানা নিয়ে প্রতারণা ও নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন। প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন-আমি মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বাতেন সায়মন শীতলক্ষা ট্রাভেলস লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটি পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়ে ১৯৯৮ সালে প্রথম যাত্রা শুরু করে। তখন এর একমাত্র কর্ণধার ছিলাম আমি নিজে ।
আমি আমার মেধা আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ২০০২ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত সফলতার সাথে পরিচালনা করি। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান হজ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করে তাদেরকে আলাদাভাবে হজ লাইসেন্স দেয়ার জন্য সরকার ২০০২ সালে প্রথম হজ লাইসেন্স দেয়ার ঘোষণা করলে আমি ও আমার বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা দবির উদ্দিন আহমেদ সেই সাথে আমার ফুফাতো ভাই কাজী আনোয়ার হোসেন মিলে একটি হজ লাইসেন্সের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শীতলক্ষা ট্রাভেলস নামে হজ লাইসেন্স গ্রহণ করি। এরপর নিজেদের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে একটি পার্টনারশিপ ডিড তৈরি করে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন যাবত পরিচালনা করি। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলমান অবস্থায় জয়েন্ট স্টক থেকে একটি মেমোরেন্ডাম করে তিনজনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা শেয়ার ডিক্লেয়ার করি। জন প্রতি ৫০০ করে শেয়ারের মালিকানা গ্রহণ করে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত সফলতা আর বিশ্বস্ততার সাথে পরিচালনা করে আসছি। তাই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম গতিশীল আর বেগবান রাখতে আমাদের পরিবারের মধ্য থেকে আমার কয়েকজন ভাতিজা ও আমার বড় ভাইয়ের শ্যালকসহ এমন কয়েকজনকে নিয়োগ দেই। যাদের নিয়ে আমাদের তৎকালীন কালির বাজার এ সি ধর রোডে অবস্থিত অফিসে হজের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করি।। তখন প্রতিষ্ঠানটি খুবই লাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে শীতলক্ষ্যা ট্রাভেলস এর মাধ্যমে হাজীদের নিয়ে পবিত্র মক্কাতুল মুকাররামা আর মদিনাতুল মনোয়ারায় অবস্থান করাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানটির অপর দুজন মালিক আমার অনুপস্থিতিতে আমার অগোচরে মেমোরেন্ডাম চেঞ্জ করে আমার বড় ভাইকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে।আমি বাংলাদেশে এসে সব জানতে পারি, যেহেতু নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমার আপন বড় ভাই তাই বিষয়টিকে জটিল আকারে না দেখে স্বাভাবিকভাবে দেখার চেষ্টা করি।ব্যবসায়িক স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটিকে কালির বাজার থেকে বঙ্গবন্ধু রোডে স্থানান্তর করা হয়। এরপর আমার বড় ভাই দবির উদ্দিন আহমেদ ও আমার ফুফাতো ভাই কাজী আনোয়ার হোসেন তাদের নিজেদের শেয়ার থেকে ৩০০ করে মোট ৬০০ শেয়ারের মালিকানা অফিসে কর্মরত আত্মীয়দের মাঝে বিক্রি করে দেয়।কিন্তু জয়েন্ট স্টকের মেমোরেন্ডাম অনুযায়ী আমার মালিকানাধীন ৫০০ শেয়ার আমার অধীনে থেকে যায়, যা আজও কারো কাছে বিক্রি করা হয়নি। অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আজ থেকে প্রায় ১৫ মাস আগে শীতলক্ষ্যা ট্রাভেলস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমার বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব দবিরউদ্দিন আহমেদ এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহুর ডাকে সাড়া দিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান। তার আকস্মিক মৃত্যুতে আমি ও আমার পরিবার শোকাহত হই,সেই সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই মানসিকভাবে ভেঙে পরি। সকল ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে একটু অমনোযোগী হই তখন। আর আমার ফুফাতো ভাই কাজী আনোয়ার হোসেন আমার অনুপস্থিতির কারণে সেও একটু প্রতিষ্ঠানটি থেকে দূরে সরে থাকে। আমাদের এ দুজনের অনুপস্থিতির প্রেক্ষিতে সময় আর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য শেয়ার হোল্ডার যারা আমার আত্মীয় তারা পারিবারিক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে নিজেদের মধ্যে আতাত করে তাদের ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে,যা অদ্যাবধি পর্যন্ত আমি এর কোন কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত নই। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। তাদের নিজেদের ব্যবসায়িক আধিপত্য বিস্তার করে আমাকে আমার সকল ব্যবসায়িক লভ্যাংশ আর সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে।যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ শেয়ারের মালিক আমি সেহেতু প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে ভবিষ্যতে কোন হাজী বা প্রতিষ্ঠানটি কোন ব্যবসায়িক ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর অধিকাংশ লাইবিলিটি আমার উপর বর্তাবে।আর এটি নিয়ে বর্তমানে আমি খুবই চিন্তিত। শুধু তাই নয়, চক্রটি আমার মৃত ভাইকে জীবিত দেখিয়ে তার স্বাক্ষর ও ছবি এবং আমার স্বাক্ষরও জালিয়াতি করে মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ইস্যু করছে বলে জানতে পেরেছি । গণমাধ্যমে পাঠানো শীতলক্ষ্যা ট্রাভেলস লিমিটেড এর নামে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির সিংহভাগ মালিক হাবিবুল্লাহ বাতেন সায়মন এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে আইনি কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আলোরতরীকে বলেন- যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারগণ আমার আত্মীয়-স্বজন তাই এতদিন কিছুই বলিনি, নীরবে শুধু সহ্য করে গেছি। বিষয়টি অতিসত্বর সুষ্ঠুভাবে কোন সুরাহা না হলে দেশের প্রচলিত আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবো। সেই সাথে বিষয়টি অবগত করতে মাননীয় জেলা প্রশাসক বরাবর সহ হজ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ অভিযোগটি জানানোর ব্যাপারে সকল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।