নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষে নিহত শাওন প্রধানের পরিবার বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা করার পর বিস্ময় প্রকাশ করেছে দলের নেতৃবৃন্দ। তারা অভিযোগ করছে পুলিশের দিকে। বলছে, পুলিশ চাপ দিয়ে এই মামলা করিয়েছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি বলছে, চাপ দিয়ে মামলা করার যুগ আর নেই।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টম্বর) বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন শাওন প্রধান। তাকে যুবদল কর্মী দাবি করে দুই দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচিও দিয়েছে বিএনপি।
তবে গত রাতে এ ঘটনায় করা একটি মামলা বিএনপিকে হতবুদ্ধি করে দিয়েছে। শাওনের ভাই মিলন হোসেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় যে হত্যা মামলা করেছেন, তাতে আসামি করা হয়েছে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে।
মামলায় বলা হয়, ‘বেলা পৌনে ১১টার দিকে ২ নম্বর রেলগেট এলাকা দিয়ে শাওন প্রধান যাওয়ার সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে থাকেন। এ সময় অবৈধ অস্ত্রের গুলি ও ইটের আঘাতে শাওন মাথা ও বুকে গুরুতর আঘাত পেয়ে রাস্তায় পড়ে যান। ‘তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তার লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাওনকে মৃত ঘোষণা করেন।’
এ মামলার তথ্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান। বলেন, ‘শাওনের পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে পুলিশ।’ তিনি বলেন, ‘এই সরকার ও এই সরকারের প্রশাসন মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তারাই আমাদের ওপর আক্রমণ করল, আবার তারাই আমাদের নামে মামলা করছে। আমাদের শত শত নেতাকর্মীকে আহত করেছে, একজনকে নিহত করেছে আবার হত্যা মামলা করেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’সাখাওয়াত বলেন, ‘আমি মনে করি, যেহেতু পুলিশ গুলি করেছে, তাই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া দরকার।’
শাওনের ভাইয়ের মামলার বিষয়ে মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম সজল বলেন, ‘এটি প্রশাসনের নোংরামি। শাওন আমাদের কর্মী। আমাদের কর্মীকে হত্যা করল, আবার তার ভাইকে দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা করাল। এটা গণতান্ত্রিক সভ্য দেশের কর্মকাণ্ড না। এটা তো অসভ্য দেশের কাজ।’
শাওনের ভাইয়ের মামলার বিষয়ে বিএনপির অভিযোগ নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তাফা রাসেলের বলেন, ‘তারা এসে মামলা করেছে, আমরা মামলা নিয়েছি। এখন কি সেই যুগ আছে যে চাপ প্রয়োগ করে মামলা করা যায়? আমরা কোনো চাপ প্রয়োগ করিনি।’বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করেছে অভিযোগ করে এসপি জানান, তারাও এই ঘটনায় মামলা করতে যাচ্ছেন।
অবৈধ অস্ত্রের আঘাতে শাওনের মৃত্যুর বিষয়ে মামলায় যে দাবি করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে কি না- প্রশ্ন রাখা হয় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (তদন্ত) আমির খসরুর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা বলতে পারব শাওন কোন অস্ত্রের আঘাতে মারা গেছে।
‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। তাছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আরও মামলা হবে। আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে এবং আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলব। এরপর তদন্তের মাধ্যমে বলতে পারব শাওন কীভাবে মারা গেছে।’
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এই মামলার বাদী মিলন হোসেনের মোবাইলে কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেনি।