শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মুলপাড়া চেরাগ আলী মাদবর কান্দি গ্রামের আবুল বাশার ও লাভলি বাশার দম্পতির তিন সন্তানের বড় ছেলে কামরুল হাসান বাপ্পী (২২)। অভাব-অনটনের সংসারে সচ্ছলতা আনতে তাঁকে ইতালিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার।
অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার জন্য গত বছর ৮ নভেম্বর দালালের সঙ্গে বাড়ি ছাড়েন বাপ্পী। এর তিন মাস পর ইতালি থেকে লাশ হয়ে ফিরতে হলো তাঁর। আজ রোববার দুপুরে ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাপ্পীর লাশ পৌঁছায়।
সন্তানের লাশ আসছে শুনে আজ বিকেলে মা লাভলি বাড়ির আঙিনায় বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কিছু সময় পরপর আর্তনাদ করে সন্তানের নাম ধরে ডাকছিলেন তিনি। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন স্বজনেরা।
বাপ্পীর পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ২৩ জানুয়ারি রাতে বাংলাদেশ, মিসরসহ বিভিন্ন দেশের ২৮০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকায় করে লিবিয়ার ত্রিপোলি উপকূল থেকে ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হন। যাত্রা শুরুর এক দিন পর ভূমধ্যসাগরে প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাসের পর টানা বৃষ্টি শুরু হয়। নৌকাটি ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছালে ইতালিয়ান কোস্টগার্ডের সদস্যরা তাঁদের উদ্ধার করেন। ওই সময় নৌকা থেকে সাত বাংলাদেশির লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁদেরই একজন কামরুল হাসান বাপ্পী। তাঁর মৃত্যুর খবর পরিবার জানতে পারে ৩১ জানুয়ারি। ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আজ দুপুরে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাপ্পীর লাশ পৌঁছায়।
বাপ্পীর বাবা আবুল বাশার কাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলে পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছিল। অভাব-অনটনের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে তাকে সমুদ্রপথে ইতালি পাঠাই। কিন্তু ছেলে আমার লাশ হয়ে ফিরল। ছেলের নিথর দেহ আমাকে বইতে হবে, তা কখনো ভাবিনি।’
আবুল বাশার আরও বলেন, ‘আমাদের গ্রামের নাসির ব্যাপারী লিবিয়া থাকতেন। তিনি এখন গ্রামের ছেলেদের লিবিয়া হয়ে সমুদ্রপথে ইতালি পাঠানোর কাজ করেন। ইতালিতে পাঠানোর জন্য তাঁকে ৮ লাখ টাকা দিই। তিনি প্রথম এক দালালের কাছে দুবাই পাঠান। দুবাই থেকে আরেক দালালের মাধ্যমে লিবিয়ার বেনগাজীতে পাঠানো হয় বাপ্পীকে। সেখান থেকে আরেক দালাল ত্রিপোলির মরুভূমিতে নিয়ে দুই মাস আটকে রাখেন। এরপর লিবিয়ার ওই দালাল ২৩ জানুয়ারি আরও অনেকের সঙ্গে আমার ছেলেকে সমুদ্রপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালিতে পাঠান। ছেলে মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পর তাঁর মৃত্যু খবর পেয়েছি। বাপ্পীর মারা যাওয়ার খবর পেয়ে দালাল নাসির ব্যাপারী গ্রাম থেকে পালিয়েছেন।’
বাপ্পির মা লাভলি বাশার বলেন, ‘এমন সর্বনাশ হবে আগে জানলে আমার মানিকরে ইতালি পাঠাইতাম না। এখন আমি কী নিয়া বাঁচুম!’
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনি শংকর কর প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে নড়িয়ার ওই তরুণ অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাচ্ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। দালাল চক্রের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’