মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের সাজসজ্জায় বেলুনের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় কনডম। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচিত হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় জড়িত প্রতিষ্ঠানের জরুরি বিভাগের ব্রাদার ইনচার্জ রেজাউলকে দায়িত্ব থেকে ইতোমধ্যে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জনরোষ-নিন্দা-ক্ষোভ আর অভিযোগের ভিত্তিতে গর্হিত এ কাণ্ডে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, গত শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আগের দিন শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে স্ব স্ব বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কক্ষে সৌন্দর্য বৃদ্ধির আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দিনটিতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ আয়োজনের বরাদ্দ দেন। কথা ছিল হাসপাতালের প্রধান ফটক ও জরুরি বিভাগের পুরো কক্ষে ফুল ও বেলুন দিয়ে সাজানো হবে। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি বেলুনের সঙ্গে কনডম দিয়ে কক্ষগুলো সাজায় সংশ্লিষ্টরা।
সৌন্দর্য বৃদ্ধির নামে হাসপাতালের এমন কাণ্ডের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এসব দেখে সাধারণ মানুষ, ছাত্রসমাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তানসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন স্থানীয়রা।
তাদের দাবি, যে বিজয় অর্জনের জন্য দেশের ৩০ লাখ নাগরিক শহীদ হয়েছেন; মা-বোনেরা নিজেদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন; নিজের জীবন উৎসর্গ বহু বীর মুক্তিযোদ্ধা- তাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাতে করা আয়োজনে কনডমের ব্যবহার গর্হিত কাজ। এটা অপমানের শামিল।
শরীয়তপুর ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সাইফ রুদাদ বিষয়টি নিয়ে বলেন, যারা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করে, তারাই মহান বিজয় দিবসকে অসম্মানিত করতে এ অপকর্ম ঘটিয়েছে। অবিলম্বে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও ব্রাদার রেজাউলকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি তাদের রাজনৈতিক দর্শন জানতে রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাদের কাছে আহ্বান জানাই।
শরীয়তপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সহ-সভাপতি সাংবাদিক শহিদুজ্জামান খান বলেন, মহান বিজয় দিবসে সাজসজ্জায় যারা এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন , তাদের বিচারের দাবি জানাই।
এ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও অভিযোগের মধ্যে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ব্রাদার ইনচার্জ রেজাউলকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এমন গর্হিত কাজে অভিযুক্ত (নার্স) ব্রাদার ইনচার্জ রেজাউলের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, কোনো কর্তাব্যক্তি বা বাইরের কেউ জড়িত কিনা, জানতে ফোন করা হয়। কিন্তু রেজাউলের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। হাসপাতালে গিয়েও তাকে খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। তাকে চেনে, এমন কেউ তার ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, ঘটনাটি আমি জানার পরপরই সাজ-সজ্জা ছিঁড়ে ফেলার নির্দেশ দিই। বিষয়টি দুঃখজনক। রেজাউলের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। সে বিএনপি-জামাতের কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কিনা, সেটিও তদন্ত করা হবে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে হাসপাতালের সাজ-সজ্জায় কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ দেয়। কত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, আর কেনই বা বরাদ্দ ব্যবহার না করে হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে জনসাধারণে বিতরণের জন্য রাখা কনডম দিয়ে সাজানো হলো- বিষয়টি নিয়ে কোনো কর্তা-ব্যক্তি কথা বলতে চাননি। তারা কেবলই অভিযোগ ও তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি সম্পর্কে কথা বলেন।
হাসপাতালের তত্ববধায়ক ডা. মো. সোবাহানকেও বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি সে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ওই ঘটনায় ব্রাদার রেজাউলকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে আর কেউ জড়িত কিনা, সে ব্যাপারে তদন্ত হবে।